ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘সোমালি জলদস্যুদের জলসীমা থেকে বাংলাদেশি জাহাজ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১০
‘সোমালি জলদস্যুদের জলসীমা থেকে বাংলাদেশি জাহাজ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে’

চট্টগ্রাম: সোমালি উপকূলে জলদস্যুদের জলসীমায় নোঙর  ফেলা বাংলাদেশি জাহাজ ‘এমভি জাহান মণি’ ও তার নাবিকদের উদ্ধার করতে সব রকমের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তবে কৌশলগত কারণে ও নাবিকদের নিরাপত্তার স্বার্থে ঠিক কি ধরনের চেষ্টা চালানো হচ্ছে তা গোপন রাখা হয়েছে।



এদিকে শনিবার সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আরবসাগর থেকে গত ৫ ডিসেম্বর ছিনতাই হওয়া জাহাজটি থেকে কোনো বার্তা পাঠায়নি সোমালি জলদস্যুরা।

তবে জাহাজটির মালিক প্রতিষ্ঠান ব্রেভ রয়েল শিপিং ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের জিএম মেহেরুল করিম শনিবার সন্ধ্যায় বাংলানিউজকে জানান, ‘সোমালিয়ার জলদস্যুরা দু’একদিনের মধ্যেই বার্তা পাঠাবে বলে আশা করছি। ’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা জাহাজ ছিনতাইয়ের ঘটনার সুষ্ঠু সমাধানের জন্য সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা দরকার তাদের অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ হয়েছে। আরো যোগাযোগ চলছে। তবে কৌশলগত কারণে ও নাবিকদের নিরাপত্তার স্বার্থে কি করা হচ্ছে তা বলবো না। ’

ছিনতাই হওয়া বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজটি জলদস্যুদের নিজস্ব জলসীমায় পৌঁছে শুক্রবার বাংলাদেশ সময় রাত ১টা ২৩ মিনিটে নোঙ্গর ফেলে।

সোমালিয়ার পূর্ব উপকূলের গারাকাট নামের এ এলাকাটি জলদস্যুদের মুক্তাঞ্চল বলেই বিবেচিত।

সেখান থেকে ছিনতাই হওয়া এমভি জাহান মণি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলে জানান নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান।

শনিবার বুয়েটে মেরিন টেকনোলজি বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘লন্ডনভিত্তিক ইউকেএমটিও ও সিঙ্গাপুরভিত্তিক রিক্যাপ সংস্থার সঙ্গে এ বিষয়ে সার্বণিক যোগাযোগ চলছে। চলতি বছর জলদস্যুরা বিভিন্ন দেশের ৩১টি জাহাজ ছিনতাই করেছে। এগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের এই প্রথম একটি জাহাজ ছিনতাই হলো। ছিনতাই হওয়া জাহাজের বিষয়ে সরকার সার্বণিক নজর রাখছে। ’

মধ্যরাতে এটি সোমালিয়ার উপকূলে পৌঁছেছে বলেও জানান তিনি।

নৌ পরিবহন মন্ত্রী আরো বলেন, ‘জাহাজে অবস্থানরত নাবিকদের সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। ’

জাহাজটির মালিক প্রতিষ্ঠান ব্রেভ রয়েল শিপিং ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. গোলাম মোস্তফা শনিবার সকালে বাংলানিউজকে জানান, জাহাজটি স্যাটেলাইট ইমেজের দৃষ্টি সীমায় রয়েছে।
 
এদিকে, আস্তানায় পৌঁছার পর জিম্মি নাবিকদের সঙ্গে যোগাযোগ কিংবা জলদস্যুদের সঙ্গে সমঝোতা করা যাবে এমন আশায় বুক বেঁধে আছেন তাদের স্বজনরা।

এমভি জাহান মণির চিফ অফিসার আবু নাসের মো.আবদুল্লাহ মজুমদারের বড় ভাই শাহজালাল মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, ‘আল্লাহকে ডাকছি, আপনারাও সবাই দোয়া করেন যেন আমার ভাইয়ের অবস্থাটা জানতে পারি। ’

এক পর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্বাস করেন ভাই আর সহ্য করতে পারছি না। আল্লাহ যেন আমার ভাইকে ফেরত দেন। তার আড়াই বছরের মেয়েটার দিকে আমি আর তাকাতে পারছি না। ’

ব্রেভ রয়েল শিপিং কোম্পানির নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরোজ আলম বলেন, ‘আমরা প্রস্তুত আছি। আমাদের নাবিকদের এবং জাহাজ উদ্ধার করতে যা করতে হয় আমরা সবই করব। ’

ব্রেভ রয়েলের মূল প্রতিষ্ঠান কবীর স্টিল রি-রোলিং মিলের কার্যালয়ে খোলা তথ্যসেল থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, ভারতের লাক্ষ্মাদ্বীপ সংলগ্ন এলাকা থেকে ছিনতাই করার পর ঘণ্টায় ৯ থেকে ১০ নটিক্যাল মাইল গতিতে জাহাজটিকে প্রায় সাড়ে তিনশ’ নটিক্যাল মাইল দূরে নিয়ে গেছে জলদস্যুরা।

গত ৫ ডিসেম্বর ২৫ নাবিক ও এক নাবিকের স্ত্রীসহ বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি জাহান মণিকে ছিনতাই করে নিয়ে যায় জলদস্যুরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।