ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পাবনায় সুচিত্রা সেনের পৈতৃক ভিটা জামায়াতের দখলমুক্ত করার দাবি

শাহীন রহমান, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১০
পাবনায় সুচিত্রা সেনের পৈতৃক ভিটা জামায়াতের দখলমুক্ত করার দাবি

পাবনা: উপমহাদেশের বাংলা ছায়াছবির জীবন্ত কিংবদন্তী সুচিত্রা সেনের পাবনার পৈতৃক ভিটা জামায়াতের দখল থেকে মুক্ত করে ‘সুচিত্রা সংগ্রহশালা’ করার দাবি এখন পাবনাবাসীর প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছে। এজন্য পাবনার বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গ এরই মধ্যে সভা-সমাবেশসহ আন্দোলনও করেছেন।



শুধু তাই নয়, পাবনাবাসীর দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে বাড়িটির একসনা লিজ বাতিল করে অবমুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন পাবনার আলোচিত সাবেক জেলা প্রশাসক ড. এএফএম মনজুর কাদিরও। কিন্তু দখলকারীরা হাইকোর্টে আপিল করলে লিজ বাতিলের আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ দেন হাইকোর্ট। ফলে বাড়িটি এখন পর্যন্ত দখলমুক্ত হয়নি।

পাবনা শহরের পৌর এলাকার গোপালপুর মহল্লার হেমসাগর লেনে জন্ম নেন সূচিত্রা সেন। ওই বাড়িতে বাবা-মা, এক ভাই ও তিন বোনের সঙ্গে শৈশব-কৈশর কাটান সিনেমায় সুচিত্রা সেন হয়ে ওঠা রমা নামের মেয়েটি। ১৯৫১ সালের মাঝামঝি সময়ে পূর্ব পাকিস্তানের অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সুচিত্রা সেনের বাবা পাবনা পৌরসভার তৎকালীন স্যানিটারি ইন্সপেক্টর শ্রী করুণাময় দাশগুপ্ত সপরিবারে কলকাতা চলে যান। তার আগেই পাবনা বালিকা বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে পড়ার সময় ১৯৪৬ সালের ১৫ আগস্ট সুচিত্রাকে কলকাতা পাঠানো হয়।

এরপর সুচিত্রা সেনের পৈতৃক ভিটা গোপালপুর মৌজার এসএ ৯৯ খতিয়ানভূক্ত ৫৮৭ এসএ দাগের ০.২১২৫ একর বাড়িটি জেলা প্রশাসনের ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের আবাসনের জন্য রিক্যুইজিশন করা হয়। সেই থেকে বাড়িটিতে সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বসবাস করতে থাকেন এবং সর্বশেষ একজন প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন ওই বাড়িতে। ১৯৮৭ সালে এরশাদ সরকারের সময়ে তৎকালনী জেলা প্রশাসক মো. সাইদুর রহমানের সহযোগিতায় জামায়াত নেতা মাওলানা আব্দুস সোবাহানসহ অন্যরা সুকৌশলে বাড়িটি অর্পিত সম্পত্তি দেখিয়ে একসনা লিজ নিয়ে ‘ইমাম গায্যালী ইনস্টিটিউট’ নামের একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল গড়ে তোলেন।

এরশাদ সরকারের পতনের পর স্থানীয় প্রগতিশীল ব্যক্তিরা সূচিত্রার পৈতৃক ভিটাটি জামায়াতের দখলমুক্ত করে ‘সূচিত্রা সেন সংগ্রহশালা’ করার দাবি তুললেও রাজনৈতিক কারণে বাড়িটি আজও দখলমুক্ত হয়নি। বরং বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে ‘ইমাম গায্যালী ইনস্টিটিউট ট্রাস্ট’-এর নীতিনির্ধারক জামায়াতের কতিপয় নেতা বাড়িটির মূল স্থাপত্যশৈলী পরিবর্তন করে এর বেশির ভাগ ছাদ ভেঙে ঢেউটিনের চালা দিয়ে তাদের প্রয়োজনমতো ঘর তৈরি করেন।

মহাজোট সরকার মতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও রাজনৈতিক নেতারা সুচিত্রা সেনের পৈতৃক ভিটা স্বাধীনতাবিরোধীদের কবল থেকে উদ্ধারের দাবি জানান। তবে সেখানেই ঝুলে রয়েছে বিষয়টি।

আন্দোলন-সংগ্রামের এক পর্যায়ে ‘সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরণ পরিষদ’ নামে একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে গণস্বার সংগ্রহ করে জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন জানানো হয় বাড়িটি দখলমুক্তির জন্য।

দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ২২ জুন পাবনার অতিরিক্ত জেলা প্রাশসক (রাজস্ব) লিজ বাতিল করে দখলকারীদের ওই বছর ৮ জুলাইয়ের মধ্যে বাড়িটির দখল ছেড়ে দেওয়ার নোটিশ দেন। নোটিশ পাওয়ার পর জামায়াত নেতারা বাড়িটি ছাড়তে অস্বীকৃতি জানান এবং তারা লিজ বাতিলের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন জানালে হাইকোর্ট লিজ বাতিলের ওপর স্থগিতাদেশ দেন। প্রায় এক বছর যাবত স্থগিতাদেশ বহাল রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে পাবনার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও নাট্য সংগঠন ড্রামা সার্কেলের সাধারণ সম্পাদক গোপাল স্যানাল বাংলানিউজকে বলেন, ‘সূচিত্রা সেনের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি স্বাধীনতাবিরোধীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে দখল করে বাঙালি সংস্কৃতি ধ্বংস করার নীলনকশা করছে, আমরা বাড়িটি দখলমুক্তির দাবি জানাচ্ছি। ’

পাবনা জেলা ওর্য়াকার্স পার্টি নেতা কমরেড জাকির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘জামায়াতের লোকজন সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক ভিটা যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে দখল করেছে সেই প্রতিষ্ঠানের নামে অন্যখানেও সরকারি জায়গা দখল করে আরেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। ’

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি অন্যখানে দখল করা জায়গায় স্থানান্তর ও সূচিত্রা সেনের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি দখলমুক্ত করার দাবি জানান তিনি।

‘সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরণ পরিষদ’-এর আহবায়ক এম সাইদুল হক চুন্ন বলেন, ‘সূচিত্রা সেনের জন্ম পাবনায় হওয়ায় আমরা গর্বিত। সরকার তার স্মৃতি রার্থে অবিলম্বে ওই বাড়িটি দখলমুক্ত করে সেখানে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ও শিশু-কিশোরদের শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা। ’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইমাম গায্যালী ট্রাস্টের সেক্রেটারি আবিদ হাসান দুলাল বাংলানিউজকে জানান, ‘আমরা তো বাড়িটি অবৈধভাবে দখল করিনি। সরকারি নিয়ম-নীতির মধ্যে একসনা লিজ নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করছি। ’

তিনি বলেন, ‘সরকার যদি মনে করে ইমাম গাযযালী ইনস্টিটিউটকে একটি ভালো জায়গায় স্থানান্তর করে সুচিত্রার বাড়িটি তার স্মৃতি রার্থে কিছু করবে, তাহলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। ’

উল্লেখ্য, পাবনায় শুক্রবার শুরু হচ্ছে ‘সুচিত্রা সেন চলচ্চিত্র উৎসব’।

বাংলাদেশ সময়: ০১৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।