ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

খালেদার করা আদালত অবমাননা মামলা খারিজ

জাকিয়া আহমেদ,স্টাফ করেপসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০১০
খালেদার করা আদালত অবমাননা মামলা খারিজ

ঢাকা: প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন ৩ সদস্যের আপিল বিভাগ বুধবার খালেদা জিয়ার দায়ের করা আদালত অবমাননার মামলা উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দেন।

আদালতের আদেশের পর রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তার নিজ কক্ষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোনও সরকারি সম্পত্তি দেওয়ার ব্যাপারে যার যা ইচ্ছা তা কেউ করতে পারে না।


 
তিনি আরও বলেন, ‘গত ২৯ নভেম্বর খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আদালতের সামনে ৯০ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকেও কোনও আবেদন উত্থাপন করতে পারেননি। ’
 
অন্যদিকে বুধবার একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত ‘আপিল বিভাগের প্রতি খালেদা জিয়ার অনাস্থা’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদকে সঠিক নয় বলে মন্তব্য করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আদালতের সামনে তারা এ রকম কোনও কিছু উপস্থাপন করেননি, প্রতিবেদক যেটা লিখেছে সেটা সঠিক নয়। ’

তিনি আরও বলেন, ‘আদালতের সামনে যেটা উপস্থাপন করা হয় নাই, তখন এ ধরনের লেখা সঠিক হয় নাই। কোর্টের সামনে যেটি পেশ করা হয় নাই, সেটি হাইলাইট করা ঠিক হয় নাই। ’

মাহবুবে আলম বলেন, ‘টি এইচ খান এবং ব্যারিস্টার রফিক উল হক যে বিষয়টি পেশ করলেন না সেটি আদালতের বিচার্য বিষয় ছিল না। ’
 
তবে ব্যারিস্টার রফিক উল হক বলেন, ‘আপিল বিভাগের প্রতি খালেদা জিয়ার অনাস্থার বিষয়টি করা হয় নাই। ২৯ নভেম্বরে আপিল বিভাগের সামনে দাঁড়িয়ে আমি বলেছিলাম, আমাদের আরেকটি পিটিশন আছে। তবে আমি সেটা শুনানি করব না, মওদুদ আহমদ করবেন। ’

গত ২৯ নভেম্বর ব্যারিস্টার রফিক উল হক আপিল বিভাগে শুনানিকালে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘আমাদের একটি পিটিশন আছে, কিন্তু পিটিশনটির শুনানি আমি করবো না। ’

জানা গেছে, পিটিশনটির শুনানি করতে খালেদা জিয়ার অপর আইনজীবী টি এইচ খানও অস্বীকৃতি জানান।

ওই দিন রফিক উল হক বলেছিলেন, ‘আই অ্যাম ফিলিং অ্যামবারাস’।

এরপরই মওদুদ আহমদ পিটিশনটির শুনানির জন্য আবেদন জানাতে উঠলে তাকে প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, ‘মি. আহমদ, সিট ডাউন’।

এরপর একজন বিএনপিপন্থি আইনজীবী ‘হোয়াট’ বলে উঠলেই আপিল বিভাগে দু’পক্ষের চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হয়।
 
বুধবার ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, খালেদা জিয়ার লিভ টু আপিলের শুনানি করা আপিল বিভাগের উচিত হয় নাই।

তিনি বলেন, ‘গত ২৮ নভেম্বর ২৯ তারিখের লিভ টু আপিলের শুনানির বিষয়টি কার্যতালিকা থেকে বাদ  দেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করেছিলাম। কিন্তু আমি যখন বিষয়টি শুনানির জন্য উঠে দাঁড়াই তখন প্রধান বিচারপতি আমাকে বসিয়ে দিয়েছেন। ’

‘সেদিন প্রধান বিচারপতি যখন মূল শুনানির আগে আর কোনও আবেদনের শুনানি গ্রহণ করবেন না বলে জানান, তখন আমরা আবেদনটি শুনানি থেকে বঞ্চিত হই। ’ বলেন মওদুদ।
 
ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে এই বাড়িটি দেওয়া হয়েছিল দেশের জন্য তার স্বামী শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অবদানের জন্য। ’
 
আপিল বিভাগের প্রতি খালেদা জিয়ার অনাস্থার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘২০০৫ সালে ২৯ আগস্ট পঞ্চম সংশোধনী রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। সেই রায়ে বর্তমান প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, জিয়ার ক্ষমতা দখল ছিল অবৈধ এবং তার অপরাধ রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল। হাইকোর্টের সেই রায় আপিল বিভাগ বহাল রাখেন। সেই আপিল বিভাগে বর্তমান আপিল বিভাগের দুই বিচারপতি এস কে সিনহা এবং সৈয়দ মোজাম্মেল হোসেন। তাই খালেদা জিয়ার আবেদনে বলা হয়েছে বর্তমান প্রধান বিচারপতি এবং দুই বিচারপতি থাকলে তিনি সুবিচার পাবেন না। ’

ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, ‘মূল আপিল শুনানির ক্ষেত্রে এত তাড়াহুড়ো করার কী প্রয়োজন ছিল তা এখনও আমার কাছে বোধগম্য নয়। বিনা শুনানিতে এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ আপিল খারিজ করে দেওয়া নজীরবিহীন ঘটনা। ’
 
প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের প্রতি অনাস্থা থাকলে লিভ টু আপিল কেন করলেনÑএমন প্রশ্নের জবাবে জনাব মওদুদ বলেন, ‘আপিল বিভাগে আজকে যারা বিচারপতি আছেন, আগামী দিনে তারা নাও থাকতে পারেন। ’

সুপ্রিম কোর্টের উত্তর হলে সংবাদ সম্মেলনে তিনি আজ এসব কথা বলেন।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিঞাসহ বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।
অপরদিকে ব্যারিস্টার মওদুদের সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘টি এইচ খান, রফিক উল হক এ ধরনের কোনও অভিযোগ করেননি। এক দিন শুনানি করে কী করে ব্যারিস্টার মওদুদ এই অভিযোগ করেন? এটা উদ্দেশ্য প্রণোদিত। ’

তিনি আরও বলেন, সংশ্লিষ্ট শাখায় ফাইল খুললেই হয় না, মামলা নথিভুক্ত হতে হয়। উপস্থাপন করতে হয় শুনানির জন্য। জনাব মওদুদের অভিযোগ হাস্যকর।

মাহবুবে আলম বলেন, ‘আদালতের প্রতি তাদের অনাস্থা থাকলে তারা ১০ তারিখেই জানাতে পারতেন। ’
 
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।