ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

হরতালে মারমুখী পুলিশের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি বিএনপি

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১০
হরতালে মারমুখী পুলিশের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি বিএনপি

ঢাকা: পুলিশের ব্যাপক ধরপাকড়ের মধ্য দিয়ে মঙ্গলবার রাজধানীসহ সারাদেশে পালিত হয়েছে প্রধান বিরোধীদল বিএনপির সকাল-সন্ধ্যা হরতাল। হরতালের কারণে দূরপাল্লার যান চলাচলে বিঘ্নে ঘটলেও নৌ, রেল ও আকাশপথে এর তেমন কোনো প্রভাবই চোখে পড়েনি।

কিছু কিছু দোকানপাট খুললেও বেশিরভাগই ছিল বন্ধ। পুঁজিবাজারে স্বাভাবিক লেনদেন হয়েছে। হরতাল চলাকালে পুলিশ রাজধানীতে ৭১ জনকে গ্রেপ্তার করে।

এদিন কাকডাকা ভোরে হরতাল সমর্থকরা রাস্তায় নামার আগেই নগরীর বেশিরভাগ সড়কে অবস্থান নেয় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। নয়াপল্টনের বিএনপি কেন্দ্রীয় অফিস ঘিরে রাখা ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে তারা ছিল বেশ মারমুখী। হরতাল চলাকালে সমর্থকরা একটি বাস ও সিএনজি অটোরিকশায় আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া হরতালের শেষ মুহূর্তে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় নয়া পল্টনে তিনটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি।

বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি ১১৯৩ তম হরতাল।

দ্রব্যমূল্য, আইনশৃঙ্খলা, বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন, ট্রানজিট চুক্তি বাতিল, সেনানিবাসের বাড়ি থেকে খালেদা জিয়াকে উচ্ছেদ, তার দুই ছেলেসহ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারসহ ১২ দফা দাবিতে বিএনপি মঙ্গলবার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয়।

প্রত্যদর্শীরা জানান, বিকেল ৩ টার দিকে সূত্রাপুর থানার বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে ইউনাইটেড পরিবহনের মিরপুর-সদরঘাট রুটের একটি যাত্রীবাহী বাসে কয়েক যুবক আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যায়। পরে দমকল কর্মীরা আগুন নেভায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বেলাল নামে একজনকে আটক করে। সূত্রাপুর থানার ওসি নজরুল ইসলাম জানান, আগুন ধরানোর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বেলালকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গাড়িটিতে আগুন ধরানোর সময় কোনো যাত্রী না থাকায় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিএমপি,বিডি) মনিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, হরতাল চলাকালে পুলিশ রাজধানীতে ৭১ জনকে গ্রেপ্তার করে। এর মধ্যে পল্টন থানায় ৩৫ জন, কোতয়ালী থানায় সংবাদ কর্মীসহ ১২ জন, গুলশানে ১০ জন, ধানমণ্ডিতে ৫ জন, সবুজবাগে ৩ জন, শাহবাগে ৩ জন, যাত্রাবাড়ীতে ১ জন এবং উত্তরা থানায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে বিএনপির নারী কর্মীরা মিছিল বের করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এসময় পুলিশের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে।

বেলা তিনটার কিছু পর র‌্যাব-৩ এর একটি টহল দল খালেদার জিয়ার আইনজীবী ও সাবেক সাংসদ ফেরদৌস আক্তার ওহায়িদা এবং সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী আরিফা জেসমিনসহ চারজনকে নয়া পল্টন থেকে আটক করে।  

এছাড়া সোয়া ২টার দিকে জাতীয়তাবাদী যুব আইনজীবী ফোরামের সভাপতি ড. গোলাম রব্বানিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। দুপুর ১২টার দিকে সাংসদ নিলুফার চৌধুরী ও সাবেক সাংসদ হেলেন জেরিন খানসহ চারজনকে আটক করা হয়।

এছাড়া বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। মহাখালীতে বিএনপি নেতা হান্নান শাহ্ লাঞ্ছিত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন দলীয় নেতাকর্মীরা।

এদিকে রাজধানীর টিকাটুলির জয়কালী মন্দিরের কাছে বিকেল সোয়া তিনটার দিকে সিএনজি অটোরিকশা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

আমাদের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট শরিফুল ইসলাম জানান, ৪/৫ জন যুবক কাকরাইল যাওয়ার কথা বলে সিএনজি অটোরিকশাকে থামায়। চালক অটোরিকশা থামালে তারা পেট্রোল ঢেলে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এসময় পুলিশ এগিয়ে এলে যুবকরা পালিয়ে যায়।

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট মান্নান মারুফ জানান, হরতালের পুরো সময় নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয় ঘেরাও করে রাখে পুলিশ। সামনে গেলেই নেতাকর্মীদের আটক করা হয়। রাজনৈতিক কর্মী ছাড়াও সাধারণ কেউ ওই এলাকায় ঢুকে পড়লে তাদেরও আটক করা হয়।
 
বিএনপির মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের জানান, আগের হরতালে নেতাকর্মীরা মিছিল করতে পারলেও এবার তা করা যাচ্ছে না। পুলিশ বাধা দিয়ে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করেছে।

বিরোধীদলীয় চিপ হুইপ জয়নুল আবদীন ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, ‘সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মী যেখানেই রাস্তায় নামছে, সেখানেই পুলিশ বাধা দিয়েছে। মিছিলতো দূরের কথা পুলিশ নেতাকর্মীকে রাস্তায় নামতে দেয়নি। ’

এর আগে সকাল সোয়া সাতটার দিকে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের একদল নেতাকর্মী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে মিছিল বের করার চেষ্টা করলে তাদেরকে ঘিরে ফেলে পুলিশ। বাধা উপো করে মিছিল নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের লাঠিপেটা শুরু করে। এসময় সেখান থেকে আটক করা হয় জাতীয়তাবাদী মৎসজীবী দলের সভাপতি মাহতাব হোসেনসহ ২৪ জনকে।

আমাদের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট রহমান মাসুদ জানান, মহাখালীতে সকাল সাড়ে ১০টায় পুলিশের সঙ্গে বিএএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার (অব.) হান্নান শাহ্র সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়েছে। এসময় পুলিশ দু’জনকে আটক করে।

মহাখালী সিটিসেল অফিসের সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় হান্নান শাহ্র সঙ্গে পুলিশের কথা কাটাকাটি হয়। এর একপর্যায়ে পুলিশ তার খালাতো ভাই খন্দকার জানে আলম ও বডিগার্ড মো. জুয়েলকে আটক করে।

হান্নান শাহ্ সাংবাদিকদের বলেন, ‘পুলিশ আমাকে থাপ্পর মেরেছে। ’

সকাল পৌনে ১০টায় মহাখালী বনভবনের সামনে থেকে হরতাল সমর্থকরা মিছিল বের করার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইট-পাটকেল নিেেপর ঘটনা ঘটে। পুলিশের মারমুখি তৎপরতার মুখে একপর্যায়ে পিকেটাররা পালিয়ে যায়।

মিরপুর থেকে স্টাফ করেসপন্ডেন্ট মহিবুব জামান জানান, মিরপুর ১, ২, ১০ নম্বরসহ শেওড়াপাড়ায় যানবাহন চলাচল যাত্রীর অপোয় সময় পার করছেন।

পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাকের আহমেদ বাংলানিউজকে জানান, মিরপুর-১০ থেকে হরতাল সমর্থকদের কোনো মিছিল বের হয়নি। যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। সকাল সাড়ে ১০টার পর বিভিন্ন দোকান খুলতে শুরু করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে সকাল ১০ টার দিকে ছাত্রদলকর্মী সন্দেহে পুলিশ মাহমুদুল ইসলাম ও নিজাম উদ্দিন নামে দুই ছাত্রকে আটক করে।

এদিকে, হরতালের কারণে দুর্ভোগে পড়েন হজ যাত্রীরা। পবিত্র হজ পালন করে দেশে ফিরে অনেকেই বিমানবন্দরে আটকা পড়েন ।

মঙ্গলবারের হরতালকে কেন্দ্র করে সোমবার রাতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ-ধরপাকড় আর হরতালের পে বিপে মিছিলকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার রাতে হরতালের সমর্থনে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ট্যাক্সিক্যাব, বাস, পিকআপসহ ১৩টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ভাঙচুর করা হয় কমপে ১০টি গাড়ি।

এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে ও শাহবাগ মোড়সহ কয়েকটি জায়গায় ককটেলের বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

হরতালে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ, আনসার ও র‌্যাবসহ আইন-শৃখলা বাহিনীর ১২ হাজার সদস্য রাজধানীতে মোতায়েন ছিল।

বর্তমান মহাজোট সরকারের আমলে ডাকা এটি সপ্তম হারতাল। একই সঙ্গে ২০০৯ সালের ৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের আমলে এটি হচ্ছে বিরোধী দল বিএনপি’র দেশব্যাপী ডাকা তৃতীয় দফা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল।

এ বছরের ২৭ জুন মহাজোট সরকারের আমলে প্রথম সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছিল বিএনপি। তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট, ভারতের সঙ্গে অসম চুক্তি, টেন্ডার-দখলবাজী, বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার-আটক ও জুলুম-নির্যাতনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে এ হরতাল ডাকা হয়েছিল।

বাংলাদশে সময়: ১৮০১ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।