ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘রক্তমাখা টিস্যু আদালতে উপস্থাপন’

ফারুক হত্যা মামলায় সাকা চৌধুরী ৫দিনের রিমান্ডে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১০
ফারুক হত্যা মামলায় সাকা চৌধুরী ৫দিনের রিমান্ডে

ঢাকা: বিএনপির ডাকা ২৭ জুনের হরতালের আগের দিন গাড়িতে আগুন দিয়ে প্রাইভেটকারের যাত্রী ফারুক হত্যা মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাংসদ সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ৫ দিনের রিমান্ডে দিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ডিবি কার্যালয়ে তার ওপর নির্যাতন করা হয়েছে বলে আদালতে উল্লেখ করেন। এমনকি নির্যাতনের প্রমাণ হিসেবে নিজের রক্তমাখা টিস্যু আদালতে উপস্থাপন করেন তিনি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো. ফজলুর রহমান সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে আদালতে পাঠিয়ে ১০ দিনের পুলিশ রিমান্ডের আবেদন করেন।

তদন্ত কর্মকর্তা রিমান্ড আবেদনে উল্লেখ করেন, গত ২৭ জুন বিএনপির ডাকা হরতাল সফল করার জন্য বিএনপি নেতারা তাদের নেতা-কর্মীদের গাড়ি-পোড়ানো, মানুষ হত্যা ও গাড়ি ভাংচুর করে হরতাল সফল করার জন্য নির্দেশ দেন। এ কাজের জন্য পুরস্কারও ঘোষণা করেন তারা ।

তারই পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি নেতা-কর্মীরা গত ২৬ জুন গাড়ি ভাংচুর ও  ২ টি গাড়িতে আগুন দিয়ে প্রাইভেট কারের আরোহী ফারুককে পুড়িয়ে গুরুতর আহত করে।

উল্লেখ্য অগ্নিদগ্ধ ফারুক ১ জুলাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলে মামলাটি হত্যা মামলায় মোড় নেয়।

আবেদনে উল্লেখ করা হয়, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোয় উক্ত ঘটনায় উস্কানি ও ইন্ধন দিয়েছেন। তিনি এ ঘটনায় সরাসরি জড়িত ও বর্তমান সরকারের  বিরুদ্ধে যড়যন্ত্রে লিপ্ত ।  

রিমান্ড আবেদনের পক্ষে বক্তব্য রাখেন মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আবু, জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর খন্দকার আব্দুল মান্নান খান, অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শাহআলম তালুকদার, ও পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মকবুল হোসেন।

রিমান্ডের বিরোধিতা করে আদালতে বক্তব্য রাখেন, ঢাকা বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, মহসিন মিয়া ও ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম।

তারা আদালতকে জানান, কথিত ঘটনার সঙ্গে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর কোনো সম্পর্ক নেই। আর্ন্তজাতিক যুদ্ধ অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তাকে গ্রেপ্তারের আবেদনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

অথচ উক্ত আবেদনের ওপর রোববার শুনানি হওয়ার কথা। সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েই সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী গ্রেপ্তার হয়েছেন । যেহেতু এ মামলার সব আসামি জামিনে আছেন সেহেতু সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী জামিন পাবার হকদার।

আদালতকে নিজে যা বললেন:

বিচারকের অনুমতি নিয়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী আদালতে বক্তব্য রাখেন। এসময় তিনি তার ওপর অমানুষিক নির্যাতনের বর্ণনা দেন। তবে কিভাবে নির্যাতন করা হয়েছে তার বর্ণনা দেননি তিনি।

তিনি বলেন, ‘আমি তা বললে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ছোট করা হবে, আমি তা বললে সংসদকে ছোট করা হবে। আমার ওপর যে নির্যাতন করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেঁচে থাকলে তা হতো না। আমার ওপর যে ধরনের নির্যাতন করা হয়েছে আমার মনে হয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও তা জানেন না। ’ এ সময় তিনি রক্তমাখা টিস্যু পেপার আদালতে দেখান।

এর আগে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ২টা ২৫ মিনিটে ডিবি কার্যালয় হতে আদালতের হাজতখানায় আনা হয়। ২ টা ৪৭ মিনিটে এজলাসের কাঠগড়ায় হাজির করা হয় তাকে। তিনি হাঁটতে পারছিলেন না। ২/৩ জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে আদালতে উপস্থিত করা হয়। এসময় তিনি আদালতের কাঠগড়ার মেঝেতে বসে পড়েন। পরে আদালতের অনুমতি নিয়ে তাকে চেয়ারে বসানো হয়।

যে মামলায় গ্রেপ্তার:

মামলার এজাহার হতে জানা যায়,  গত ২৭ জুন হরতালের আগের দিন রাজধানীর মগবাজার এলাকায় একটি প্রাইভেট কারে অগ্নিসংযোগ করলে চালক সুমন ও যাত্রী ফারুক আগুনে পুড়ে মারাত্মক জখম হন। এ অভিযোগে রমনা থানার এসআই শাহেদ আল মামুন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মীর্জা আব্বাসসহ ৭ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।

এরপর এ মামলায় একে একে গ্রেপ্তার করা হয়, জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সেক্রেটারী জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, আব্দুল কাদের মোল্লা, মোহাম্মাদ কামারুজ্জামান, ও শমসের মবিন চৌধুরীকে।

তাদের গ্রেপ্তারের পর বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়।
এদিকে রিমান্ড মঞ্জুরের খবরে আদালতে উপস্থিত বিএনপি সমর্থিত আইনজীবী ও নেতাকর্মীরা মিছিল ও স্লোগান দিলে সেখান থেকে পুলিশ সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি শাম্মি আকতারসহ ৪ জনকে আটক করেছে বলে জানান জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন মেজবাহ।

তবে রাতে বিরোধীদলীয় চিফ হুইফ জয়নুল আবদীন ফারুক ও ঢাকা বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া কোতয়ালী থানায় গিয়ে মুচলেকা দিয়ে আটক সাংসদ শাম্মী আক্তারসহ আরো ২জনকে ছাড়িয়ে নেন।


উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার ভোর রাতে বনানীর একটি বাসা থেকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে প্রথমে তাকে ক্যান্টনমেন্ট থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সকাল  সাড়ে ৬টায় তাকে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়। সেখান থেকেই একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে আদালতে আনা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৫ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad