ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘ফরিদরে খুঁইজা বাইর কর, ওর পাসপোর্ট হইয়া গেছে’

মহিউদ্দীন জুয়েল, স্টাফ করেসপন্ডেট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০১০
‘ফরিদরে খুঁইজা বাইর কর, ওর পাসপোর্ট হইয়া গেছে’

নরসিংদী থেকে ফিরে: রাত সাড়ে নয়টা। জেলা হাসপাতালের বারান্দায় লোকজনের ছুটোছুটি।

জটলা। জটলা এড়িয়ে চোখ গেল হাসপাতালের এক কোণে। বোরখা পরা দুই নারী কাঁদছেন। অঝোরে।

ভাই হারানোর বেদনা ভুলতে কখনও তারা দেয়ালে মুখ গুঁজে চোখ মুছছিলেন।

‘আপনাদের কেউ আহত হয়েছেন বা মারা গেছেন ?--এ প্রশ্নে কান্না থামিয়ে হালিমা আক্তার বললেন, ‘আমার একটা ভাই মারা গেছে। আরেকটা ভাইয়ের চোখ খুইলা পইড়া গেছে। সে ব্যাদ্নায় কাতরাইতেছে। ’

এবার আলেয়া আক্তার নামের অন্য নারী বলে ওঠেন, ‘ভাই জানেও না যে বড় ভাই মারা গেছে। ও খালি কয়, আমার আরেক ভাই কই? ওর বিদেশ যাওনের পাসপোর্ট ঠিক হইছে। ওরে ডাকো। ’

হালিমা বাংলানিউজকে জানান, ফরিদ  সরকার ও মোহাম্মদ সরকার তাদের দুই ভাই। তাদের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার বড়িশ্বর এলাকায়। বড় ভাই ফরিদ সরকারের ওমানে যাওয়ার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছিল। পার্সপোটও হয়ে গেছে তার। বাকি ছিল  স্বাস্থ্যপরীক্ষা।

বুধবার সেই স্বাস্থ্যপরীক্ষা করাতেই ঢাকা গিয়েছিলেন। স্বাস্থ্যপরীক্ষা করিয়ে মহানগর গোধূলীতে চড়ে দু’ভাই আনন্দিত মনে বাড়ি ফিরছেলেন।

কিন্তু সব আনন্দ কেড়ে নিল ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা। নরসিংদী সদর রেলস্টেশনে মুখোমুখি দুই ট্রেনের সংর্ঘষে মারা যান ফরিদ সরকার।

গুরুতর আহত মোহাম্মদ সরকারকে নরসিংদী ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করেন লোকজন। এরপর তার জ্ঞান ফিরলে তিনি এক চিকিৎসকের মাধ্যমে গ্রামের দু’ বোনের কাছে মোবাইল ফোনে বড় ভাইকে খুঁজতে বলেন।

খবর পেয়ে দুই বোন হালিমা ও আলেয়া দ্রুত হাসপাতালে ছুটে আসেন। ছুটে এসে দেখতে পান বড় ভাই ফরিদ ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। হাসপাতালের মর্গে তার লাশ পড়ে রয়েছে।

অন্যদিকে, মোহাম্মদেরও জীবন সংশয় কাটেনি। ডান চোখ তিনি হারিয়েছেন। মাঝে মাঝেই তিনি মূর্ছা যাচ্ছেন। জ্ঞান ফিরেই দেখতে চাইছেন বড় ভাইকে।

কিন্তু হালিমা-আলেয়ারা বড় ভাইয়ের মৃত্যুর সংবাদ কেমন করে দেবেন ছোট ভাইকে?

আলেয়া বলেন, ‘ফরিদের লাইগা জমি বিক্রি করছিলাম। ওরা দুইডা ভাই রাজমিস্ত্রির কাজ করে। ভাবছিলাম ফরিদ যদি ওমানে যাইতে পারে তাইলে আমাগো অভাব অনেক দূর হইবো। এখন সব শেষ। ওর দুইডা ছোট ছোট মাইয়া আছে। একটা কেলাশ টুতে। আরেকটা ওয়ানে। কেডা দেখবো ওগোরে? কে চালাইবো? জবাব দেন...’

ভেতর থেকে তখন মোহাম্মদের চিৎকার ভেসে আসে, ‘ফরিদরে খুঁইজা বাইর কর, ওর পাসপোর্ট হইয়া গেছে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ