ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বিজয়ী যোদ্ধা মীর শওকত হেরে গেলেন জীবন যুদ্ধে

মান্নান মারুফ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১০
বিজয়ী যোদ্ধা মীর শওকত হেরে গেলেন জীবন যুদ্ধে

ঢাকা: চির নিদ্রায় শায়িত মীর শওকত আলী। বনানী সামরিক কবর স্থানে ঘুমিয়ে আছেন।

একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সেক্টর কমান্ডার। একজন বীর উত্তম। একজন যুদ্ধজয়ী সৈনিক। আজ তিনি শুধুই স্মৃতি। সকলকে ছেড়ে চলে গেছেন অজানা এক দেশে।

ঢাকার ছেলে মীর শওকত চাকুরি সুবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে ও বিদেশে কাটিয়েছেন অনেক দিন। সংবাদ মাধ্যম, রাজনীতি, কুটনীতি, সেনাবাহিনীসহ নানা কাজে কেটেছে তার ব্যস্ত জীবন।

১৯৩৮ সালে রাজধানী ঢাকার নাজিরা বাজার অঞ্চলের ৯ আগাসাদেক রোডে জবী নামে এক ধাই মার সহায়তায় জম্ম নেন মীর শওকত আলী। জবী এখনও বেঁচে আছেন। যখনই সময় পেতেন ধাই মাকে দেখতে যেতেন।

নওয়াবী আমলের গৌরবময় সর্দ্দারী প্রথার নামকরা ব্যক্তিত্ব মরহুম মাজেদ সরদারের অভিভাবকত্বে শুরু হয় জীবনের পথ চলা। প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন মাহুতটুলি ফ্রি প্রাইমারী স্কুলে। পরে আরমানিটোলা সরকারি হাইস্কুল থেকে চারটি লেটারসহ স্টার মার্ক পেয়ে ম্যাট্রিক পাশ করেন।

তৎকালীন পুরান ঢাকার সিংটোলায় অবস্থিত ঢাকা কলেজ থেকে কৃত্বিতের সঙ্গে আইএসসি পাশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হয়েই তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। একই সঙ্গে গ্র্যাজুয়েশন কোর্স শেষ করেন।

সামরিক জীবন
শওকত আলী ১৯৫৮ সাল থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত রেজিমেন্টাল অফিসার, অ্যাডজুটেন্ট কোয়ার্টার মাস্টার, সামরিক গেয়েন্দা, কোম্পানি কমান্ডার পদে কৃতিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৬৫ সালে পাক ভারত যুদ্ধে অংশ নেন তিনি। শওকত আলী ৬৬, ৬৯, ৭০ ও ৭১ সালের জুন থেকে চুড়ান্ত বিজয় না হওয়া পর্যন্ত বাঙালির স্বাধীকারের জন্য সাহসিকতার সঙ্গে ৫ নং সেক্টরের  দায়িত্ব পালন করেন। মীর শওকত মুক্তিযুদ্ধে দুর্জয় ভূমিকার জন্য বীর উত্তম খেতাব পান। ৭৪-৭৫ সালে একটি ব্রিগেডের অধিনায়কত্ব  করেন। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ হন। ৭৫ থেকে ৭৭ সাল পর্যন্ত দেশে প্রথম ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশন গঠন ও সফল অধিনায়কত্ব করেন। ৭৭ সাল থেকে ৮০ সাল পর্যন্ত ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনের জিও সি ছিলেন তিনি।

১৯৮০ থেকে ৮১ সালে রাষ্ট্রপতির প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার  হিসাবে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থার পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৯ সালে তিনি সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে ভুষিত হন।
 
১৯৯০ এ এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে  মীর শওকত আলীর ভুমিকা ছিল অগ্রণী।

তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর  ৮১ সালে মিশর ও সুদানে, ৮২ ও ৮৬ সালে পশ্চিম জার্মানি ও অষ্ট্রিয়াতে এবং ৮৬ ও ৮৭ সালে গ্রেট ব্রিটেনে ও পর্তুগালে কৃতিত্বের সঙ্গে রাষ্ট্রদুতের দায়িত্ব পালন করেন। ৮৪ সালে ভিয়েনাতে আই এইএ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।

পদক খেতাব ও কীর্তি
মীর শওকত আলী ৭১ সালে বীর উত্তম খেতাব, ৭৫ সালে যশোরে নতুন উৎপাদ্য প্রক্রিয়ার উদ্ভাবন ও সবোর্চ্চ ডাল উৎপাদনের জন্য রাষ্ট্রপতির র্স্বণপদক পান।

ক্রীড়ায় কৃতিত্ব
মীর শওকত ৭৫ থেকে ৭৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন। ৭৭ সালে তিনি ২১ তম বিশ্ব যুব ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে সাফাল্যের সঙ্গে অনুষ্ঠানের জন্য রাষ্ট্রপতির স্বর্ণপদক পান।

১৯৭২ থেকে ৭৩ পর্যন্ত চট্রগ্রাম পোর্ট ট্রাস্টের চেয়ারম্যান, ৭৬ থেকে ৮১ পর্যন্ত জাতীয় প্রকল্পসমুহের তত্বাবধায়ক কমিটির প্রধান, ৭৫ এ ঢাকা মহানগরীর উন্নয়ন কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন।

১৯৮৯ সালে বিএনপির রাজনীতিতে যোগদেন মীর শওকত আলী। এরপর তিনি লালবাগ ঢাকা -৮ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ এ বিএনপি সরকার গঠন করলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান।

মীর শওকত রাজনৈকিত জীবনের ইতি টানেন ৯৭ সালে।

তিনি একজন মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডারই ছিলেন না ছিলেন রণাঙ্গনের সৈনিক।
আর এসব কারণেই জামায়াতে সাথে বিএনপি জোটবদ্ধ রাজনীতি করুক এটা চাননি। সব কিছু মিলিয়ে তিনি রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন।

তার জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে ২০ নভেম্বর রাত সোয়া ৭ টায়। নিজ হাতে এক গ্লাস হরলিকস পান করে নিজ বাসার গেস্ট রুমে ঢুকেই হটাৎ কুকে ব্যাথা অনুভব করেন। কাউকে কিছু বলে উঠার আগেই সেখানে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

বাংলাদেশ সময় ২২৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।