ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘মা’ ডাকে আবার সাড়া দেবে তো আসমা বেগম?

আজিজুল হাকিম ও রিয়াজ রায়হান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১০
‘মা’ ডাকে আবার সাড়া দেবে তো আসমা বেগম?

ঢাকা: ছোট্ট ফুটফুটে একটি মেয়ে। নাম মিথিলা।

বয়স মাত্র তিন বছর। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মায়ের দিকে শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে আর চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে জল। কারণ যৌতুকের বলি হয়ে তার মমতাময়ী মা এখন মৃত্যুর প্রহর গুনছে।

পাঁচ বছর আগে বরিশালের বাকেরগঞ্জ থানার শাহেবগঞ্জের মো. আনিসের মেয়ে আসমার (২৬) বিয়ে হয় একই থানার পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড মাদ্রাসা রোডের রফিকুল ইসলামের সঙ্গে।

বিয়ের পর আসমার সুখপাখি যেন সুদূরে পালিয়ে যায়। স্বামীর সংসারে যেতে না যেতেই শুরু হয় যৌতুকের জন্য নির্যাতন। স্বামী, শাশুড়ি, ননদ মিলে নির্যাতনের চরম সীমায় পৌঁছায় তাকে।

আসমার পরিবারের অভিযোগ, গত ১১ ডিসেম্বর স্বামী আর শাশুড়ি মিলে এক লাখ টাকা যৌতুকের জন্য আসমাকে চাপ দেয়। এতে রাজি না হলে তার ওপর নেমে আসে অমানবিক নির্যাতনের খড়গ। এক পর্যায়ে আসমার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় স্বামী রফিকুল ইসলাম, শাশুড়ি মনসুরা বেগম আর ননদ তানিয়া।

আগুনে মারাত্মক দগ্ধ অবস্থায় আসমাকে প্রথমে বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে ১২ ডিসেম্বর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়।

বার্ন ইউনিটের প্রকল্প পরিচালক ডা. সামন্তলাল সেন বাংলানিউজকে জানান, রোগির অবস্থা আশংকাজনক। তার শরীরের প্রায় ৮৫ থেকে ৯০ ভাগ পুড়ে গেছে। সাধারণত ২৫ ভাগের ওপর পোড়া রোগীর বাঁচার সম্ভাবনা কম থাকে বলে তিনি জানান।

ঘটনার পরদিন এ ঘটনায় আসমার স্বামী, শাশুড়ি ও ননদকে আসামি করে বাকেরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন আসমার ভাই মনোয়ার হোসেন। মামলা নং ১৬/৩৩৫। মামলায় পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠায়।

মামলার পর থেকে স্বামীপক্ষ আসমার পরিবারকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছে বলে অভিযোগ করেছেন আসমার ভাই মনোয়ার হোসেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে আসমার স্বামীর দূর সম্পর্কের এক ভগ্নিপতি কাউসার উদ্দিন তার বন্ধু ফরিদুল আলমকে নিয়ে ঢামেক হাসপাতালে আসমাকে দেখতে আসে। এখানেও তারা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দেয়।

তারা মোবাইলে আসমার ছবি তুলতে গেলে তার মামা বাবুল খানের সন্দেহ হয়। এ সময় তিনি হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোজাম্মেল হোসেনকে খবর দিলে তিনি তাদের আটক করেন।

 আসমার মামা বাবুল খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘ওরা আগুনে পুড়ে এখন আবার  মামলা তুলে নিতে হুমকি দিতে হাসপাতাল পর্যন্ত এসেছে। তাই তাদের পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছি। ’

তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।

আসমার শিশুকন্যা মিথিলার সঙ্গে কথা বলার অনেক চেষ্টা করেও পারা যায়নি। মায়ের অবস্থা দেখে যেন সে বাকশক্তিও হারিয়ে ফেলেছে।

ছোট্ট মিথিলার ‘মা’ ডাকে আবার সাড়া দেবে তো আসমা বেগম?

বাংলাদেশ সময় :  ০৯৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।