ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে নাশকতা দাবি করলো হা-মীম গ্রুপ

জাহিদুর রহমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১০
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে নাশকতা দাবি করলো হা-মীম গ্রুপ

সাভার: দুর্ঘটনা নয়, আশুলিয়ায় হা-মীম গ্রুপের তৈরি পোশাক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে নাশকতা বলে দাবি করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।

দুর্ঘটনার পরদিন বুধবার সংবাদ সম্মেলন ডেকে হা-মীম গ্র“পের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার হোসেন বলেছেন, ‘বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়নি।

সেটা ঘটারও সম্ভাবনা নেই।   কেউ নাশকতামূলকভাবে এই কাজ করেছে। ’

গত বছরের ২৮ জুন হা-মীম গ্র“পের এ কারখানার পাশ্ববর্তী সোয়েটার কারখানাসহ যানবাহন পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে।

ওই উদাহরণ টেনে দেলোয়ার বলেন, ‘আমাদের আশঙ্কা, স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধনে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। ’

আশুলিয়ার নরসিংহপুরে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি একে আজাদের `দ্যাটস ইট স্পোর্টস ওয়্যার` নামের বহুতল ওই পোশাক কারখানায় মঙ্গলবার দুপুরে আগুন লাগে।

এ দুর্ঘটনায় মারা যান ৩১ জন, আহত হন শতাধিক শ্রমিক।

মঙ্গলবার রাতে তিগ্রস্ত কারখানা পরিদর্শনে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। তবে তদন্তের পর আসল কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। ’

এর পরদিনই সংবাদ সম্মেলন ডেকে দুর্ঘটনার বিষয়টি ‘নাশকতা’ বলে কর্তৃপরে অবস্থান তুলে ধরে দেলোয়ার বলেন, ‘আমাদের কারখানার নিয়ম হলো দুপুর ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত যখন মধ্যাহ্ন ভোজের বিরতি থাকে, সে সময় পুরো কারখানার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তাই বৈদ্যুতিক শর্ট শার্কিট থেকে আগুন লাগার ধারণা ঠিক নয়। ’
 
আগুন লাগলে বেল বাজানোর নিয়ম থাকলেও ওই সময় কেউ কারখানায় বেল বাজায়নি বলেও জানান তিনি।

তবে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকার বিষয়টি নাকচ করে দিয়ে কারখানার একাধিক শ্রমিক বলেছেন, ‘কর্তৃপরে এ দাবী অসত্য। এত বড় কমপ্লেক্সে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হলে তো ভুতুড়ে অবস্থা তৈরি হওয়ার কথা। আর বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকলেই বা কিভাবে কোজ সার্কিট ক্যামেরার মাধ্যমে শ্রমিকদের কর্মকাণ্ড পর্যবেণ করা হয়। ’

এদিকে এ ঘটনার পর এখনো অনেক শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের সন্ধানে সকাল থেকেই স্বজনরা ভিড় করেন কারখানাসহ বিভিন্ন হাসপাতালে।

নিখোঁজ স্বজনদের কোথাও না পেয়ে শ্রমিকদের অনেকে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

কারখানা কর্তৃপ বলছে, ইতিমধ্যে নিখোঁজ আট জনের তালিকা পাওয়া গেছে। নিখোঁজদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে তালিকা তৈরি করছেন তারা।

স্বামী রনজু মিয়ার খোঁজে ভোর থেকেই কারখানার সামনে অবস্থান করছিলেন শাহনাজ বেগম। ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গ, বিভিন্ন হাসপাতাল-কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি তাকে।

স্যুইং অপারেটর রনজু মিয়া ঘটনার সময় ১১ তলায় আহার করছিলেন। স্বামীকে কোথাও না পেয়ে অজানা আশঙ্কায় ভেঙ্গে পড়েন শাহনাজ।

শাহনাজের সঙ্গে থাকা তার এক আতœীয় সাংবাদিকদের জানান, ঘটনার পর রনজু তার মাকে মোবাইল ফোনে বলেন, ‘মা, আমি মইর‌্যা যাইতেছি। অন্যায় কইর‌্যা থাকলে মাফ কইর‌্যা দিয়ো। তারপর থেকে রনজু’র মুঠো ফোনটি বন্ধ ও তার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। ’

বুধবার সকালে কাজে যোগ দিতে কারখানায় আসা কয়েক হাজার শ্রমিক সমবেত হয়ে দুর্ঘটনার পেছনে কর্তৃপরে গাফিলতির অভিযোগ এনে বিােভ করেন কারখানার সামনে। গণমাধ্যমে নিহতদের প্রকৃত সংখ্যা বলা হয়নি অভিযোগ করে সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন তারা। এসময় কারখানা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। সতর্ক অবস্থান নিতে দেখা যায় র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যদের।

শ্রমিকরা স্লোগান দিয়ে জানান, ‘ভেতরে আরও লাশ আছে। গেট বন্ধ থাকায় এসময় নানা গুজব তোলা হলে তালা খুলে দিয়ে তিগ্রস্ত কারখানা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

পরে তারা কারখানার সামনে বিােভ করলে হা-মীম গ্র“পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক একে আজাদের সহোদর ইসমাঈল হোসেন মাইকিং করে শ্রমিকদের শান্ত থাকার অনুরোধ জানিয়ে কারখানা আগামী দু’দিন ছুটি থাকবে বলে ঘোষণা দেন।

অন্যদিকে সকালে কারখানার ৯, ১০ ও ১১ তলায় তল্লাশি চালান উদ্ধারকর্মীরা।

তবে সেখানে কোনো লাশ পাওয়া যায়নি বলে জানান  ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আকতারুজ্জামান লিটন।

এদিকে অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ২৩ বলে দাবী করে হা-মীম কর্তৃপ বলছে, ‘নিহত ১৭ জনের নামের তালিকা তাদের কাছে রয়েছে। ’

এদিকে  ঘটনা তদন্তে সরকারের পাশাপাশি বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করলেও বিজিএমইএর তদন্ত কমিটি বৃহস্পতিবার থেকে কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি আব্দুস সালাম মুশের্দী।

তিগ্রস্ত কারখানাটির পরিচালক (উৎপাদন) সুনীল কুমার সরকার জানান, নিহতদের মধ্যে ১৯ জনের লাশ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে আরো চারটি লাশ।

নিহতদের ১৭ জনের পরিচয় জানা গেছে। এরা হলেন- সালিম (সিরাজগঞ্জ), মারুফ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), রিয়াজুল (গাইবান্ধা), রিনা (বরিশাল), দেলোয়ার (ফরিদপুর), মানসুরা (ফরিদপুর), মামুন (বাগেরহাট), তানিয়া (বরগুনা), অঞ্জনা (জামালপুর), ফরিদ (দিনাজপুর), হালিমা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), মোাজাম্মেল (দিনাজপুর), রুহুল আমিন (বগুড়া), রাসেল (মাদারীপুর), বাবুল (ময়মনসিংহ), হিমেল (মানিকগঞ্জ), রনজু (সিরাজগঞ্জ), শাহীন (বগুড়া)। এছাড়া শাহ আলম, সোহেল ও রেজাউল করিমের বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি।

বুধবার সকালে নিহতদের দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ভিড় করেন হতভাগ্য স্বজনরা।

ঢাকার জেলা প্রশাসনের প থেকে ম্যাজিস্ট্রেট আবুল বাশার মো. ফখরুজ্জামান লাশ তাঁদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেন।

এ সময় জেলা প্রশাসনের প থেকে নিহতদের স্বজনদের হাতে ১০ হাজার টাকা করে তুলে দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।