ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নিষ্ক্রীয় ১৪ দল!

শামীম খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১০

ঢাকা : টানাপড়েনের মধ্য দিয়েই চলছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল। বার বার উদ্যোগ নিয়েও টানাপোড়েন কাটিয়ে উঠা সম্ভব হচ্ছে না।

শুধু তাই নয়, জোটের শরিক দলগুলোর একটিও দাবি বাস্তবায়ন করা হয়নি।

দীর্ঘ দিন হলো জোটের কোনো সভাও হচ্ছে না। এই টানাপোড়েন থেকেই এ জোট রাজনৈতিকভাবে আবারো নিষ্ক্রীয় হয়ে পড়েছে বলে ১৪ দলের শরিক দলগুলোর নেতারা জানিয়েছেন।

প্রতি মাসের শেষ শনিবার ১৪ দলের সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও সর্বশেষ গত ৯ ফেব্রুয়ারি ১৪ দলের সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় ১৪ দল শরিকদের বেশ কিছু প্রস্তাব ও দাবি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে এর কোনোটিই বাস্তবায়ন হয়নি বলে জোট নেতারা অভিযোগ করেছেন।  

এদিকে জোটের সভা নিয়মিত কেন হচ্ছে না বা জোটের সভার সিদ্ধান্তগুলো কেন বাস্তবায়ন হচ্ছে না সে ব্যাপারে আওয়ামী লীগের নেতারাও কিছু বলতে চান না।

২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর গত প্রায় আড়াই বছরে ১৪ দলের শরিকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বৈঠক হয়েছে মোট ৫টি। সরকারের প্রথম বছর ১৪ দলের আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠক হয়নি।

২০১০ সালের ৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ১৪ দলের প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সরকারের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর তৎকালিন সরকারি বাসভবন গণভবনে এ বৈঠক ডাকা হয়েছিলো।

পরে ওই বছর ৯ ফেব্রুয়ারি ১৪ দলের আরেকটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় জেলা-উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত ১৪ দলকে বিস্তৃত করার স্দ্ধিান্ত নেওয়া হয়। এছাড়া জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন সরকারি কমিটিগুলোতে ১৪ দলের শরিক দলগুলোর নেতাদের সম্পৃক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়।

সভার পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন। এই সব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার জন্য শরিক সকল দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকদের যৌথ স্বাক্ষরে জেলায় জেলায় চিঠি পাঠানো হবে বলেও আশরাফ জানিয়েছিলেন।

এরপর দীর্ঘ দিন নিস্ক্রীয় থাকার পর গত ২৮ নভেম্বর ও ২৪ ডিসেম্বর ১৪ দলের দুইটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায়ও ১৪ দলকে জেলা পর্যায়ে সক্রিয় করা, বিভিন্ন পর্যায়ে আইন-শৃঙ্খলাসহ বিভিন্ন কমিটিতে ১৪ দলের শরিকদের প্রতিনিধি রাখা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষ্যে ঢাকায় বড় ধরণের গণজমায়েতসহ বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশের সিদ্ধান্ত হয়।

সর্বশেষ এ বছর গত ৬ ফেব্রুয়ারির ১৪ দলের সভায় পূর্ববর্তী সভার সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে বলে সভা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম জানিয়েছিলেন।

এরপর একটিও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি এবং এ ব্যাপারে জোট শরিকদের কিছু জানানোও হয়নি বলে শরিক দলগুলোর নেতাদের অভিযোগ্।

এ ব্যাপারে জাসদের সাধারণ সম্পাদক শরিফ নুরুল আম্বিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ১৪ পুরোপুরি নিষ্ক্রীয়। সর্ব শেষ সভায় যে সব সিদ্ধান্ত হয়েছিলো তা বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগ কোনো উদ্যোগ নেয়নি, পরে সে বিষয়ে আমাদের কিছু জানায়ওনি। সংবিধান সংশোধন, যুদ্ধাপরাধের বিচারসহ জাতীয় নানা ইস্যুতে ১৪ দলের শরিকদের সঙ্গে আলোচনা ও মতামত নেয়া উচিত। কিন্তু কোনো বিষয়েই শরিকদের পরামর্শ নেয়া হচ্ছে না।

ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান মল্লিক বাংলানিউজকে বলেন, এ পর্যন্ত ১৪ দলের সভায় যে সব সিদ্ধান্ত হয়েছে তার কিছুই বাস্তবায়ন করা হয়নি।

ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এনামুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ১৪ দলের নেতৃত্ব দেয় আওয়ামী লীগ। তারা যখন প্রয়োজন মনে করে সভা ডাকে। সভায় অনেক বিষয়ে আলোচনা হয় কিন্তু পরে তা বাস্তবায়ন হয় না।    

গণতন্ত্রি পার্টির সাধারণ সম্পাদক নুরুর রহমান সেলিম বাংলানিউজকে বলেন, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা হয় না। ১৪ দলকে কেন নিস্ক্রীয় করে রাখা হয়েছে জানি না।

১৪ দল নেতাদের এই সব অভিযোগ এবং জোটের বিগত সভাগুলোতে শরিকদের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে যেসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিলো সেগুলো বাস্তবায়ন না হওয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার কাছে জানতে চাইলে তারা কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিভিন্ন সভায় তো ১৪ দলের নেতারা থাকছেনই। ১৪ দলের সভা হবে। ’
 
বাংলাদেশ সময় ১৮০০ ঘন্টা, মে ২৮, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।