ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

ঈদের দিনেও কোরবানির হাট, হতাশ বিক্রেতারা

তুহিন শুভ্র অধিকারী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১০
ঈদের দিনেও কোরবানির হাট, হতাশ বিক্রেতারা

ঢাকা: ঈদে বিক্রির জন্য ২০টি গরু কিনেছিলাম। বিক্রি হয়েছে ১৭টি।

বাকী তিনটি বিক্রির চেষ্টা করছি। কিন্তু দাম এতো কম বলছে যে, কোনোভাবেই বিক্রি করতে পারছি না। যে গরুগুলো বিক্রি করেছি তাতে এরই মধ্যে ২০ হাজার টাকার উপরে লোকসান হয়ে গেছে। ”

ঈদের দিন গাবতলী হাটে একথা বলছিলেন পাবনার গরু-ব্যবসায়ী ফজলু পরামানিক।   তার মতো এমন হতাশার কথা শোনা গেলো অধিকাংশ গরু-ব্যবসায়ীর মুখে। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী এবার গরুর দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের।

হাটের ভেতরে কথা হয় মেহেরপুর থেকে আসা গরু-ব্যবসায়ী আবদুল মান্নানের সঙ্গে। তিনি জানালেন ৯টি গরু নিয়ে এসেছিলেন, বিক্রি হয়েছে ৮টি। আর তাতেই তার লোকসান হয়েছে ৩০ হাজার টাকার উপরে। লোকসান হচ্ছে তারপরও কেন বিক্রি করছেন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘চালানতো উঠাতে হবে। তাছাড়া ফেরত নিলে লোকসান আরো বাড়বে।

ঈদ পালনের কথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘ব্যবসাই ভালো না আবার ঈদ। এখনো নাস্তাই খাওয়া হয়নি। ’

মানিকগঞ্জের গরু ব্যবসায়ী তারা মিয়াকে দেখা গেলো মিনতিভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন ক্রেতার দিকে। তিনি জানান, আট লক্ষ টাকা সুদে আর নিজের ছয় লক্ষ টাকা দিয়ে ঠাকুরগাঁ থেকে ৬২টি গরু কিনেছিলেন। ঈদের দিন দুপুর পর্যন্ত বিক্রি করতে পেরেছেন মাত্র ১৯টি।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘ভাই খাওয়া-দাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। সকাল থেকে মাত্র একটি সিংগারা খেয়েছি। পেটে ভাত যায় না। ’

গরু বিক্রি করতে পারলেন না ধার কিভাবে পরিশোধ করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ধার যখন নিয়েছি পরিশোধ করতে হবে। এখন নিজের চালান থেকে দিতে হবে। ’

তারা মিয়ার পাশের গরু ব্যবসায়ী হারুনুর রশীদ অবশ্য জানান অন্য কথা। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘গত ঈদের অভিজ্ঞতা থেকে আগে আগে গরু বিক্রি করে ফেলায় অনেকের লোকসান হয়েছে। তবে ঈদের আগের রাতে বাজার ভালো ছিল। ’

তিনি বলেন, ‘রোজার ঈদের পর থেকে অ্যানথ্রাক্সের কারণে ব্যবসায়ীরা যে লোকসানের মুখোমুখি হয়েছিল এ ঈদেও অনেকে তা কাটিয়ে উঠতে পারবে না। কারণ এ হাটের তিন-চতুর্থাংশ ব্যবসায়ীই লোকসানের মুখোমুখি হবে এ ঈদে।

এদিকে গরুর দাম কিছুটা কম হওয়ায় খুশি ক্রেতারা। গরু বিক্রি করে বিক্রেতারা যখন চালান তুলতে ব্যস্ত তখন ঈদের দিনেও দেখাগেলো ক্রেতারা আসছেন গরুর হাটে।

বংশাল থেকে আগত মনির হোসেন জানান, গতকাল (মঙ্গলবার) একটি গরু কিনেছি। তবে হাটে গরুর দাম তুলনামূলক কম থাকায় বেচে যাওয়া টাকা দিয়ে আজ আরো একটি গরু কিনলাম।

তবে দাম কম এমনটা মানতে নারাজ ঈদের দিনে গরু কিনতে আসা অনেকেই। লালবাগ থেকে আসা এক ক্রেতা বলেন, ‘ঈদের দিন গরু কিনবো বলে নিয়ত করেছিলাম। তাই আজ (বুধবার) গরু কিনতে এসেছি। তবে দামতো কম দেখছি না। ’

এদিকে, বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মো. শাহীন আহম্মেদ বলেন, ‘আমরা আশা করছি এবার ১০ লাখের মতো বেশি পশু জবাই করা হবে। গতবার এর সংখ্যা ছিলো ৪৫ লাখের মতো। ’

তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে অ্যানথাক্সের কারণে গরু বিক্রি ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ায় এবারের ঈদে গরুর চালান ছিল তুলনামূলকভাবে বেশি। আর তাই দাম কিছুটা কম বলে মনে করছেন অনেকে। ’

গাবতলী হাট কর্তৃপক্ষ জানায়, গত দু’দিনে বাজার অনেক ভালো ছিলো। তবে তার আগে বিক্রি তেমন ভালো ছিলো না। মানুষ কোরবানির দু’দিন আগে থেকেই মূলত গরু কিনতে শুরু করেছিল।

গাবতলী হাটের ক্যাশিয়ার বাদল হোসেন বলেন, ‘এবার গরুর দাম তুলনামূলক কম থাকায় ক্রেতারা সবাই গরু কিনতে পেরেছে। তবে গতবারের চেয়ে এবার গরুর দাম কম থাকায় ব্যবসায়ীরা আশানুরূপ ব্যবসা করতে পারেনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, নভোম্বর ১৭, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।