সাভার: সন্ধ্যা পৌনে সাতটা। চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার।
হামিম গ্র“পের প্রতিষ্ঠান দ্যাটস ইট স্পোটর্স ওয়্যার লিমিটেডের সিনিয়র অপারেটন স্বামী জাকির হোসেনের মরদেহ তখন হাসপাতালের ভেতরে। প্রতিবেশীর কাছে স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে এক কাপড়েই ছুটে এসেছেন তিনি।
তবে পুলিশ ওই হাসপাতালে কাউকে ঢুকতে না দেওয়ায় গেটের বাইরে চলছিলো তার আহাজারী আর চিৎকার।
‘আমাকে একবারের লাহান ঢুকবার দেন, আমি ওর মুখডা একটু দেহুম-আমারে যাইবার দেন স্যার-’
কিন্তু নানা আকুতিতেও মন ভিজলো না নিরাপত্তাকর্মীদের। বেবীর চিৎকারে এক সাংবাদিক এগিয়ে গিয়ে গেট খোলার অনুরোধ জানাতেই ভেতর থেকে পাল্টা জবাব-‘অহন গেট খুলন যাইবো না। দেহেন না কত্তো লোক। বেবাকতে হুরমুর কইর্যা ঢুইক্যা যাইবো। ’
এক পর্যায়ে যেন কান্নার রোল পড়ে গেলো গেটের বাইরে।
প্রিয়জন হারানোর খবর পেয়ে ছুটে এসেছেন শহীদুল। তাকে-ও গেটের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হলো না।
এক পর্যায়ে হামিম গ্র“পের পরিচিত এক কর্মকর্তাকে পেয়েই তার বুকে আছড়ে পড়লেন শহীদুল। চিৎকার করে বললেন, ‘স্যার, আমার তানিয়া সুলতানা আর নাই, ওর বান্ধবী মানসুরারও লাশ পইড়া আছে হাসপাতালের ভেতর। স্যার, আপনে কইলেই ঢুকবার দিবো ভিতরে। একটু কইয়্যা দেননা স্যার। ’
কিন্তু বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিয়ে হঠাৎ উধাও সেই কর্মকর্তা।
এরপর সাংবাদিকদের দেখে এগিয়ে এলেন শহীদুল। কিন্তু কে শোনে কার কথা। সাংবাদিকরা খুঁজছেন চাবিওয়ালাকে। ভেতরে ঢুকে তবেই না লাশের ছবি তোলা।
হাসপাতালের সামনে কর্তব্যরত এক পুলিশ কনস্টেবল জানালেন, ভাইরে কেন যে চাবিডা দেয় না আমরাও বুঝি না।
মানুষজনের এত কষ্ট আর সহ্য হয় না। এই একই চিত্র যেন সবখানে। নাইটিঙ্গেল মেডিকেল কলেজ, এনাম মেডিকেল কলেজ, সাভার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, মা ও শিশু কেন্দ্র সব খানেই স্বজনহারাদের আহাজারী ও কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে বাতাস।
হতভাগ্য এসব মানুষকে শান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা যেন জানা নেই কারো।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১০