ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

খালেদার সম্পদের উৎস জানতে ইনকাম ট্যাক্স ফাইল দেখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

সিনিয়র করেসপনডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০১০
খালেদার সম্পদের উৎস জানতে ইনকাম ট্যাক্স ফাইল দেখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

ঢাকা : বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়ার অর্থের উৎস এবং তিনি ঠিকমতো কর পরিশোধ করছেন কিনা তা জানতে তার আয়কর ফাইল খতিয়ে দেখতে অর্থমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ৭ম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন।



খালেদা জিয়া তার  ছেড়ে দেওয়া ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে ২৯টি গাড়িতে করে তিনি দামি জিনিসপত্র সরিয়ে নিয়েছেন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতগুলো আইটেমের ট্যাক্স তিনি দিয়েছেন কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় যে যে সম্পদের হিসাব খালেদা জিয়া দিয়েছিলেন, সে সময় সেনানিবাসের বাড়ির জিনিসপত্রের হিসাবও তাতে দিয়েছিলেন কি না, বা দিয়ে থাকলে এসবের সঙ্গে সে হিসাবের সামঞ্জস্য আছে কিনা খতিয়ে দেখতে হবে।

মামলা চলাকালে তিনি আসবাপত্র সরিয়ে নেওয়া শুরু করেন বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। ৩ নভেম্বর ১২টা, ৪ নভেম্বর ৭ ও ৫ নভেম্বর ৯টা গাড়িতে করে মালামাল সরিয়ে নেন। ১৪টা বড় সাইজের কার্ভাড ভ্যানসহ মোট ২৯টি যানবাহনে বিরোধী দলের নেত্রীর মালামাল শনাক্ত করে তার আত্মীয়স্বজন ও কর্মচারীরা সরিয়ে নেন।

এতো সম্পদ, দামি আসবাবপত্র খালেদার নিজের টাকায় কেনা কিনা সে প্রশ্ন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদি নিজের টাকায়ই কেনা হয়ে থাকে তাহলে সেই টাকার উৎস জাতিকে জানাতে হবে, এর জবাব দিতে হবে।

জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর তারা নাকি ভাঙ্গা সুটকেট ও ছেঁড়া গেঞ্জির মালিক ছিলেন, এখন  তারা এত সম্পদ কোথায় পেল জাতি তার জবাব চায়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে উপস্থিত জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে উদ্দেশ্য করে বলেন, সামরিক বাহিনীর সম্পত্তি কলমের এক খোঁচায় ভাবী সাহেবাকে দিয়ে দিলেন। ভাঙ্গা সুটকেট আর ছেঁড়া গেঞ্জির কথা শুনে বিগলিত হয়ে বাড়ি দিয়ে দিলেন। কেন ওই সম্পত্তি দেওয়া হলো জবাবটাও উনার (এরশাদের) কাছে চাই।

শেখ হাসিনা বলেন, বাড়ি নিয়ে হরতাল, মানুষ হত্যা অনেক কিছু হয়েছে। সামরিক বাহিনীর সম্পত্তি সামরিক বাহিনীর হাতে ফিরে যাবে এটাই স্বাভাবিক।

খালেদা জিয়া বাড়ি থেকে কী কী জিনিসপত্র নিয়ে গেছেন তার একটি তালিকা প্রধানমন্ত্রী সংসদে তুলে ধরে বলেন, এ বাইরে আরো কিছু জিনিস তিনি নিতে চান এমন একটি তালিকাও পঠিয়েছেন। এটিও প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ওই বাড়িতে ৪৫টা কামরা, ডজনখানেক বাথরুম। বাসায় ৬৪টা এসি, এলসিডি সহ ২০টা টিভি ১৭ ফ্রিজ, রান্নাঘর ৪টা, ৭১ টি সোফা সেট, ৭ হাজার ২০০ বর্গফুটের কার্পেট মূল্যবান শোপিস নিয়ে গেছেন। এমনকি লাউ গাছ লাগিয়ে তার পাতাও তুলে নিয়ে গেছেন।

আসবাবপত্র সবই দামি বিদেশি জিনিস। খালেদা জিয়া নিজেই বলেছেন ইতালির তৈরি দামি কার্পেট জানালার পর্দা যেন নষ্ট না হয়।

প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, সংসদে ওনার ভাবিসাব (খালেদা জিয়া) নেই, কিন্তু উনি তো আছেন। এভাবে ভাবী সাহেবার পরিবর্তে উনি দায়িত্ব পালন করে গেলে গণতন্ত্র রক্ষা করা কঠিন হবে না।

এরশাদের প্রাদেশিক সরকারের দাবি নাকচ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে এটা ঠিক। প্রদেশ করলে লাভ হবে না। বরং সরকারের খরচ আরো বাড়ছে। মাথা ভারি প্রশাসন বাড়বে। প্রদেশ না করে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা গেলে এসব সমস্যা কেটে যাবে। আমরা সে উদ্যোগ নিয়েছি।

নরসিংদীর ট্রেন দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এরই মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কি করণে এই দুর্ঘটনা ঘটছে তা বেরিয়ে আসবে।


বিরোধী দলকে উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা বলেন, হরতাল ডেকে মানুষকে কষ্ট দেয়ার কোন যৌক্তিকতা নেই॥ বৈরি পরিবেশেও সরকার পরিচালনায় ২৩ মাসে দুর্নাম গুছাতে সক্ষম হয়েছি।

তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্য খুব লাগামহীন তা বলা যাচ্ছে না। মোটা চালের দাম ৩০/৩১ টাকা। উন্নতমানের চালের দাম ৪০ টাকার মত।

বর্তমানে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। আমাদের ২৩ মাস আর বিএনপি জোটের এ সময় তুলনা করা হলে পার্থক্য বোঝা যাবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেণ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। দারিদ্র বিমোচনে আমাদের সফলতার প্রশংসা বিদেশে গেলেই পাই।
যে দেশের মানুষের জন্য আমরা পিতা জীবন দিয়ে গেছেন সেই দেশের মানুষের জন্য আমি কিছু করতে চাই। এজন্য সব বাধা উপেক্ষা করে জনগণের জন্য কাজ করছি।

ইভটিজিং প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাড়াতে হবে, সামাজিক আন্দোলন গতে তুলতে হবে। সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। নারী নির্যাতন প্রতিরোধ আইনকে আরো শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিচ্ছি।

ঢাকার যানজট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে। গাড়ি কিনছে আর ঢাকার যানজট বাড়ছে। আমরা জানজট নিরসনে এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে উড়ালপথ, সাব ওয়ে (মাটির নিচের রাস্তা) নির্মাণের উদ্যোগ নিচ্ছি।

বাংলাদেশ সময় ২২০০ ঘন্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad