ঢাকা, শনিবার, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ মে ২০২৪, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নারায়ণগঞ্জে পিস্তলসহ জাপা নেতার পুত্র গ্রেপ্তার: ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা ব্যর্থ

তানভীর হোসেন, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১০

নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জে বিদেশি পিস্তলসহ রনি (২৫) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সে নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির (এরশাদ) সহ-সভাপতি ও জাপার সহযোগী সংগঠন শ্রমিক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আলীর ছেলে।



রনিকে আটকের পর থেকে রাত ১২টার আগ পর্যন্ত ঘটনা ধামাচাপা দিতে ও তাকে ছাড়িয়ে নিতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় প্রভাবশালী বিভিন্ন মহল ব্যাপক তৎপরতা চালায়। তবে সংবাদকর্মীরা বিষয়টি জেনে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত তারা সফল হননি।

পুলিশসূত্র জানায়, সদর উপজেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানার কদমতলী উত্তরপাড়া এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় তাকে আটক করা হয়। এরপর রাত সোয়া ১২টার দিকে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তার আগে রাত পৌনে ১২টায় তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়।

এদিকে গ্রেপ্তার হওয়া রনি ও তার পরিবার দাবি করেছে, পরিকল্পিতভাবে অস্ত্র দিয়ে তাকে ফাঁসানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র বাংলানিউজকে জানায়,  রনিকে ছাড়িয়ে নিতে রাত ৮টা হতে ১১টা পর্যন্তসিদ্ধিরগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম বদরুল আলমের কে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন পুলিশের এএসপি (ক অঞ্চল) জিয়াউল হাসান, সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসক আবদুল মতিন প্রধান, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী ইয়াছিন মিয়া, সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান, আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের রেড ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি নূর হোসেন।

এসময় রুদ্ধদ্বার করে বাইরে স্থানীয় সাংবাদিকরা অবস্থান নেন।


ওসি এস এম বদরুল আলম জানান, টেলিফোনে খবর পেয়ে রাত সাড়ে ৭টার দিকে পুলিশের একটি দল কদমতলী উত্তরপাড়া এলাকার হুমায়ূনের বাড়ি থেকে একটি বিদেশি পিস্তলসহ রনিকে আটক করা হয়।

বাড়ির মালিক হুমায়ূন জানান, তিনি লিভার ব্রাদার্সের সিদ্ধিরগঞ্জ থানা-ডিলার। কদমতলী উত্তরপাড়া এলাকায় তার মালিকানাধীন একটি মার্কেট রয়েছে।

তিনি আরও জানান, এলাকার একজন নারীকে উত্যক্ত করার ঘটনার জের ধরে তার ছেলে সজীবের সঙ্গে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাপা নেতা মোহাম্মদ আলীর পুত্র দীপুর বাকবিতণ্ডা ও এক পর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জের ধরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে দীপুর বড় ভাই রনি ৩০-৪০ জন সহযোগী সন্ত্রাসী নিয়ে তার বাড়িতে হামলা চালায়।

হুমায়ূনের দাবি, হামলাকারীরা তার মার্কেটের ৪-৫টি দোকান ভাংচুর করে ও বেশ কিছু মালামাল লুট করে। এক পর্যায়ে নিরাপত্তা প্রহরী গেট আটকে দিয়ে পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে রনির কোমড়ে রাখা বিদেশি পিস্তলসহ তাকে গ্রেপ্তার করে।

এদিকে হুমায়ূনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রনির পিতা মোহাম্মদ আলী। তিনি দাবি করেন, হুমায়ূন স্থানীয় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মোহাম্মদ আলীর পুত্র দীপুর সঙ্গে হুমায়ূনের পুত্র সজীবের মারামারির ঘটনা ঘটে। এ খবর পেয়ে পরে রাত ৭টার দিকে রনি তার কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে প্রকৃত ঘটনা জানার জন্য হুমায়ূনের বাড়িতে যায়।

মোহাম্মদ আলীর দাবি, তার পুত্র রনি হুমায়ূনের বাড়িতে গেলে পরিকল্পিতভাবে তাকে ফাঁসানোর জন্য পিস্তল দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।

এদিকে ওসি বদরুল রাত পৌনে ১২টায় জানান, বাড়িতে অস্ত্র নিয়ে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগে হুমায়ূন বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। আসামি রনিকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় রুদ্ধদ্বার বৈঠক করা প্রসঙ্গে থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইয়াছিন মিয়া বাংলানিউজকে জানান, জাতীয় পার্টি নেতা মোহাম্মদ আলী মজিবুর রহমান এবং তাকেসহ অন্যান্যদের থানায় ডেকে নিয়ে যান। প্রকৃত বিষয়টি জানতে তারা তিন ঘন্টা থানায় অবস্থান করেন।
তবে ইয়াছিন দাবি করেন, মোহাম্মদ আলীর পুত্র রনিকে তার কোমরে পিস্তল গুঁজে দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘তবে রনি পিস্তলটি ফেলে না দিয়ে কেন দীর্ঘণ কোমরে রেখেছিল তা আমাকে বিস্মিতকরেছে। ’

বাংলাদশে সময়: ১২০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।