ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

আত্মহত্যার ঝুঁকিতে ৬৫ লাখ মানুষ

রিয়াজ রায়হান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১০
আত্মহত্যার ঝুঁকিতে ৬৫ লাখ মানুষ

ঢাকা: দেশের প্রায় ৬৫ লাখ মানুষ শুধুমাত্র তীব্র বিষন্নতার কারণে আত্মহত্যার ঝুঁকিতে রয়েছেন। শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আয়োজিত একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. মোহিত কামাল এ তথ্য জানান।

 

এসময় তিনি আরও জানান, ২০০৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের  যৌথভাবে পরিচালিত গবেষণায় দেখা যায় দেশের ১৮ বছরের উর্ধের ৪.৬ ভাগ মানুষ অতিরিক্ত বিষন্নতার কারণে আত্মহত্যা করতে চায়।
 
মোহিত কামাল যিনি নিজেও এ জড়িপ কার্য পরিচালনায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি বলেন, সে অনুযায়ী দেশের বর্তমান জনসংখ্যা ১৪ কোটি ধরে হিসেব করলে দেশের প্রায় ৬৪ লক্ষ ৮০ হাজার মানুষ শুধু অতিরিক্ত বিষণœতার কারণে আত্মহত্যার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

এদিকে, গ্রামীণ জনপদে আত্মত্যার প্রবণতা নিয়ে পরিচালিত অন্য একটি এক গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়, প্রতি লাখে আত্মহত্যা করছেন ১২৮ দশমিক ৮ জন মানুষ। এদের ৮৯ শতাংশই নারী। আবার আত্মহত্যাকারীদের ৮২ দশমিক ৯ শতাংশই অবিবাহিত। অধিকাংশের বয়স ১৪ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে।  

শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে এ রিপোর্ট প্রকাশ করে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ বিভাগ ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ এ বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গার মোমিনপুর ইউনিয়নে এ গবেষণা চালায়।

আট সদস্য বিশিষ্ট গবেষক দলের মূল গবেষক ছিলেন সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. এএইচএস ফিরোজ ও ডা. এসএম নুরুল ইসলাম।

জরিপ রিপোর্টে বিশ্বসংস্থার এক রিপোর্টের বরাত দিয়ে উল্লেখ করা হয়, ২০১০ সালে বিশ্বে প্রায় ১৫ লাখ ৩০ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে মারা যাবে। একই সময়ে অন্তত ২০ গুণ লোক আত্মহত্যার চেষ্টা করবে। এ হিসাব অব্যাহত থাকলে বিশ্বে প্রতি ২০ সেকেন্ডে একজন মানুষ মারা যাবে। এছাড়া প্রতি ১ থেকে ২ সেকেন্ডে একজন লোক আত্মহত্যার চেষ্টা করবে।

রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে মৃত্যুর ধরণগুলোর মধ্যে আত্মহত্যাজনিত মৃত্যু রয়েছে পঞ্চম অবস্থানে।

সম্পর্কের বিবাদ, পারস্পরিক বোঝাপড়ার অভাব, আর্থিক সমস্যা, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া, বহুমাত্রিক প্রেমের সম্পর্ক, অবিশ্বাস ও  দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতা আত্মহত্যার অন্যতম কারণ বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। আরো বলা হয়েছে, ৬৩ শতাংশই পারিবারিক কলহের জের ধরে আত্মহত্যা করেন।

নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে আত্মহত্যার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি বলেও উল্লেখ করা হয় সদ্য প্রকাশিত রিপোর্টে।

আত্মহত্যার প্রবণতা বন্ধে রিপোর্টে কয়েকটি সুপারিশও করা হয়েছে। আত্মহত্যার মূল কারণ চিহ্নিত করে প্রতিকারের ব্যবস্থা করা, শিক্ষার মান উন্নয়ন, আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন, নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতা বন্ধ করা, আত্মহত্যার উপাদানের সহজলভ্যতা রোধ ও বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের মাধ্যমে আগে থেকেই এর প্রতিরোধের ব্যবস্থা করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে রিপোর্টে।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এবিএম মুকসুদুল আলমের সভাপতিত্বে জরিপ রিপোর্ট প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বেসিক সায়েন্স বিভাগের ডিন অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান।

বক্তব্য রাখেন মনরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মুহিত কামাল, সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সৈয়দ গোলাম মোগনি মাওলা, ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. এএম সেলিম রেজা, মোমিনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক প্রমূখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।