ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ঈদে অজ্ঞান পার্টির খপ্পড়ে পড়া ৩১ জনের ২৯ সুস্থ: তিন দিনেও জ্ঞান ফেরেনি নাঈমুরের

সাঈদুর রহমান রিমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১০
ঈদে অজ্ঞান পার্টির খপ্পড়ে পড়া ৩১ জনের ২৯ সুস্থ: তিন দিনেও জ্ঞান ফেরেনি নাঈমুরের

ঢাকা: ঈদকে কেন্দ্র করে অজ্ঞান পার্টির নজিরবিহীন দাপটের মুখে সর্বস্ব হারিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়া ৩১ ব্যক্তির ২৯ জনই হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেছেন। তবে দু’জন এখনও জ্ঞ্যান ফিরে না পাওয়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এদিকে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়া এসব ব্যক্তির মধ্যে অন্তত ১৭ জনই ছিলেন গরু ব্যবসায়ী। তারা রাজধানীর বিভিন্ন পশুহাটে গরু বিক্রি করে টাকা-পয়সা নিয়ে নিজেদের বাড়ির পথে রওনা দিয়েছিলেন। বাকি ১৯ জন ঈদ উপলক্ষে কিছু কেনাকাটা করে বাড়ির পথে ফিরছিলেন।

অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে উল্লেখিত ৩১ ব্যক্তিকে অচেতন করে নগদ টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র হাতিয়ে নিয়ে চম্পট দিয়েছে। পশুহাট, টার্মিনাল, রেলস্টেশন, ফুটপাথ থেকে অচেতন ব্যক্তিদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েই পুলিশ তাদের দায়িত্ব শেষ করেছে। পরবর্তীতে তাদের সুস্থ হওয়া, মামলা দায়ের, খোয়া যাওয়া টাকা-মালামাল উদ্ধারের ক্ষেত্রে পুলিশের আর কোনো ভূমিকা ছিল না বলে অভিযোগ উঠেছে।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার বিকেলের মধ্যে ২৯ ব্যক্তি সুস্থ হয়ে নিজ নিজ বাড়ির পথে রওয়ানা দিয়েছেন। অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়া অসুস্থরা একেকজন ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অচেতন অবস্থায় ছিলেন। হাসপাতালে এখনও দুই জন অজ্ঞান অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেছে। এরমধ্যে নাঈমুর রহমান নামে এক যুবকের গত তিন দিনেও জ্ঞান ফেরেনি। তার অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন উল্লেখ করে কর্তব্যরত ডাক্তার বাংলানিউজকে জানান, এ রকম দীর্ঘমেয়াদি অচেতন থাকাটা নজিরবিহীন। তাকে এতই বেশি মাত্রার চেতনানাশক কিছু সেবন করানো হয়েছে-এতে মৃত্যু হওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল বলেও মন্তব্য করেছেন ডাক্তার।

তিন দিন ধরে অচেতন থাকা নাঈমুর রহমানের (২২) পিতার নাম আব্দুর রশিদ, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ থানার চরশংকর গ্রামে তার বাড়ি। তার বড় ভাই আলম জানান, নাঈমুর গাজীপুরের স্কয়ার টেক্সটাইল মিলের একজন কর্মচারী। ঈদের কেনাকাটা শেষে রাজধানীর মহাখালী টার্মিনাল থেকে গত সোমবার রাতে তিনি ময়মনসিংহের উদ্দেশে রওয়ানা দেন। গাড়িতে থাকাবস্থায় পথিমধ্যেই নাঈমুর অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েন। সোমবার গভীররাতে ময়মনসিংহ শহরের পাটগুদাম টার্মিনাল সংলগ্ন রাস্তায় অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে রিকসা চালকরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। কিন্তু দু’দিনেও নাঈমুরের চেতনা ফিরে না আসায় বুধবার রাতে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

নাঈমুরের ভাই আলম বাংলানিউজকে জানান, বুধবার রাত থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকলেও নাঈমুর রহমানের একবারের জন্যও জ্ঞান ফিরছে না। তিনি বলেন, ‘কাপড় চোপর, মোবাইল ফোন কেনাকাটার পরও নাঈমুরের কাছে নগদ ১২ হাজার টাকা ছিল বলে সে রওনা দেওয়ার সময় ফোন করে জানিয়েছিল। টাকা আর মালামাল পাওয়া দূরের কথা, এখন তার জীবন বাঁচানোই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ’

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরেকজন হচ্ছেন রেজাউল করিম (২৮)। তার পিতার নাম মো. আরমান খন্দকার, নরসিংদীর দরিয়া গ্রামে বাড়ি। রেলওয়ে পুলিশ বুধবার সকালে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। দীর্ঘ ৩৬ ঘন্টা পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬ টার দিকে একবার কয়েক মিনিটের জন্য রেজাউল করিমের চেতনা ফিরে এলেও পরক্ষণেই আবার অচেতন হয়ে পড়েন তিনি।

তার মামা মাহবুব খন্দকার জানান, রেজাউল করিম মেডিকেল সরঞ্জাম সরবরাহের ব্যবসা করতেন, থাকতেন চট্টগ্রামে। মঙ্গলবার রাতে তিনি নরসিংদী বাড়ি যাওয়ার জন্য চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে উঠেন। পথিমধ্যে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা তাকে অচেতন করে নগদ ১৫ হাজার টাকাসহ লক্ষাধিক টাকার মালামাল নিয়ে যায়। জ্ঞান ফিরে না পাওয়ায় নরসিংদী নামতেও পারেননি রেজাউল করিম-কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছানোর পর তাকে পুলিশ উদ্ধার করে। কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, রেজাউল করিম আগামি কয়েক ঘণ্টায় জ্ঞান ফিরে পেতে পারেন-তার সংকটাপন্ন অবস্থা অনেকটা কেটে গেছে।

এদিকে গত বুধবার রাজধানীর কমলাপুর পশুহাট থেকে ৮ জন, আগারগাঁও হাট থেকে ৩ জন, গাবতলী হাট থেকে ৪ জন ও আরমানিটোলা পশুহাট থেকে ২ জনকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। এদের মধ্যে ৫ জন গরু ক্রেতা থাকলেও বাকিরা সবাই ছিলেন গরু ব্যবসায়ী। চিকিৎসাধীন অবস্থায় দীর্ঘ ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অচেতন থাকার পর বৃহস্পতিবার তাদের জ্ঞান ফিরে। এদের মধ্যে রাজবাড়ি পাংশা এলাকার গরু বেপারি ফজলু (৩৫), হাশেম মাতব্বর (৪২) ও নজরউদ্দিন (৫২) মোট ৭টি গরু নিয়ে কমলাপুর পশুহাটে আসেন। গরুগুলো ২ লাখ ৭৬ হাজার টাকায় বিক্রি করেন তারা। হাটের মধ্যেই তিনজন নাস্তা করেছেন, পানি খেয়েছেন- আর কোনো কিছু তাদের মনে নেই।

একইভাবে গাবতলী পশুহাট থেকে গরু ব্যবসায়ি নাটোর গুরুদাসপুরের মানিক মিয়া (৪০), টাঙ্গাইল নাগরপুরের মিজানুর রহমান (৩৮), নাগরপুরের সাহাবুদ্দিন (৩৫), মানিকগঞ্জ দৌলতপুর চরের নিজাম মিয়া ও আরমানিটোলা হাটের নজরআলী বেপারি (৫৫), রুস্তমপুর কেরানীগঞ্জ ও রেজাউন্নবী (৩০) শ্রীনগর, মুন্সীগঞ্জের নাম-ঠিকানা বিস্তারিত পাওয়া গেছে। তারা সবাই ছিলেন গরু ব্যবসায়ী। গরু বিক্রির টাকা নিয়ে তারা কেউ বাড়ি ফিরে যেতে পারেননি। এর আগেই অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে সব হারিয়ে হাসপাতালে কাটাতে হয়েছে তাদের।

এ ব্যাপারে মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক মহিবুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, তাদের অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। সে মুহূর্তে কারো নাম ঠিকানা পর্যন্ত জানার উপায় ছিল না। পরবর্তীতে তারা কেউ আর থানায় যোগাযোগ করেনি বলে আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ২২৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।