ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

চোর পেটানোর মতো আমাকে পিটিয়েছেন ডিপজল: কনস্টেবল আফতাব

সাঈদুর রহমান রিমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১০
চোর পেটানোর মতো আমাকে পিটিয়েছেন ডিপজল: কনস্টেবল আফতাব

ঢাকা: চলচ্চিত্রাভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজল ও তার তিন দেহরক্ষীর লাথি-ঘুষি-নির্যাতনে আহত ট্রাফিক কনস্টেবল আফতাব উদ্দিনের (৪৫) শরীর জুড়ে নির্যাতনের চিহ্ন। অনেক স্থানেই ফুলে আছে পেশি।

রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে তার।
 
শুক্রবার বিকেলে হাসপাতালের শয্যায় শুয়েই বাংলানিউজের কাছে গত মঙ্গলবার ওপর চালানো নির্যাতনের বিবরণ তুলে ধরেন আফতাব।

কান্নাজড়িত কন্ঠে কনস্টেবল আফতাব বলেন, ‘পুলিশের মধ্যে আমরা ট্রাফিক সদস্যরাই নিরস্ত্র অবস্থায় রাস্তায় দায়িত্ব পালন করে থাকি। গত মঙ্গলবার (ঈদের আগের দিন) সকাল সোয়া ১০টার দিকে গাবতলী পশুর হাট মোড়ে যানজট দূর করতে বিরতিহীন দায়িত্ব পালন করছিলাম। ট্রাফিক সিগন্যালে আটকে থাকা ডিপজলের গাড়িটি কেন আমি বিশেষভাবে চলাচলের ব্যবস্থা করে দিলাম না-সেটাই আমার অপরাধ! রীতিমত চোর পেটানোর মতো ওরা ৪/৫ জনে মিলে আমাকে পিটিয়েছে। ’

আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘চিকিৎসায় হয়তো আঘাতের চিহ্নগুলো মুছে যাবে; কিন্তু অন্তরের দাগ তো কোনোদিনই মুছবে না। ’

আফতাব জানান, যানজটে আটকে পড়েই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ডিপজল। সাদা প্রাইভেটকারের দরজা খুলে বাইরে বেরিয়েই কলার চেপে ধরে বিশ্রি ভাষায় গালাগাল করতে থাকেন। তারপর ‘তুই চিনোছ আমারে, অক্ষুনি চিন্যা যাবি’ বলে পেটাতে শুরু করেন।

কনস্টেবল আফতাব বলেন, ‘ডিপজল যখন খিস্তি-খেউর করছিলেন ততক্ষণে গাড়ি থেকে রিভলবার, বন্দুক ও পিস্তল হাতে তার তিন দেহরক্ষী নেমে এসে ঘিরে ধরে আমাকে। তারপর এলোপাতাড়ি চড়-থাপ্পড়, লাথি-ঘুষি মারতে থাকে। ’

আফতাব জানান, রীতিমত চোর পেটানোর স্টাইলে বেদম পেটানো হয় তাকে । রাস্তায় ফেলে ডিপজল নিজেই এলোপাতাড়ি লাথি মারতে থাকেন।

এক পর্যায়ে ডিপজল নিজের কোমর থেকে রিভলবার বের করে আফতাবউদ্দিনের বুকে চেপে ধরে বলেন, ‘হালার পুত্রে দিমুনি গুলি কইর‌্যা ?’

ট্রাফিক কনস্টেবল জানান, ঈদ উপলক্ষে তখন গাবতলী গরু হাটটির ঠিক সামনের মোড়টিতে চরম যানজট। ট্রাফিক সার্জেন্ট শরিফুল ইসলাম ও চার কনস্টেবল মিলেও যানজটের ধকল সামলাতে হিমসিম খাচ্ছিলেন। আফতাব ছিলেন ডিপজলের মালিকানাধীন পর্বত সিনেমা হলের ঠিক সামনের রাস্তায়। সেখানে তার উপর হামলা চলতে থাকলেও গাড়ির ভিড়ের কারণে রাস্তার ওপাশ থেকে তা চোখে পড়েনি সার্জেন্ট ও ট্রাফিক কনস্টেবলদের। তবে এ দৃশ্য চোখ এড়ায়নি হলুদ জ্যাকেট পরা কমিউনিটি পুলিশ সদস্যদের।   কিন্তু ডিপজলের বাহ্বা পেতে তারাও আফতাবকে কিল ঘুষি মারতে থাকেন।

আফতাবউদ্দিন জানান, ডিপজল ও তার বডিগার্ডরা প্রকাশ্যে টানা ১০ মিনিট ধরে নির্যাতন চালালেও তাকে রক্ষায় এগিয়ে যাওয়ার সাহস কেউ পায়নি।

এক পর্যায়ে অপর ট্রাফিক সার্জেন্ট নজরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে পৌঁছলে ডিপজল ও তার  দেহরক্ষীরা গাড়িতে উঠে স্থান ত্যাগ করেন। যাবার সময়ও তিনি গাড়ির জানালার বাইরে মুখ বের করে হুমকি দেন-‘ওই ব্যাটা ! এই খুমাটা চিন্যা রাখিছ, আর য্যান ভুল না হয়। ’

সার্জেন্ট নজরুল ও দারুসসালাম থানার পুলিশ কনস্টেবল আফতাবকে উদ্ধার করে রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতালে পাঠান। তিনি এখন সেখানে ৮ তলায় তিন নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন।

এ ব্যাপারে দারুসসালাম থানায় ডিপজল ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধাদানসহ পুলিশের উপর হামলা ও নির্যাতন চালানো সংক্রান্ত একটি মামলা রুজু করা হয়েছে।

দারুসসালাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমএ মালেক পিপিএম বাংলানিউজকে জানান, ‘মামলার এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি ডিপজল ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের দুটি টিম বিভিন্ন স্থানে অভিযান শুরু করেছে। ’

এদিকে গ্রেপ্তার এড়াতে ডিপজল আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় তার বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।