ঢাকা: পুঁজিবাজারে ব্যাপক দরপতনের প্রতিবাদ ও বাজার স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত লেনদেন বন্ধ রাখার দাবিতে ডিএসইর সামনে বৃহস্পতিবার থেকে অবস্থান ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছে বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ।
পরিষদের আহ্বায়ক মিজানুর রশিদ চৌধুরী বিক্ষোভ মিছিল শেষে বৃহস্পতিবার বিকেলে এ ঘোষণা দেন।
একই সঙ্গে লেনদেন না করার জন্য বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মিজানুর রশিদ চৌধুরী বলেন, ‘অবিলম্বে অর্থমন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, ডিএসই প্রেসিডেন্টকে পদ্যত্যাগ করতে হবে। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে না ফেরা পর্যন্ত পুঁজিবাজার বন্ধ রাখতে হবে। ’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বাইরে যাওয়ার পর থেকেই বাজারে নিম্নমুখী দেখা দিয়েছে। এ সময় পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারে দাম কমতে থাকে। ’
এছাড়া বিভিন্নি ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো ফোর্সড সেল করছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘বাজার স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত লেনদেন বন্ধ রাখতে হবে। তা না হলে সারা বাংলাদেশের বিয়োগকারীদের নিয়ে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়া হবে। ’
এর আগে পুঁজিবাজারে ব্যাপক দরপতনে বিক্ষোভ করেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। বুধবার বেলা পৌনে ৩টার দিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সামনের রাস্তায় জড়ো হয়ে তারা এ বিক্ষোভ শুরু করেন। এবার তাদের দাবি, বাজার স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত মার্কেটের যাবতীয় লেনদেন বন্ধ রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে না ফেরা পর্যন্ত বাজার বন্ধ রাখার দাবি জানান বিনিয়োগকারীরা। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তারা সেøাগানও দেন।
বিক্ষোভকারীরা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানের পদত্যাগ দাবি করে সেøাগান দেন।
এছাড়া সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও সেøাগান দেন তারা।
বুধবার বেলা বেলা ২ টা ২৮ মিনিটে সাধারণ মূল্যসূচক ২০১ পয়েন্ট কমে গেলে বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউজ থেকে বিনিয়োগকারীরা দলে দলে রাস্তায় নেমে আসেন।
বুধবার তাদের সবচেয়ে বড় দাবি ছিল বাজার ঠিক না হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের লেনদেন বন্ধ করা হোক।
বিনিয়োগকারীরা জানান, বাজার প্রতিনিয়ত পড়ে যাচ্ছে। পুঁজি হারিয়ে আমরা নিঃস্ব হচ্ছে। এখন সরকারের উচিত স্বাভাবিক অবস্থায় না আসা পর্যন্ত মার্কেট বন্ধ রাখা।
বিক্ষোবের কারণে ২টা ৪৫ মিনিট থেকে বিকেল পৌনে চারটা পর্যন্ত পুঁজিবাজার থেকে ইত্তেফাক মোড় পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ থাকে।
পুঁজিবাজার এলাকার প্রতিটি গলিতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ অবস্থান নেয়। তবে তারা বিক্ষোভকারীদের কোনো বাধা দেয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘ওপর থেকে নির্দেশ আছে, যতক্ষণ পারা যায়, ধৈর্য ধারণ করতে হবে। ’
এদিকে লঙ্কা-বাংলার ব্রোকারেজ হাউজের বিনিয়োগকারী শওকত হোসেন বলেন, ‘আমরা এখানে সঠিকভাবে বিনিয়োগ করতে এসেছি। কিন্তু আমাদের সে কাজে বাধার সৃষ্টি করছে সরকার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন- শেয়ার মার্কেটের রাস্তায় সিসিটিভি লাগানো হবে। আমরা কী চোর না ডাকাত যে এখানে সিসিটিভি লাগাতে হবে। ’
বুধবার ডিএসইতে লেনদেন হয় ২৫৬টি প্রতিষ্ঠানের। এর মধ্যে ২৩৮টিরই দাম কমেছে, বেড়েছে ১৫টির এবং অপরিবর্তিত ছিল তিনটি প্রতিষ্ঠানের দাম।
একইসঙ্গে ডিএসইর সাধারণ সূচক ১৫১.৭৪ পয়েন্ট কমে নেমে যায় ৫২৯২.৫৩ পয়েন্টে। সার্বিক সূচক ১২৫.৩৯ পয়েন্ট কমে স্থির হয় ৪৪০৯.৫৭ পয়েন্টে।
বুধবার ডিএসইতে লেনদেন হয় ৩২৪ কোটি ২৪ লাখ ৭৪ হাজার টাকা।
এদিন ডিএসইতে লেনদেনের ভিত্তিতে শীর্ষ দশ কোম্পানি হলো- তিতাস গ্যাস, এম আই সিমেন্ট, বিএসআরএম স্টিল, আফতাব অটোমোবাইলস, পিএলএফএসএল, বেক্সটেক্স, ইউনাইটেড এয়্যারওয়েজ, বেক্সিমকো, ন্যাশনাল ব্যাংক ও মালেক স্পিনিং।
বাংলাদেশ সময় : ১৫০০ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১১