ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৩
‘কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’

শাহবাগ চত্বর থেকে: যে গৃহবধূ আর কোনোদিন তার স্বামীর প্রতীক্ষায় আঁচলে প্রদীপ ঢেকে দুয়ারে আর দাঁড়িয়ে থাকবে না/ যে জননী খোকা এসেছে বলে উদ্দাম আনন্দে সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ধরবে না/ যে তরুণ মাটির কোলে লুটিয়ে পড়ার আগে একটি প্রিয়তমার ছবি দেখে বারবার আঁকার চেষ্টা করেছিল/ সেই অসংখ্য ভাই বোনের নামে.... / আমি তাদের ফাসির দাবি নিয়ে এসেছি যারা আমার অসংখ্য ভাইবোনকে নির্বিচারে হত্যা করেছে...

১৯৫২ সালের একুশে প্রথম প্রহরে কবি মাহবুব উল আলম চৌধুরী লিখেছিলেন তার এই কালজয়ী কবিতা। সেই ফেব্রুয়ারি মাস চলছে।



তবে তার সেই কবিতা আজ যেন শাহবাগে প্রাণ পেয়েছে। তবে ভাষার জন্য নয়। স্বাধীনতার জন্য নয়। এ যেন মায়ের জন্য যারা জীবন দিয়েছেন, সম্ভ্রম হারিয়েছেন তাদের সম্মানে। যারা মায়ের বিরোধিতা করেছিলো, তাদের বিচারের দাবিতে। তবে শুধুই বিচার নয়, ফাঁসির দাবিতে।

পেশাজীবী, তরুণ প্রজন্ম, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ- এমন সব নবীন-প্রবীণ প্রাণের টানে শুক্রবার এসে যোগ দিয়েছেন শাহবাগ চত্বরে। বাদ যাননি মুক্তিযোদ্ধারাও। মুক্তিযুদ্ধের শিখা বুঝতে শিখেনি, এমন শিশু এসেছে বাবার হাত ধরে। বোন এসেছে ভাইয়ের হাত ধরে। সবার কণ্ঠে একটাই দাবি, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই। এর কোনো বিকল্প নেই।

কোনো সান্ত্বনা, কোনো আশ্বাস নয় তাদের জন্য। এ যেন দেশপ্রেম আর মায়ের জন্য স্বত:স্ফূর্ত অংশগ্রহণ।  

গত মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অপরাধে কাদের মোল্লার রায় ঘোষণার পর গুটিকয়েকের স্লোগান আজ তৃতীয় দিনে লাখ লাখ মানুষের চাওয়ায় পরিণত হয়েছে।

কথা হচ্ছিলো মেজর (অব:) কামরুল ইসলামের সাথে। শাহবাগ চত্বরের এক পাশে সাদা দাড়ির মানুষটি দাড়িয়ে ছিলেন। দেখছিলেন এদিক সেদিক। জানতে চাইলে অনেকটা ক্ষোভ নিয়ে বললেন, “কার সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে আসবো। কথা বলে বুঝিয়ে দিলেন, এ যেন তার নিজের আন্দোলন। প্রাণেরই চাওয়া। ”

কথা হয় রাজধানীর তিতুমীর কলেজের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্রী রোকসানা আকতারের সঙ্গে। তার মাথায় লাল সবুজের পতাকা।
দাবিও একটাই, স্বাধীনতার বিরোধীদের সঙ্গে কোনো আপোস নেই। ফাঁসি চাই।

বেসরকারি চাকুরে হাবীবুর রহমান যোগ দিয়েছেন মহাসমাবেশে। সঙ্গে তার আট বছরের ছোট ছেলে মাহিন।

হাবীবুর রহমান বলেন, “আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। আজ বাবা বেঁচে নেই। বাবা দেখে যেতে পারেননি যুদ্ধাপরাধের বিচার। তবে আজ বেঁচে থাকলে তিনি কষ্ট পেতেন। তাই সব মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান নিয়ে আজ সমাবেশে এসেছি। সঙ্গে ছেলেকে এনেছি, দেশকে ভালোবাসার একটু চেতনা ছোট বেলা থেকে জাগিয়ে তুলতে। ”

তিনি আরো বলেন, “কোনো আবেগ নয়। ন্যায় দাবি নিয়ে এখানে যোগ দিয়েছি। ফাঁসির দাবি নিয়ে এখানে এসেছি। ”

সবার কথা, প্রমাণিত অপরাধের সাজা মৃত্যুদণ্ড ছাড়া অন্য কিছু মানি না।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১০ ঘণ্টা, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩
এসএআর/সম্পাদনা: হাসান শাহরিয়ার হৃদয়, নিউজরুম এডিটর; নূরনবী সিদ্দিক সুইন, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।