ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

এ কেমন অধ্যক্ষ!

জাকিয়া আহমেদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১০
এ কেমন অধ্যক্ষ!

ঢাকা: গোটা দেশ যখন ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ঠিক তখন রাজধানীর বনশ্রী স্কুল অ্যান্ড কলেজের যৌন নিপীড়ক এক শিক্ষককে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন প্রতিষ্ঠানটির নারী অধ্যক্ষ!

তিনি প্রতিষ্ঠানের সুনাম বিবেচনা করে এ ব্যাপারে অভিভাবকসহ সবার প্রতি নীরবতা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার সকালে স্কুলের গণিত ও বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মো মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আনে স্কুলটির ৭ম, ৮ম এবং ৯ম শ্রেণীর ছাত্রীরা।



এ নিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম নিলে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক জরুরি বৈঠক ডাকে বনশ্রী আবাসিক কল্যাণ সোসাইটি।

বিদ্যালয়ের কয়েক জন ছাত্রী ও অভিভাবক বাংলানিউজকে জানান, মতিউর রহমান নিজের বাসায় প্রাইভেট পড়ানোর নামে কয়েক জন ছাত্রীর সঙ্গে অনৈতিক আচরণ করেন।

শুধু তাই নয়, গত ১৭ নভেম্বর তিনি নবম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে চেতনানাশক ওষুধ দিয়ে অচেতন করে তার ওপর যৌন নির্যাতন চালান বলে অভিযোগ করেন তারা।
 
এ ঘটনায় সকালে অষ্টম ও নবম শ্রেণীর ছাত্রীরা ওই শিক্ষকের শাস্তি দাবি করে পোস্টার ও লিফলেট বিতরণ করলে পুরো এলাকায় ক্ষোভ দেখা দেয়।

উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা দুপুর থেকে স্কুলের প্রধান ফটকে ভিড় জমাতে থাকেন। তারা বৃহস্পতিবারের মধ্যে মতিউর রহমানের অপসারণসহ কঠোর শাস্তির দাবি জানান।

যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়া ছাত্রী বাংলানিউজকে জানান, পড়া দেখিয়ে দেওয়ার কথা বলে ফাঁকা ফ্যাটে ডেকে নিয়ে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে তাকে নির্যাতন করেন শিক্ষক মতিউর।

চেতনা ফিরলে ছাত্রীটি নিজের অবস্থা বুঝতে পেরে তৎক্ষনাৎ বাসায় ফিরে তার অভিভাবকদের বিষয়টি জানান।

নির্যাতিত ছাত্রীর বাবা অধ্যক্ষকে বিষয়টি জানিয়ে দোষী শিক্ষকের বিচার দাবি করেন। তবে অভিযোগ পাওয়ার কথা অস্বীকার করেন অধ্যক্ষ শাহানা বেগম।

উল্টো তিনি বলেন, ‘আমি অন্য সূত্র থেকে অভিযোগটি পেয়েছি। ’

সেইসঙ্গে তিনি এও বলেন, ‘একটি স্বনামধন্য স্কুলের মর্যাদার সঙ্গে বিষয়টি সম্পৃক্ত বলে বেশি ছড়াছড়ি না করার জন্য অভিভাবকসহ সবাইকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। ’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রী বাংলানিউজকে বলেন, ‘স্বনামধন্য স্কুল বলে কী আমরা এর কোনও বিচার পাবো না? আর ম্যাডামকে প্রশ্ন করতে চাই, তার মেয়ের যদি এ অবস্থা হতো তাহলে কি তিনি স্কুলের মান সম্মানের কথা ভাবতেন? নাকি নিজের মেয়ের যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিচার চাইতেন?’
 
অধ্যক্ষ শাহানা বেগমের এ মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট এলিনা খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘উনি কোনও ক্রমেই এ কথা বলতে পারেন না। এ মন্তব্যের জন্যই তার শাস্তি হওয়া উচিত। ’

এলিনা খান বলেন ‘উনি যদি মনে তার প্রতিষ্ঠান স্বনামধন্য তাহলে তো এর বিচার আরও তাড়াতাড়ি করা উচিত। সবাইকে বুঝিয়ে দেওয়া উচিত তার, যে স্কুল কেবল নামেই স্বনামধন্য নয়, কাজেও স্বনামধন্য। ’

তিনি আরও বলেন, ‘উনি এ মন্তব্য করে প্রমাণ করেছেন, তার স্কুল কেবল নামেই স্বনামধন্য, ভিতরে ফাঁকা। নয়তো একজন অধ্যক্ষ, যে কি-না একজন নারী, সে এ কথা বলতে পারে না। ’

এ ব্যাপারে জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নী বলেন, ‘অধ্যক্ষকে আগে প্রশ্ন করা উচিত, তিনি কী ঘুমিয়ে আছেন কি-না?’

ক্ষুব্ধ আইনজীবী আরও বলেন, ‘এ মন্তব্য তিনি কী করে করলেন! যৌন নির্যাতন বিষয়ে হাইকোর্টের একটি স্পষ্ট গাইডলাইন আছে। যেখানে বলা হয়েছে, প্রতিটি স্কুল, কলেজ, প্রাইভেট এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫ সদস্যের একটি বডি থাকবে, যেখানে কোনও ছাত্রী এ ধরনের কোনও ঘটনার শিকার হলে সেখানে গিয়ে অভিযোগ করতে পারবে। ’

ফাহিমা নাসরিন এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আপনি ওই অধ্যক্ষকে প্রশ্ন করুন, তার স্কুলে ৫ সদস্যের বডি আছে কি-না? না থাকলে ওনাকেই আইনের আওতায় আনা যায়। ’

তিনি বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত জোরালোভাবে বলতে চাই, যৌন নির্যাতন বিষয়ে লুকোচুরির দিন শেষ হয়ে গেছে। এটা এখন একটি আমলযোগ্য এবং ফৌজদারী অপরাধ। ’
 
এ ব্যাপারে অধ্যক্ষ শাহানা বেগমের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বেশ কয়েকবার তার মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তা কেটে দেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ২২০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।