ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বাংলাদেশ-ভারতের জাতীয় প্রাণী বাঘ

নিরাপত্তায় ভারতের চেয়ে বাংলাদেশই এগিয়ে

আহমেদ জুয়েল, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১০
নিরাপত্তায় ভারতের চেয়ে বাংলাদেশই এগিয়ে

ঢাকা: আইন প্রণয়নের দিক থেকে বাঘের নিরাপত্তায় ভারতের চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে। এছাড়া সমীক্ষায় দেখা গেছে গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের চেয়ে ভারতে বাঘ হত্যার সংখ্যা ১২ গুণেরও বেশি।

যদিও দুটি দেশেরই জাতীয় প্রাণী বাঘ।

তবে বাংলাদেশে বাঘ বা অন্য বিপন্ন বন্যপ্রাণী হত্যার অপরাধে কারো শাস্তি হয়েছে এমন উদাহরণ অজানা।

বাঘসহ বিলুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণী হাত্যাকারীর কমপক্ষে ২ থেকে ১২ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রেখে বাংলাদেশ একটি আইন অনুমোদন করেছে। সম্প্রতি মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে এই আইনের অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, বাঘের আক্রমণে কেউ মারা গেলে অথবা মারাত্মকভাবে আহত হলে তার পরিবারকে পঞ্চাশ হাজার থেকে এক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

এছাড়া বাঘ লোকালয়ে প্রবেশ করে যদি কারো গৃহপালিত পশু শিকার করে, ঘরবাড়ি ও ফসলের ক্ষতি করে তাকেও ক্ষতিপূরণ বাবদ ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হবে।

তিনি আরও জানান, অজগর এবং কুমির হত্যার জন্য কমপক্ষে ২ বছর এবং বাঘ ও হাতি হত্যার জন্য সর্বোচ্চ ১২ বছর কারাদণ্ডের বিধান রেখে আইনটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া অনুমোদিত ওই আইনে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বিষাক্ত টোপ ফেলে অতিথি পাখি বা প্রাণী শিকারির কারাদণ্ডসহ ২ থেকে ৬ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে অনুমোদন দেওয়া হয়।

অন্যদিকে বাঘ হত্যার জন্য ভারতের আইনে সর্বোচ্চ তিন থেকে সাত বছরের কারাদণ্ডের বিধান আছে। এছাড়া অন্যান্য বিপন্ন প্রাণী হত্যার ক্ষেত্রে জরিমানার বিধান আছে ৫০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২ লাখ রুপি।

ভারতের ওয়াইল্ড লাইফ সোসাইটির তথ্যমতে গত পাঁচ বছরে সেখানে হত্যা করা হয়েছে ১৮০টিরও বেশি বাঘ। এতগুলো বাঘ হত্যার জন্য মাত্র ১৬ জনের শাস্তি হয়েছে। ঠিক একই সময়ে বাংলাদেশ মারা পড়েছে মাত্র ১৫টি। তবে বাঘ হত্যার জন্য বাংলাদেশে কারো শাস্তি হয়েছে এমনটি শোনা যায়নি।

বাংলাদেশে বন্য প্রাণী সংরক্ষনে বর্তমান যে আইন আছে তা অত্যন্ত দুর্বল। সে আইনের প্রয়োগ নেই বললেও চলে। তারপরও বাঘের নিরাপত্তায় ভারতের তুলনায় বাংলাদেশ এগিয়ে আছে। গত পাঁচ বছরে ভারত ও বাংলাদেশে বাঘ হত্যার পরিসংখ্যানে সে বিষয়টিই স্পষ্ট হয়ে ওঠে।  

আইনের শিথিলতার কারণেই ভারতে বাঘ হত্যার সংখ্যা বেশি বলে ভারতের ওয়াল্ডলাইফ সোসাইটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। এছাড়া বন্যপ্রাণী গবেষক ও বন কর্মকর্তারাও সেখানে শাস্তির মাত্রা বাড়ানোর পক্ষে কথা বলেছেন।

কর্নাটকের বাঁদিপুর বাঘ সংরক্ষন বনাঞ্চলের সহাকারী বন সংরক্ষক কেটি হনুমানথাপা রয়টার্সকে বলেন, শাস্তির মাত্রা বেশি হলে বন্যপ্রাণী হত্যার মতো অপরাধ অবশ্যই কমে যাবে।

২০০৪ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) ও বন বিভাগ যৌথভাবে সুন্দরবনের বাঘের ওপর একটি সমীা চালায়। তাতে দেখা যায়, সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে ৪৪০টি বাঘ রয়েছে। যার মধ্যে ১২১টি পুরুষ, ২৯৮টি স্ত্রী ও ২১টি বাচ্চা বাঘ। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে বন্যহাতি অবশিষ্ট আছে মাত্র ৩০০টি। লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় বাংলাদেশে প্রতি বছর বাঘসহ বিপন্ন প্রজাতির বিভিন্ন প্রাণী মানুষের হাতে মারা পড়ে।

বাংলাদেশের সুন্দরবন অঞ্চলে গত পাঁচ বছরে বাঘের আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছে অনন্ত ৮০ জন মানুষ। আর এসব ঘটনায় মারা পড়েছে অনন্ত ১৫টি বাঘ। এছাড়া বন্য হাতির আক্রমণে বাংলাদেশের প্রতিবছর প্রাণ হারায় অন্তত ২০ জন।

বন কর্মকর্তারা জানান, ক্ষুধার্ত হাতি খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে প্রবেশ করে গ্রামবাসীদের মুখোমুখি হলে উম্মুক্তভাবে ছোটাছুটি করতে থাকে। আর তখনই প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

বন্যপ্রাণী সম্পর্কে সচেতনতার অভাব এবং কঠোর আইনের প্রয়োগ নেই বলেই মানুষ বিপন্ন প্রাণী হত্যা করে। তবে বন্যপ্রাণী সংরক্ষনের নতুন আইনটি পাশ হলে এবং এর প্রয়োগ নিশ্চিত করা গেলে বাঘসহ সব ধরনের বিপন্ন প্রাণী হত্যা রোধ করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন বন্যপ্রাণী গবেষক ও পরিবেশবাদীরা।

রাশিয়ায় বাঘ সম্মেলনের ঠিক আগ মুহূর্তে বাংলাদেশের মন্ত্রিসভা বিপন্ন বাঘসহ বন্যপ্রাণী রক্ষায় কঠোর আইন অনুমোদন করায় তা বিশ্বব্যাপী আলোচিত হচ্ছে। বিশেষ করে টাইগার রেঞ্জের দেশগুলোর মধ্যে তা ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলেছে। এ জন্য প্রশংসাও পাচ্ছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad