ঢাকা: বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও খাতের মধ্যে পুলিশ বিভাগ সর্বাধিক দুর্নীতিগ্রস্ত। এর পরের অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক দল ও বিচার বিভাগ।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআইবি) এক সমীক্ষায় এ চিত্র বেরিয়ে এসেছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার অডিটোরিয়ামে এই সমীক্ষা প্রতিবেদনের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনটি পড়ে শোনান টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম হাফিজ উদ্দিন খান, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ এবং টিআইবির কর্মকর্তারা।
সংস্থাটির ‘গ্লোব্যাল করাপশন ব্যারোমিটার’ শীর্ষক ওই জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী উত্তরদাতাদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৮ জন রাজনৈতিক দলসমূহকে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত বলে মত দিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশে প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৮ জন পুলিশ বাহিনীকে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত বলে মনে করেন।
এছাড়া বিশ্বব্যাপী ১০ জনের মধ্যে ৬ জন এবং বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ১০ জনের মধ্যে ৭ জন উত্তরদাতা জনপ্রশাসনকে দুর্নীতিগ্রস্ত খাত হিসেবে মত দিয়েছেন। বিচার বিভাগের দুর্নীতি সম্পর্কে বিশ্বের ও বাংলাদেশের নাগরিকরা একই মত পোষণ করেন। তাদের মতে, গড়ে ১০ জন উত্তরদাতার মধ্যে ৪ জন মনে করেন এই খাত দুর্নীতিগ্রস্ত।
এই জরিপে তথ্যদাতা নাগরিকদের রাজনৈতিক দল, জনপ্রশাসন, শিক্ষা ব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ,
সংসদ/আইনসভা, গণমাধ্যম, বেসরকারি খাত, সামরিক বাহিনী, এনজিও এবং ধর্মীয় সংগঠন- এই ১১টি খাতে দুর্নীতির মাত্রা চিহ্নিত করতে বলা হয়েছিলো।
বাংলাদেশ ও বিশ্বের ৮৬টি দেশের ৫১ হাজারের বেশি মানুষের উপর পরিচালিত এই জরিপে সাধারণ ঘুষ, জন-প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি সম্পর্কে জনধারণা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে জনগণের আস্থা কোন প্রতিষ্ঠানের ওপর কতটুকু- এ সংক্রান্ত তথ্য উঠে এসেছে।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বেশিরভাগ মানুষই দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারি নেতৃত্বের ভূমিকার উপরই বেশি নির্ভরশীল। বাংলাদেশে প্রতি ৫ জনের মধ্যে ৩ জনই এ আস্থার পক্ষে মত দিয়েছেন।
জরিপ অনুযায়ী, ২০০৪ ও ২১১০ এর তুলনামূলক বিশ্লেষণে রাজনৈতিক দলগুলোর দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়ার মাত্রা আগের চেয়ে বেড়েছে। বিশ্বব্যাপী জরিপে গড়ে প্রায় ৫০ শতাংশ উত্তরদাতা ধর্মীয় সংগঠনগুলোকে দুর্নীতিগ্রস্ত বললেও বাংলাদেশে মাত্র ৯ শতাংশ উত্তরদাতা এ কথা বলেছেন।
এছাড়া বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনী, শিক্ষা ব্যবস্থা ও গণমাধ্যমের দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়ার মাত্রা বেশ কম (২০ শতাংশের নিচে)।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বে সর্বাধিক ২৯ শতাংশ উত্তরদাতা পুলিশকে সবচেয়ে বেশি ঘুষগ্রহীতা হিসাবে উল্লেখ করেছেন। বাংলাদেশেও এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে পুলিশ। বাংলাদেশের শতকরা ৭৫ জনই এর পক্ষে মত দিয়েছেন।
গত ১২ মাসে ৯টি খাতে মৌলিক সেবা নিতে গিয়ে ঘুষ দিতে হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে এ হিসেব বেরিয়ে এসেছে।
এছাড়া বাংলাদেশে গড়ে ১০ জনে প্রায় ৭ জন (৬৪ শতাংশ) বিচার বিভাগ এবং ১০ জনে ৫ জন ভূমি প্রশাসনে ঘুষ দেওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। আর কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছেন- সেবা পেতে সমস্যা এড়ানো, ন্যায্য ও দ্রুত সেবা পাওয়ার জন্য।
প্রতিবেদনের উপসংহারে দুর্নীতি প্রতিরোধে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অপরিহার্যতার কথা বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০১০