ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সুন্দরবনের পক্ষে ভোট চাইলেন প্রধানমন্ত্রী:

পরিবেশের স্বার্থেই বাঘ সংরক্ষণে সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১০
পরিবেশের স্বার্থেই বাঘ সংরক্ষণে সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান

সেন্ট পিটার্সবার্গ : বিলুপ্তির হাত থেকে বাঘ রক্ষায় কার্যকর উপায় খুঁজে বের করতে বিশ্বের দেশগুলোকে সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার তিনি রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ভ্লাদিমির পুতিনের উদ্যোগে বিশ্বব্যাংক ও ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ডের সহযোগিতায় আয়োজিত বাঘ সম্মেলনে দেওয়া ভাষণে এ বিষয়ে জোর দেন।



সম্মেলনে ভাষণে তিনি বিশ্বের প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যের তালিকায় সুন্দরবনকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ভোট চান।

বাঘের আবাসস্থল রয়েছে এমন ১৩টি দেশের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে এই শীর্ষ সম্মেলন বিশ্বব্যাপী বাঘ সংরক্ষণে কার্যকর উপায় খুঁজে বের করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও তিনি আশা করেন।

পিটার্সবার্গের কনস্টান্টি নভোস্কি প্যালেসের মার্বেল হলে চারদিনব্যাপী এই শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আজ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ভ্লাদিমির পুতিন, চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন জিয়াবাও ও নেপালের প্রধানমন্ত্রী মাধব কুমার নেপাল।

রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ভাদিমির পুতিন বাঘ রক্ষা শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।

ব্যতিক্রমী এ শীর্ষ সম্মেলনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে আগামী ১২ বছরের মধ্যে ‘বাঘ’ বিলুপ্ত হতে পারে বিশেষজ্ঞদের কাছে এই আশংকা তুলে ধরা এবং বাঘ শিকার বন্ধ ও বাঘের আবাসস্থল ধ্বংস বন্ধে জরুরিভাবে কার্যকর পরিকল্পনা নেওয়া।

বাংলাদেশ ছাড়াও ভিয়েতনাম, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, চীন, লাওস, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, নেপাল, থাইল্যান্ড এবং উত্তর কোরিয়া এই শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে।

একক কোনো প্রাণী প্রজাতির সংরক্ষণ নিয়ে আলোচনার জন্য এ ধরনের শীর্ষ সম্মেলন বিশ্বে এটাই প্রথম।

প্রধানমন্ত্রী পিটার্সবুর্গের স্থানীয় সময় বিকেল চারটায় এ সম্মেলনে বক্তব্য দেন। লিখিত বক্তব্যে তিনি বাঘসহ পরিবেশ সংরক্ষণে তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন।  

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ শীর্ষ সম্মেলনের মাধ্যমে বাঘের আবাসস্থল ১৩টি দেশের উপস্থিতি বাঘ রক্ষায় সদিচ্ছারই প্রতিফলন হয়েছে। পৃথিবীতে মানুষের সুন্দরভাবে বসবাসের স্বার্থে এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বাঘ প্রজাতিসহ সকল প্রকার প্রাণীর বিলুপ্তি রোধ করতে হবে। ’  

তিনি বলেন, ‘এ কথা ভুললে চলবে না যে, আমাদের বেঁচে থাকার এবং অগ্রগতির জন্য যেসব সম্পদ ও উপকরণের প্রয়োজন হয় তার সব কিছুই আসে প্রকৃতি থেকে’।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাঘ এবং বাঘের আবাসস্থল রক্ষা করার অর্থ হচ্ছে আমাদের পরিবেশকে রক্ষা করা। ’

তিনি বলেন, ‘খাদ্য শৃংখলে সর্বোচ্চ স্তরে অবস্থিত বিড়াল প্রজাতির এসব প্রাণীর (বাঘের) বসবাসের জন্য বিশাল এলাকার প্রয়োজন হয়। এরা অন্যান্য প্রাণী ও জীববৈচিত্রও রক্ষা করে। ’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটি সমন্বিত অঙ্গীকার এবং কর্মোদ্যোগ বিরল প্রজাতির প্রাণী বাঘ ও বাঘের বাসস্থান নিশ্চিহ্ন হওয়া থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হবে। ’

গত শতাব্দিতে বিশ্বে এক লাখ বাঘ ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন মাত্র তিন হাজার ৭শ’র কাছাকাছি দাঁড়িয়েছে। ’

বাঘের সংখ্যা কমে যাওয়ার এ সংখ্যাকে তিনি দুঃখজনক হিসেবে অভিহিত করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে ৪৪০টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার আছে। ’

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং জীব-পরিবেশের এক অনন্য নিদর্শন এই বনভূমিকে ইউনেস্কো ১৯৯৭ সালে বিশ্ব প্রাকৃতিক ঐতিহ্য এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।  

তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, সমুদ্র উচ্চতা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন, সাইকোন, লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশ ইত্যাদি কারণে সুন্দরবনের অস্তিত্ব হুমকির মুখে। ’

প্রধানমন্ত্রী সুন্দরবনকে রক্ষায় এবং বিশ্বের প্রাকৃতিক সপ্তম আশ্চর্যের তালিকায় সুন্দরবনকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য www.new7wonders.com ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রকৃতির বিস্ময় সুন্দরবনের পক্ষে সমর্থন জানানোর আহ্বানও জানান।

তিনি বলেন, ‘আপনার একটি ভোট সুন্দরবনকে বিশ্বের নতুন সপ্তাশ্চর্য নির্বাচনে সাহায্য করবে। ’

বাঘ রক্ষায় তার সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার আমাদের জাতীয় প্রাণী। এই অনিন্দ্য সুন্দর প্রাণীটি রক্ষায় সরকার ‘টাইগার অ্যাকশন প্লান’ অনুমোদন দিয়েছে। ’

তিনি বলেন, ‘এছাড়াও বাংলাদেশের বর্তমান সরকার বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন-২০১০ প্রণয়ন করেছে। এই আইনে বাঘ শিকারের জন্য ১২ বছরের জেল এবং দ্বিতীয়বার অনুরূপ অপরাধের জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। ’

সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, অ্যাম্বাসেডর-অ্যাট-লার্জ এম জিয়াউদ্দিন, সংসদ সদস্য একেএম রহমতউল্লাহ, জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত প্রমুখ প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।