ঢাকা: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেওয়া চিঠি আইনসঙ্গত হয়নি। আমি মনে করি, এর মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংক ও আমার প্রতি অন্যায় করা হয়েছে।
শনিবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ড. মুহম্মদ ইউনূস এসব কথা বলেন।
ড. ইউনূস বলেন, আমি আদালতের গিয়েছিলাম সুনির্দিষ্ট কারণে। গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে কোনও ধরনের জবাবদিহিতার সুযোগ না দিয়ে আমাকে অপসারণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পত্রে উল্লেখ করা হয়, ১১ বছর ধরে ওই পদে আমি অবৈধভাবে আছি। এর মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংক ও আমার প্রতি অন্যায় করা হয়েছে বলে মনে করছি। ওই অন্যায়ের প্রতিকারের উদ্দেশ্যে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডের নয় সদস্য ও আমি আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিলাম।
উল্লেখ্য, অনুমোদন না নিয়ে পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার কারণ দেখিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত ২ মার্চ গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব থেকে ড. ইউনূসকে অব্যাহতি দেয়। পাশাপাশি ইউনূসের বয়স নিয়েও সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্যে আপত্তি তোলা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের সদস্যরা হাইকোর্টে গেলে তাতেও ফল হয়নি। হাইকোর্টের রায়ে সরকারি সিদ্ধান্তই বৈধতা পায়।
হাইকোর্ট রিট আবেদন খারিজ করলে রায় স্থগিতের আবেদন নিয়ে গত ৯ মার্চ ড. ইউনূস আপিল বিভাগে আবেদন করেন।
প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ গত ৫ এপ্রিল সে আবেদনও খারিজ করে দেন। পরে লিভ টু আপিল করলে ৫ মে আদালত তাও খারিজ করে দেন।
ড. ইউনূস বলেন, কেউ কেউ বলেছেন, আদালতে না গিয়ে অর্থমন্ত্রী মহোদয়ের অনুরোধ অনুযায়ী বিদায় নিলে আমার সম্মান থাকতো। আমি সেটা মনে করি না। তাতে আমার বিদায় ও গ্রামীণ ব্যাংকের ভবিষ্যতের ক্ষেত্রে একই ফল হতো। বরং আমি এমন একটি আকস্মিক প্রস্তাব মেনে নিয়ে অসংখ্য কর্মী ও ঋণগ্রহীতার পরিবারকে স্বেচ্ছায় অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিলে আমি নিজের কাছে নিজে অপরাধী হয়ে থাকতাম। সেটি আমি সজ্ঞানে করতে পারিনি।
ড. ইউসূস বলেন, গত কয়েক মাস ধরে আমার বিরুদ্ধে, গ্রামীণ ব্যাংকের বিরুদ্ধে এবং ক্ষুদ্র ঋণের ধারণার বিরুদ্ধে বিস্তর লেখালেখি হচ্ছে। আমার, দেশবাসীর ও বিশ্বসমাজের উদ্বেগের কারণ এখানেই। এই উদ্বেগ আমার জন্য যতটা নয়, তারচেয়ে অনেক বেশি গ্রামীণ ব্যাংক ও তার কোটি ঋণগ্রহীতার ভবিষ্যতের জন্য। আমি বলছি, চলমান দ্বন্দ্বের আবহাওয়ায় গ্রামীণ ব্যাংকের নেতৃত্ব পরিবর্তনের উদ্যোগ নিলে প্রতিষ্ঠানটির জন্য অমঙ্গল বয়ে আনতে পারে। আমার বরাবর আশা, একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ যৌক্তিক পরিবেশে গ্রামীণ ব্যাংকের নেতৃত্ব পরিবর্তন হওয়া উচিত। রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে ভবিষ্যতে গ্রামীণ ব্যাংকের মতো একটি প্রতিষ্ঠান তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবে কি-না, সফল হতে পারবে কি-না, সাফল্য ধরে রাখতে পারবে কি-না, এগুলো এখন প্রশ্ন হিসেবে দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক প্রভাবের ছায়া পড়লে আমাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কী অবস্থা হয়, তা সবার জানা। আর গ্রামীণ ব্যাংক চলে বিশ্বাস ও আস্থার উপর নির্ভর করে।
বাংলাদেশ সময়: ২২৩৯ ঘণ্টা, মে ০৭, ২০১১