ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের খুটিনাটি

গার্ডিয়ান অবলম্বনে এহেছান লেনিন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১০
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের খুটিনাটি

ঢাকা: মেক্সিকোর কানকুনে সোমবার শুরু হয়েছে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন ২০১০। বিশ্বের ১৯৪টি দেশের প্রতিনিধি এ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন।

তবে সবচেয়ে বড় বিষয় কেন এই সম্মেলন, কি বিষয় নিয়ে বিশ্বনেতারা এখানে আলোচনা করবেন- তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গার্ডিয়ান অবলম্বনে সেই বিষয়গুলোই তুলে আনা হয়েছে।  

জলবায়ু পরিবর্তন কি এবং কেন এটি সম্পর্কে আমাদের সচেতন হওয়া উচিত?

বৈশ্বিক জলবায়ু প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। আর এ কারণেই জলবায়ু পরিবর্তনকে আমরা বিশ্লেষণ করি- মানুষের কারণে যে পরিবর্তন হচ্ছে সেই বিষয়টিকে। বিশেষকরে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ যেমন কার্বন ডাই অক্সাইড ও মিথেন গ্যাস নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার জন্য মানুষই দায়ী। আর এই গ্যাসের কারণে পৃথিবী আরও উষ্ণ হচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তন এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কি একই বিষয়?

মানুষের কর্মকাণ্ডের কারণে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইড ও মিথেনের মতো গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে যায়, এর সঙ্গে পৃথিবীর তাপমাত্রাও বাড়তে থাকে। এ কারণে ‘জলবায়ু পরিবর্তন’ ও ‘বৈশ্বিক উষ্ণায়ন’ প্রতিস্থাপনযোগ্য দুটি শব্দ।

এই বিষয়টি কি প্রাকৃতিক কারণ দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব?

পরিসংখ্যানে দেখা যায় ১৯৭০ সাল থেকে প্রতিবছর দশমিক চার ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড হারে ভূ-পৃষ্ঠের তাপমাত্রা বাড়ছে। মনুষ্য সৃষ্ট গ্যাস নিঃসরণের কারণে এ বৃদ্ধির হার এতোটাই বেশি যে এটি ব্যাখ্যাতীত।

অতীতে সূর্যের পরিবর্তন এবং আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের মাধ্যমে পৃথিবী কখনো ঠাণ্ডা কখনো উষ্ণ হয়েছে। তবে এসব পরিবর্তন বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে ব্যাখ্যার জন্য যথেষ্ট নয়। শুধু গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ যা পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়াচ্ছে এবং বায়ুমণ্ডলকে ক্রমশই উত্তপ্ত করে তুলছে যা ব্যাখ্যা করা সম্ভব।

গ্রিন হাউস গ্যাস কি?

বায়ুমণ্ডলে জলীয়বাস্পের উপস্থিতি সবচেয়ে কঠিনতর গ্রিন হাউস প্রভাবের মূল কারণ। তবে কোটি কোটি বছর ধরে এই ভারসাম্য বজায় রয়েছে।

কার্বন ডাই অক্সাইডই গ্রিন হাউস গ্যাসের মধ্যে অন্যতম যা মনুষ্যসৃষ্টি। আমরা যখন জীবাশ্ম জ্বালানি যেমন তেল, গ্যাস ও কয়লা পোড়াই তখনই এই গ্যাস নিঃসৃত হয় যা ভূপৃষ্ঠের তাপ আটকে রেখে উষ্ণতা বাড়িয়ে তোলে। এর মাত্রা মাপা হয় পার্টস পার মিলিয়ন এককে। সংক্ষেপে পিপিএম।

শিল্প বিপ্লবের আগে বায়ুমণ্ডলে কার্বনের পরিমাণ ছিল ২৮০ পিপিএম যা বর্তমানে ৩৮৬ পিপিএম। আর প্রতিবছর এটি বৃদ্ধি পাচ্ছে ২-৩ পিপিএম হারে। এর সঙ্গে মিথেন যোগ হলে বায়ুমণ্ডলে মোট কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৪০ পিপিএম।

পৃথিবীর ভবিষ্যত তাপমাত্রা কত হবে বলে আশঙ্কা করা হয়?

বিজ্ঞানীরা বলছেন, চলমান নিঃসরণ মানুষের বসবাস উপযোগী এই গ্রহকে আরও উষ্ণ করে তুলবে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, চলমান হারে উষ্ণতা বাড়তে থাকলে আগামী একবিংশ শতক শেষে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি বাড়বে।

অধিক তাপমাত্রা পৃথিবীর জন্য কেন খারাপ?

বেশিরভাগ উদ্ভিদ ও প্রাণী একটি সংকীর্ণ জীবপরিবেশগত বাতাবরণের মধ্যে নিজেদের বন্দি করে ফেলেছে। কেউ কেউ তার প্রয়োজনীয় পরিবেশ খুঁজে নিতে স্থানান্তরিত হয়েছে, আবার অন্যরা অভিযোজিত হয়েছে। যারা অভিযোজিত কিংবা পরিবর্তিত হতে পারেনি তারাই ধ্বংস হয়ে গেছে।  

উষ্ণ জলবায়ু কৃষি ও পানির প্রাপ্যতায় প্রভাব ফেলবে। এছাড়া তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে বৃষ্টির মাত্রা কমতে থাকবে এবং কোনো কোনো স্থানে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের হার বেড়ে যাবে। অন্যদিকে বেড়ে যাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। যে কারণে পশ্চিম মেরুর বরখ গলতে শুরু করবে।

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কিভাবে রোধ করা যায়?

গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ বন্ধ করাই এই উষ্ণায়ন রোধের একমাত্র উপায়।

কিওটো প্রটোকল কি?

জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন কাইমেট চেঞ্জ (ইউএনএফসিসি) এর সঙ্গে যুক্ত একটি প্রটোকল। ওই ফ্রেমওয়ার্কে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। এতে শিল্পোন্নত দেশগুলো তাদের সম্মিলিত নিঃসরণের পরিমাণ ২০০৮ থেকে ২০১২ এ পাঁচ বছরে ১৯৯০ সালের পর্যায় থেকে ৫ দশমিক ২ শতাংশ কমিয়ে আনতে সম্মত হয়েছিল।

বিশ্বের সরকারগুলো ১৯৯৭ সালে জাপানের কিওটোতে এক জাতিসংঘ সম্মেলনে এ ব্যাপারে সম্মত হয়। কিন্তু ২০০৫ সালের আগে তা আইনগতভাবে অবশ্যপালনীয় হতে পারেনি।

নবায়নযোগ্য জ্বালানি এ ধরিত্রি রক্ষায় কিভাবে সাহায্য করতে পারে?

জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক জাতিসংঘের আন্তঃদেশীয় প্যানেল বলছে কার্বন নিঃসরণ পর্যায়ক্রমে কমিয়ে আনার জন্য আমাদের যা দরকার এর সব ধরনের প্রযুক্তিই আমাদের আছে। এরমধ্যে আছে বায়ুকল, জিউথারমাল, সৌর প্যানেল।

‘কার্বন বাণিজ্য’ বিষয়টি কি?

কার্বন নিঃসরণের হার হ্রাসে কার্বন বাণিজ্য একটি কৌশলমাত্র। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো প্রথমে সর্বোচ্চ নিঃসরণ হারের মাত্রা নির্ধারণ করে। এরপর কার্বন নিঃসরণের মাত্রা হিসেব করে প্রতিটি কোম্পানি কার্বন ক্রেডিট কিনে বা বিক্রি করে। কোনো কোম্পানি যদি তার কার্বনসীমা অতিক্রম করে সেক্ষেত্রে তাকে অন্য কোম্পানি থেকে ক্রেডিট কিনতে হবে। অর্থ্যাৎ কার্বন নিঃসরণ কম করে এমন কোম্পানিকে তার অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণের জন্য অর্থ প্রদান করতে হবে। যদি কার্বন নিঃসরণের মাত্রা অনেক বেশি হয়ে যায় সেক্ষেত্রে ওই কোম্পানিকে নিঃসরণ হ্রাসের ব্যবস্থা করতে হবে।

কার্বন অফসেটিং কি?

বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড কমিয়ে ফেলার প্রচেষ্টায় অংশ নিয়ে বা অর্থ যুগিয়ে নিজের নিঃসরণের তিপূরণের একটি ব্যবস্থা।

অনেক সময় কার্বন অফসেটিং প্রক্রিয়ার আওতায় নিজের নিঃসৃত কার্বনের সমপরিমাণ নিঃসরণ ঠেকাতে অন্যত্র অন্য  কোনো পকে অর্থ দেওয়া হয়।

 

বাংলাদেশ সময়: ২২২৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad