ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বিএডিসি’র জরিপ

এক দশকের মধ্যে লবণপানিতে ভরে যাবে ঢাকা

রহমান মাসুদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১০
এক দশকের মধ্যে লবণপানিতে ভরে যাবে ঢাকা

ঢাকা: আগামী এক থেকে দেড় দশকের মধ্যে (৮ থেকে ১৬ বছর) মধ্যে ঢাকা শহরের ভূগর্ভস্থ ফাঁকা জায়গা লবণাক্ত পানিতে ভরে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন’র (বিএডিসি) সাম্প্রতিক এক জরিপ প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।



২০০৯-’১০ অর্থবছরে ‘দি প্রোগ্রাম অব  ফোরকাস্টিং স্যালাইন ওয়াটার ইরিগেশন, ইরিগেশন ওয়াটার কোয়ালিটি অ্যান্ড ওয়াটার লগিং ইন সাউদার্ন এরিয়া’ প্রকল্পের আওতায় এ জরিপ পরিচালিত হয়।

জরিপে দেখা গেছে, ঢাকা শহরের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর বঙ্গোপসাগরের পাানির গড় উচ্চতার তুলনায় এরই মধ্যে ১৪০-১৬০ ফুট নিচে নেমে গেছে।

এ কারণে সাগরের লোনা পানি অপোকৃত দ্রুতগতিতে উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়ে ঢাকা শহরের ভূ-অভ্যন্তরে প্রবেশের আশঙ্কা রয়েছে।

এর ফলে ঢাকা শহরে বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সঙ্কট সৃষ্টি হবে এবং সুপেয় পানির অভাবে শহরের জনজীবনে মারাত্মক অচলাবস্থার সৃষ্টি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিএডিসিরি এ জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, আগে ঢাকার উত্তরাঞ্চলসহ চারপাশ থেকে ভূগর্ভস্থ পানি এসে ঢাকার ভূ-অভ্যন্তরের ফাঁকা স্থান পূর্ণ করতো। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে অপোকৃত কম বৃষ্টিপাত, অপরিকল্পিতভাবে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন এবং এর সঙ্গে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ধীরে ধীরে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে দেিণর লবণ পানি দ্রুত গতিতে উত্তর দিকে প্রবাহিত হচ্ছে।

এছাড়া শুধুমাত্র ২০০৪ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ধান উৎপাদনের জন্য সেচ মৌসুমে যে পরিমাণ ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করা হয়েছে। এটাকে রীতিমতো ভীতিকর বলে মন্তব্য করেছেন বিএডিসির সেচ গবেষকরা।

২০০৪ সালে দেশে মোট সেচকৃত জমির পরিমাণ ছিল ৪০ দশমিক ৪৪ লাখ হেক্টর এবং এ জমিতে সেচকার্যে সে সময় ৩ হাজার ৫৯০ কোটি ঘন মিটার পানি ভূগর্ভ থেকে উত্তোলন করা হয়।

এরপর ২০০৯ সালে সেচের জন্য ৪ হাজার ৬০০ কোটি ঘন মিটার ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহৃত হয় এবং এ সময় প্রায় ১০ লাখ ৮৩ হাজার হেক্টর অতিরিক্ত জমি সেচের আওতায় আসে এবং এতে দেশের বর্ধিত জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা পূরণে প্রায় ৪০ লাখ টন অতিরিক্ত খাদ্যশস্য উৎপাদিত হয়েছে।

জরিপ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এভাবে অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের কারণে দেশের বিভিন্ন অংশ বিশেষ করে ময়মনসিংহের ভালুকা, ফুলপুর, গাজীপুর সদর, কালিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ সদর, শেরপুরের নালিতাবাড়ী, টাঙ্গাইলের মধুপুর, মির্জাপুর, মানিকগঞ্জের ঘিওর, হরিরামপুর, শিবালয়, নেত্রকোণা সদর, পূর্বধলা এবং যশোরের নওয়াপাড়া, মনিরামপুর, বাঘারপাড়া, যশোর সদর, ঝিকরগাছা, শার্শা, চুয়াডাঙ্গা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর, কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া, চান্দিনা, দেবীদ্বার, মুরাদনগর, ঢাকার সাভার, ধামরাই, কেরাণীগঞ্জ উপজেলার অনেক স্থানেই শুকনো মৌসুমে অর্থাৎ মার্চ-এপ্রিলের দিকে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর সমুদ্র সমতলের চেয়ে ৩ থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত নিচে নেমে যায়।

এদিকে ভূ-উপগ্রহের মাধ্যমে বিএডিসি’র ৪ হাজার পর্যবেণ নলকূপের মধ্যে ২ হাজার ৩০০ টির সংগৃহীত ডিজিটাল ডাটা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বঙ্গোপসাগর হয়ে সাতীরা, যশোর হয়ে মাগুরা জেলার শালিখা পর্যন্ত সমুদ্রের লবণ পানির ব্যাপক অনুপ্রবেশ ঘটেছে বলে জরিপ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

জরিপে আরও বলা হয়, রাজবাড়ী ও ফরিদপুরসহ পদ্মার দণি পাড়ের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর এখনও সমুদ্রের পানির গড় উচ্চতার উপরে থাকলেও মানিকগঞ্জ ও ঢাকা জেলার কিছু কিছু স্থানের পানির স্তর সমুদ্র স্তরের নিচে অবস্থান করছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের ক্ষুদ্র সেচ তথ্য সার্ভিস ইউনিটের প্রধান প্রকৌশলী ইফতেখার আলম জানান, ভূগর্ভ থেকে প্রতিবছর যে পরিমাণ পানি উত্তোলন করা হচ্ছে তা বৃষ্টি ও বন্যার মাধ্যমে পূরণ হচ্ছে না বলেই এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি এ অবস্থা প্রতিরোধে অবিলম্বে ভূগর্ভ থেকে অতিরিক্ত পানি উত্তোলন বন্ধ করে সেচ কাজের জন্য ভূ-উপরি ভাগের পানির ব্যবহার বাড়ানোর ওপর জোর দেন।

এজন্য সারা দেশে কৃষি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মজা খাল-নদী পুর্নখনন করে পানি সংরণের মাধ্যমে সেচ ব্যবস্থা জোরদার করার পরামর্শ দেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।