ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সিইপিজেডে পুলিশ-শ্রমিক সংঘর্ষে নিহত ৪, পুলিশসহ আহত অর্ধশতাধিক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১০
সিইপিজেডে পুলিশ-শ্রমিক সংঘর্ষে নিহত ৪, পুলিশসহ আহত অর্ধশতাধিক

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলে (সিইপিজেড) রোববার পুলিশের সঙ্গে বিুব্ধ শ্রমিকদের সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন।

সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষে আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৫ শ্রমিক ও শিল্প পুলিশের ২০ সদস্য।

বিুব্ধ শ্রমিকরা এ সময় ইপিজেড এলাকার বেশক’টি কারখানায় ব্যাপক ভাঙচুরের পাশাপাশি চারটি গাড়িতে আগুন ও কমপক্ষে ২৫টি গাড়ি ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় ৩০ জনকে আটক করা হয়েছে। পরিস্থিতি আপাতত শান্ত রয়েছে।

সরকার ঘোষিত মজুরি কাঠামোয় বেতন-ভাতা পরিশোধ না করার জের ধরে রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

পাথরঘাটা এলাকার স্থানীয় মহিলা কাউন্সিলর লুৎফুন্নেছা দোভাষ বেবী রাত ৮টার দিকে বাংলানিউজকে জানান, বিকেলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রূহি দাস (৪৫) নামে এক পুরুষ শ্রমিকের মৃত্যু হয়।

নিহত রূহি শ্রমিক সিইপিজেড’র সিয়াম সুপিরিয়র লিমিটেডের কাটিং মাস্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার বাসা নগরীর পাথরঘাটা এলাকার গুর্খা ডাক্তার লেইনে।

সৎকারের জন্য নিহতের মৃতদেহ রাত আটটায় নগরীর বলুয়ার দিঘীর মহাশ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কাউন্সিলর বেবী।

এর আগে সন্ধ্যায় মহানগর পুলিশ কমিশনার আবুল কাশেম সাংবাদিকদের বলেন, ‘তিন জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাখা হয়েছে। ’  

মর্গে থাকা তিনটি লাশের মধ্যে একজনের পরিচয় জানা গেছে। তার নাম আরিফুল (২২), তিনি পেশায় রিকশাচালক ছিলেন। হাসপাতালের রেজিস্টার বইয়ে উল্লেখ রয়েছে- আরিফুল নৌবাহিনী হাসপাতালের ২ নম্বর গেটের সামনে রাবার বুলেটবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।

সংঘর্ষে আহত অজ্ঞাতপরিচয় আরও বেশ কয়েকজন শ্রমিক একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এর আগে শিল্প পুলিশের চট্টগ্রাম ইউনিটের সহকারী সুপারিনটেন্ডেন্ট রেজাউল মাসুদ বাংলানিউজকে এক জনের মৃত্যুর কথা জানিয়ে বলেন, ‘সংঘর্ষে এক শ্রমিকের মৃত্যুর কথা শুনেছি। এছাড়া ২০/২৫ শ্রমিক আহত হয়েছেন। আমরা ৩০ বিক্ষোভকারীকে আটক করেছি। ’

ওদিকে, বিুব্ধ শ্রমিকরা বন্দর এলাকার সাংসদ এম এ লতিফকে লাঞ্ছিত করেছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া শ্রমিক বিক্ষোভের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে বৈশাখী টেলিভিশনের ব্যুরো প্রধান হাসান ফেরদৌস ও ইনকিলাবের আলোকচিত্রী কুতুবুদ্দিন আহত হয়েছেন। তারা বেপজা হাসপতালে চিকিৎসাধীন। বিুব্ধ শ্রমিকরা এক সাংবাদিকের গাড়িও পুড়িয়ে দেয়।

রোববার সকাল ৯টার পর থেকে সল্টগোলা ক্রসিং থেকে ইপিজেড মোড় পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার জুড়ে রাস্তায় অবস্থান নিয়ে শ্রমিকরা বিােভ শুরু করেন। এ সময় তারা বেশকিছু গাড়িও ভাঙচুর করেন। দুপুর ১২টা পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষ চলার পর সিইপিজেড এলাকা কিছুটা শান্ত হয়ে এলেও সল্টগোলা ক্রসিংয়ে এখনও বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। আন্দোলনরত শ্রমিকরা পুলিশকে ৩ দিক থেকে ঘিরে রেখেছেন শ্রমিকরা।

কয়েকজন শ্রমিক জানিয়েছেন, সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদুনে গ্যাস ছুড়েছে। এতে ২০/২৫ জন আহত হয়েছেন।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইপিজেডের কারখানাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

ইপিজেড এর বিজিএমইএ এর প্রথম সভাপতি নাসিরউদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, সিইপিজেডের বাইরে শতাধিক কারখানায়ও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

অন্যদিকে, সিইপিজেড গেটের সামনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সমাবেশ থেকে এ ঘটনার জন্য বেপজা এবং ইয়ংওয়ানকে দায়ী করেছেন বক্তারা। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং সাংসদ এম এ লতিফ।

সমাবেশে সোমবার সকাল ৮টার মধ্যে সিইপিজেড-এর বন্ধ করে দেওয়া সব কারখানা খুলে দেওয়ার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে।   বক্তারা সংঘর্ষের ঘটনায় কোনো মামলা দায়ের না করা এবং কোনো শ্রমিককে গ্রেপ্তার না করার দাবি জানান।

বেপজা এবং ইয়ংওয়ানের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও দাবি জানান তারা।
 
তারা জানিয়েছেন, সরকার ঘোষিত বেতন কাঠামো বাস্তবায়নে বাধা দিতেই ষড়যন্ত্র করে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।

বেলা ৩টার দিকে বেপজা চেয়ারম্যান জামিল আহমেদ খান ইপিজিড-এর কর্মকর্তা, স্থানীয় সাংসদ এম এ লতিফ এবং সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করেন।

শিল্প পুলিশের সংক্ষিপ্ত প্রেস ব্রিফিং:

বিকেল চারটার দিকে শিল্প পুলিশের চট্টগ্রাম ইউনিটের সহকারী সুপারিনটেন্ডেন্ট রেজাউল মাসুদ এক সংক্ষিপ্ত প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, শ্রমিকরা ইপিজেড এলাকার ২৫টি কারখানা ভাঙচুর করেছে। এছাড়া ইপিজেড এলাকার বাইরে ব্যাংক, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শপিংমল, দোকান-পাটেও ভাঙচুর চালিয়েছে।

এ সময় শ্রমিকদের হামলায় ৪১ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি বলেন, এর মধ্যে ছয়জনের অবস্থা গুরুতর।

রেজাউল মাসুদ জানান, বিুব্ধ শ্রমিকদের শান্ত করতে পুলিশ ৫২৬ রাউন্ড শটগানের গুলি এবং ৯৫টি টিয়ারসেল ব্যবহার করেছে। এ সময় শিল্প পুলিশের ২০০ সদস্য, সিএমপির ২৫০, জেলা পুলিশ ৫০, বিভিন্ন থানা ও ফাঁড়ির ৫০ ও ১০০ র‌্যাব সদস্য মোতায়েন ছিলেন।

শনিবার সিইপিজেডের কোরিয়ান কোম্পানি ইয়ংওয়ানের ৫টি কারখানায় ব্যাপক শ্রমিক অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৩টি কারখানায় শ্রমিকরা ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এ সময় শ্রমিকদের হামলায় ইয়ংওয়ান গ্রুপের ঊর্ধ্বতন তিন কর্মকর্তা আহত হন।
 
আন্দোলনকারী শ্রমিকরা জানান, সরকার ঘোষিত নতুন মজুরি কাঠামোয় যে বেতন দেওয়া হয়েছে তাতে পুরনো শ্রমিকদের  বেতন কম বেড়েছে। অনেকেেত্র কর্তৃপ বেতন কম দিতে শ্রমিকদের পদবী পরিবর্তন করে নিচে নামিয়ে দিয়েছে।

বাংলাদেশ সময় : ২০৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।