ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

জাবিতে বৃক্ষ নিধন: ‘অশিক্ষিতের মতো আচরণ’

ওয়ালিউল্লাহ, জাবি প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১০
জাবিতে বৃক্ষ নিধন: ‘অশিক্ষিতের মতো আচরণ’

জাবি: সম্প্রতি একের পর এক বৃক্ষ নিধন চলছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। উপাচার্য বলছেন গাছ নয়.. আগাছা কাটা হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে শহীদ মিনার দেখা যাওয়ার ব্যবস্থা বলে যুক্তিও দিয়েছেন তিনি।

বিশিষ্ট জনদের মতে এটা অশিক্ষিতের মতো আচরণ। পরিবেশবাদী থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা একে তুলনা করছেন বর্বরতা হিসেবে।

এরই মধ্যে শনিবারের কাটা হয়েছে নতুন আরও ১০টি গাছ।
 
এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির নিজের অবস্থানেই অনড় থাকেন।

শনিবার তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক থেকে শহীদ মিনার দৃষ্টিগোচর হওয়া এবং সড়কের আইল্যান্ডে শোভাবর্ধক গাছ লাগানোর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এসব গাছ কর্তন হয়েছে। ’

তবে তার এ যুক্তি মানতে নারাজ বিশিষ্ট জনরা।

গাছ কেটে শহীদ মিনার দেখা যুক্তিযুক্ত কি-না এমন প্রশ্নে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা ) সাধারণ সম্পাদক ডা. আব্দুল মতিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘শহীদ মিনার এত সস্তা বিষয় নয় যে গাছ কেটে এটি দেখাতে হবে। ’

তিনি আরও বলেন, ‘শহীদ মিনার দেখানোর বিষয় নয়, মন থেকে শ্রদ্ধার বিষয়। শহীদ মিনার ভালোভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাই হলো বড় শ্রদ্ধা। একটি গাছের আড়ালে শহীদ মিনার থাকলে এর মর্যাদা কমে  যায় না। ’

গাছ কেটে শহীদ মিনার দেখানোর বিষয়টি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এ ব্যাপারে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘নিউজটা যখন পড়েছি, তখন আমার কাছে খারাপই লেগেছে। আচরণটা আমার কাছে অশিক্ষিতের মতো মনে হয়েছে। ’

একই অভিমত পোষণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও ছাত্রফন্টের জাবি শাখার সাবেক দপ্তর সম্পাদক শশাঙ্ক বরণ রায়।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রশাসন যে যুক্তি দেখাচ্ছে সেটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। বিশ্ববিদ্যালয় হলো একটি পরিবারের মতো। যেখানে পরিবারের বেশির ভাগ সদস্য গাছ কাটার বিপক্ষে সেখানে প্রশাসনের এ কাজটি নিশ্চয় নিন্দনীয় কাজ। এজন্য প্রশাসনকে জবাবদিহি করতে হবে। ’

বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীরা গাছ কাটার পুরো বিষয়টিকেই দেখছেন বর্বরতা হিসাবে। এ নিয়ে তারা আন্দোলন কর্মসূচিও ঘোষণা করেছেন।
‘স্ট্রিট পেইন্টিং’র মাধ্যমে শহীদ মিনারের চারপাশের রাস্তায় বৃক্ষ নিধনের পুরো ব্যাপারটিকে বর্বরতা হিসাবে ফুটিয়ে তুলেছেন নৃবিজ্ঞানের ৩৩ ব্যাচের ছাত্র তানভীর শাকিল, প্রাণীবিজ্ঞানের বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্রী স্মৃতি সিংহ রায়, গণিত প্রথম বর্ষের ছাত্র সুজিদ, নৃবিজ্ঞান মাস্টার্সের ছাত্র যোবায়েরসহ আরও অনেকে।

রাস্তায় রাস্তায় তারা লিখেছেন নানা স্লোগান, ‘শহীদ মিনারের জন্য শহীদ হওয়া গাছেদের স্মরণে আরেকটি শহীদ মিনার নির্মাণ জরুরি। ’ কিংবা ‘আর একটি গাছ কাটলে হাত হয়ে যাবে হাতিয়ার। ’

এ নিয়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট জাবি শাখার সভাপতি নাসির উদ্দিন প্রিন্স বলেন, ‘কারও অনুমতি ছাড়া প্রশাসন যে এতগুলো গাছ কাটল এজন্য শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। ’

সম্প্রতি ঈদের ছুটিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মূল ফটক থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত সড়ক দ্বীপের ৩৬ টি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে।

এর আগে গত ১ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে কাটা হয়েছিল ৩০টি গাছ। আর আজ (শনিবার) কাটা হয়েছে আরও ১০ টি গাছ।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ