ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১০

ঢাকা: প্রায় দেড় বছর কাজ করার পর অবশেষে রোববার মন্ত্রিসভায় ‘জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি ২০১১’ এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হলো।

সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ নীতির খসড়া অনুমোদনের সিদ্ধান্ত হয়।



বৈঠক শেষে তথ্য অধিদপ্তরের সভাকক্ষে প্রধান প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সেক্রেটারি সচিব আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
 
স্বাস্থ্যনীতি ছাড়াও এদিন ‘আদালত অবমাননা আইন ২০১১’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এছাড়া মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নয়ন ট্রাস্ট আইন ২০১১ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন এবং ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প (ভূমি অধিগ্রহণ) আইন ২০১১ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন  দেওয়া হয়েছে।

আদালত অবমাননা আইন ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের জমি অধিগ্রহণ আইনের খসড়া এর আগে মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। সোমবারের বৈঠকে এটির চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হলো।

এর বাইরে বর্হিবিশ্বে সরকারের ৩টি কার্যক্রম সম্পর্কে মন্ত্রিসভাকে অবহিত করা হয় বলে জানান আবুল কালাম আজাদ।

তিনি বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির অংশগ্রহণ, ভিয়েতনাম থেকে সরকারি পর্যায়ে (জি-টু-জি) চাল আমদানির লক্ষ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের জন্য বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের ভিয়েতনাম সফর এবং জেনেভায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার গভর্নিং বডির ৩১০তম অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের অংশগ্রহণের বিষয়গুলো মন্ত্রিসভার বৈঠকে জানানো হয়েছে। ’

স্বাস্থ্যনীতি সম্পর্কে প্রেস সেক্রেটারি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের ধারাবাহিকতায় একটি যুগোপযোগী স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। ’

আবুল কালাম আজাদ আরও বলেন, ‘খসড়া ওয়েবসাইটে দেওয়া ছাড়াও বিভিন্ন কর্মশালার মাধ্যমে এর ওপর মতামত নেওয়া হয়েছে। ’

‘সরকার প্রধানের নেতৃত্বে জাতীয় স্বাস্থ্য কাউন্সিল গঠন করা হবে’ বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘সুস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবা সুনিশ্চিত করা এবং চিকিৎসার মৌলিক উপাদান মানুষের মাঝে পৌঁছে  দেওয়াই এ নীতির মূল লক্ষ্য। ’

‘মা ও শিশু মৃত্যুহার কমাতে এ নীতি কাজে লাগবে’ বলেন তিনি।

প্রেস সেক্রেটারি বলেন, ‘কমিউনিটি ক্লিনিক গড়ে তোলার ওপরও স্বাস্থ্যনীতিতে জোর দেওয়া হয়েছে। ’

স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমে বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করা হয়েছে খসড়া স্বাস্থ্যনীতিতে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নয়ন ট্রাস্ট আইন সম্পর্কে আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিজ্ঞানের উন্নয়নে যে অর্থ নেওয়া হয়ে থাকে, তার ব্যয় নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। এজন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নয়ন ট্রাস্ট আইন করা হচ্ছে। ’

তিনি বলেন, ‘বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রীকে প্রধান করে ১৪ সদস্যের একটি ট্রাস্টি বোর্ড নতুন আইন অনুযায়ী ট্রাস্ট পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন। ’


স্বাস্থ্যনীতির খসড়ায় যা রয়েছে:

অনুমোদিত খসড়া স্বাস্থ্যনীতিতে ১০টি মূলনীতি, ১৫টি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং ৩২টি কৌশল চিহ্নিত করা হয়েছে।

খসড়া স্বাস্থ্যনীতিতে স্বাস্থ্যকে অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

জাতীয় স্বাস্থ্যনীতির ১০টি মূলনীতিতে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য অধিকার ও  সেবা সম্পর্কে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে  দেশের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, সামাজিক ন্যায়বিচার, সুবিধাবঞ্চিত, দরিদ্র ও বেকারদের জন্য সম স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা, জন্ম নিয়ন্ত্রণ উপাদান সহজলভ্য করা, স্বাস্থ্যসেবা পুনর্গঠন ও এর বিকেন্দ্রীকরণ এবং সবার জন্য কার্যকর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হবে।

স্বাস্থ্যনীতির ১৫টি লক্ষ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, সাংবিধানিকভাবে মানুষের মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টির মাত্রা উন্নয়ন, সহজলভ্য ও টেকসই স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা, নারী ও শিশুদের অপুষ্টির ঘনত্ব হ্রাস, পাঁচ বছরের মধ্যে শিশু ও মাতৃ মৃত্যুহার সন্তোষজনক পর্যায়ে নামিয়ে আনা, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনাকেন্দ্রে ডাক্তার, নার্স ও চিকিৎসা উপকরণ নিশ্চিত করা, সরকারি হাসপাতালের বিদ্যমান সেবার সর্বোত্তম ব্যবহার এবং ব্যবস্থাপনা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা, মেডিকেল কলেজ ও প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোর জন্য সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়ন করা।

২০১০ সালের ১১ জুলাই স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে প্রধান করে ১৩ সদস্যের স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়।
 
গত ১৫ ফেব্র“য়ারি জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি ২০১১-এর খসড়া অনুমোদন করে জাতীয় কমিটি।

২০০০ সালের জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিকেই মূলত পুনর্মূল্যায়ন ও হালনাগাদ করা হয় বলে কমিটি সূত্র জানায়। যদিও এর মধ্যে কিছু নতুন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

খসড়ায় বর্ণিত গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে মাথাপিছু স্বাস্থ্যসেবা ব্যয় ১৩ ডলার থেকে বাড়িয়ে ২৪ ডলারে উন্নীত করা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা বিকেন্দ্রীকরণ, সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত সুযোগের প্রয়াস সৃষ্টি, জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার করা ও স্বাস্থ্যখাতের সব স্তরে জবাবদিহিতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয়। ’

খসড়ায় চিকিৎসাসেবার মানোন্নয়ন এবং গ্রামমুখি করার প্রস্তাবের পাশাপাশি যেসব চিকিৎসক প্রাইভেট প্র্যাকটিস করবেন না তাদের জন্য প্রণোদনা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

আদালত অবমাননা আইনে যা রয়েছে:

দীর্ঘ ৮৫ বছর পর আদালত অবমাননার সংজ্ঞা স্পষ্ট করে দিয়ে আদালত অবমাননা আইন ২০১১ প্রণীত হচ্ছে। রোববারের বৈঠকে এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।

নতুন আইনে যেসব কাজে আদালত অবমাননা হবে না তা স্পষ্ট করে  দেওয়া হয়েছে।

ব্রিটিশ ঔপোনেবেশিক শাসনামলে ১৯২৬ সালে এই ভূখণ্ডে প্রথমবারের মতো প্রণীত হয় আদালত অবমাননা আইন। তখন তিনটি ধারা নিয়ে আইনটি প্রণীত হয়।

দেশবিভাগের পর ভারত ১৯৫২ ও ১৯৭২ সালে দু’বার আদালত অবমাননা আইন সংশোধন করেছে।

নতুন আইন অনুযায়ী আদালতের স্বাভাবিক কর্মধারা সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য, মন্তব্য বা সংবাদ প্রকাশ ও বিচারকের ব্যক্তিগত আচরণ, আদালতের চলমান বিচারিক কর্মধারা সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য প্রকাশ করা হলে তা আদালত অবমাননা হবে না। পাশাপাশি কোনো সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ উত্থাপন হলে প্রথমেই তাকে আদালতে ডেকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যাবে না।

অভিযোগের পর আইনজীবীর মাধ্যমে বক্তব্য প্রদানের সুযোগ অভিযুক্তকে দিতে হবে। পরে  কোনো পর্যায়ে যদি আদালত মনে করে যে, ন্যায়বিচারের স্বার্থে অভিযুক্ত আদালত অবমাননাকারীর বক্তব্য সরাসরি শোনা ও লিপিবদ্ধ করা আবশ্যক, তবেই আদালত তাকে ব্যক্তিগতভাবে হাজির হয়ে বক্তব্য প্রদানের জন্য নির্দেশ প্রদান করতে পারবেন।

নতুন এ আইনে আদালত অবমাননার দায়ে অনূর্ধ্ব ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ২ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

নয়া আইন অনুযায়ী আদালত অবমাননার অভিযোগে কোনো অভিযুক্ত নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার পর আদালত সন্তুষ্ট হলে তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি প্রদান করতে পারবে। এছাড়া আদালত অবমাননার কারণ উদ্ভব হওয়ার তারিখ থেকে তিন মাসের মধ্যে মামলা দায়ের করতে হবে। তিন মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পর আর এ মামলা করা হবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৫ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad