ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

স্বাধীনতাবিরোধীদের হরতালে খালেদার সমর্থনের সমালোচনায় হাসিনা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১০
স্বাধীনতাবিরোধীদের হরতালে খালেদার সমর্থনের সমালোচনায় হাসিনা

ঢাকা: হরতালের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা স্বাধীনতা চায়নি, বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকারীদের দোসর ছিলো তারা হরতাল ডেকেছে। তাদের হরতালে সমর্থন দিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী।



শেখ হাসিনা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) দাবি করেন তার স্বামী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তাহলে তিনি কী করে স্বাধীনতাবিরোধীদের ডাকা হরতালে সমর্থন দিতে পারেন?’

এবারের বিজয় দিবস মানুষ প্রাণ খুলে উদযাপন করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এবারই প্রথম মানুষ হায়নার কবল থেকে মুক্ত পরিবেশে বিজয়ের উল্লাস করেছে। ’

শুক্রবার বিকেলে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালি জাতি বহু বছর পর সত্যিকারের একটি বিজয়ের আনন্দ পেয়েছে। বিজয়ের উল্লাস এবং স্বজন হারানোর ব্যথা ও অশ্রু নিয়ে বিজয় দিবস পালন করেছে। প্রাণ খুলে মানুষকে বিজয় উল্লাস করতে দেখেছি। দীর্ঘ দিন পর আমরা যেন হায়নার কবল থেকে মুক্তি পেয়েছি।

তবে শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে যুদ্ধাপরাধের জন্য অভিযুক্ত বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেননি। অবশ্য আলোচনাসভায় দলের নেতারা সাকার গ্রেপ্তারের প্রসঙ্গটি নিয়ে কথা বলেছেন এবং এজন্য প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

তারা বলেন, সাকা চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করায় সারা দেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত উৎসবে মেতে উঠেছে।
 
আলোচনাসভায় শেখ হাসিনা দলের নেতাকর্মীদের ত্যাগের মনোভাব নিয়ে জনগণের কল্যাণে কাজ করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘যারা ব্যক্তিস্বার্থের কথা ভাবে, যাদের রাজনীতি ও নেতৃত্ব মানুষকে শোষণ করে ভোগবিলাসে ব্যস্ত থাকে মানুষ তাদের গ্রহণ করে না। যারা জনগণের স্বার্থে নিজেদের নিয়োজিত করে মানুষ বরং তাদের নেতৃত্বকেই গ্রহণ করে। ’

তিনি দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘নিজেদের স্বার্থের কথা চিন্তা না করে জনগণের স্বার্থের কথা চিন্তা করতে হবে। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাজনীতির অর্থ জনগণের কল্যাণে কাজ করা একথা সবাইকে মনে রাখতে হবে। বঙ্গবন্ধুর মতো ত্যাগের মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। মানুষ আমাদের ভোট দিয়ে যে দায়িত্ব দিয়েছে, আমরা যে ওয়াদা করেছি সেই দায়িত্ব এবং ওয়াদা রক্ষা করতে হবে। আমরা রক্ষা করতে পারবো। ’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণের স্বার্থে কাজ করে যাবো দেশকে স্বনির্ভর করবো বিজয় দিবসে এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা। ’

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবে দেশকে মুক্ত করা। সে লক্ষেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ’

 যে জাতি রক্ত দিয়ে জীবন দিয়ে স্বাধীনতা আনতে পারে তাদের কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা স্বজন হারিয়েছেন আমরা তাদের স্বজন ফিরিয়ে দিতে পারবো না। তবে দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করে যেতে পারবো। ’

২৬ ডিসেম্বরের হরতালের সমালোচনা করে তিনি বলেন, যারা স্বাধীনতা চায়নি, বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকারীদের দোসর ছিলো তারাই এ হরতাল ডেকেছে। তাহলে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী বলে দাবিকারী খালেদা জিয়া কী করে এদের হরতালের সমর্থন দিতে পারেন?

শিক্ষানীতি বিরুদ্ধে এই হরতাল ডাকা হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, নতুন প্রজন্ম যাতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে তেমন শিক্ষানীতিই করা হয়েছে। এতে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

মাদ্রাসা বোর্ড, আলেম ওলামাদের মতামত নিয়ে শিক্ষানীতি করা হয়েছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, ‘এরপরেও আপত্তি কেন?। কেন এই হরতাল, কার স্বার্থে হরতাল?’

বায়তুল মোকাররম মসজিদের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো কোনো রাজনৈতিক দল বায়তুল মোকাররমকে তাদের অফিস বানিয়ে ফেলেছিলো। একে অস্ত্র, বোমা, সন্ত্রাস, রাজনৈতিক আখড়ায় পরিণত করেছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যখন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করছিলাম তখন বায়তুল মোকাররম থেকেই হামলা চালানো হয়েছিলো।   সেখান থেকে বলা হয়েছিলো, বৃষ্টির মতো গুলি করো। ’

বিএনপি-জামায়াত ধর্মের দোহাই দিয়ে রাজনীতি করে বলে অথচ ক্ষমতায় গিয়ে বায়তুল মোকারম মসজিদের কোনো উন্নয়ন ওরা করেনি বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘১৯৭১ এর পরাজিত শক্তি ও তাদের দোসররা দেশের মানুষের রক্ত চুষে খেয়েছে। তারা অনেক সম্পদের মালিক হয়েছে। তারা চায় না এদেশের মানুষ দারিদ্রমুক্ত হোক। ’

নোবেলবিজয়ী ড. ইউনূসের প্রতি পরোক্ষ ইঙ্গিত করে তিনি বলেন,‘...আবার কেউ কেউ আছে দরিদ্র মানুষ দেখিয়ে বিদেশ থেকে টাকা আনবে আর চুষে খাবে। এদের দোসররাও কম না। এদের শোষনের হাত থেকেও দেশবাসীকে রক্ষা করতে হবে। ’

বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) এবি তাজুল ইসলাম প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।