ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বিভিন্ন স্থানে একদিন আগেই ঈদ উদযাপন

ডেস্ক রিপোর্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১০
বিভিন্ন স্থানে একদিন আগেই ঈদ উদযাপন

ঢাকা: সরকার ঘোষিত সময়ের একদিন আগেই মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন স্থানে ঈদুল আযহা উদযাপন করেছেন দেশের দেড় লক্ষাধিক মুসলমান। সারা দেশের অধিকাংশ মুসলমান বুধবার  ঈদুল আযহা উদযাপনের প্রস্তুতি নিলেও এই দেড় লাখ মানুষ  ঈদ উদযাপন করেছেন সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে।



আগাম ঈদ উদযাপনকারী এসব মানুষ হানাফি মজহাবের অনুসারী এবং চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার সিলসিলিয়া আলীয়া জাহাগীর ও শরীয়তপুরের সুরেশ্বরী দরবার শরীফের পীরের মুরিদ।

চান্দ্রমাসের হিসাবে সাধারণত বাংলাদেশের চেয়ে একদিন আগে ঈদ উদযাপিত হয় সৌদি আরবে।

কিন্তু চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, পটুয়াখালী, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ভোলা, শেরপুর ও বরগুনার পাথরঘাটার প্রায় পৌনে দুই শতাধিক গ্রামের দেড় লক্ষাধিক মুসলমান সৌদি আরবের মতো মঙ্গলবারেই ঈদ উদযাপন করেছেন। দিয়েছেন পশু কোরবানি।

দেশের বিভিন্ন স্থানে আগাম ঈদ উদযাপনের খবর পাঠিয়েছেন বাংলানিউজ-এর জেলা প্রতিনিধিরা।

চট্টগ্রাম: দক্ষিণ চট্টগ্রামের ৭টি উপজেলার ৩০টি গ্রামে মঙ্গলবার পালিত হয়েছে পবিত্র ঈদুল আযহা। সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে দেশে প্রচলিত নিয়মের একদিন আগেই এসব গ্রামের প্রায় দুই হাজার পরিবার আজ পশু কোরবানি দিয়েছেন।

জনশ্রুতি আছে, প্রায় দু’শ বছর আগে সাতকানিয়ার সিলসিলিয়া আলীয়া জাহাগীর দরবার শরীফের পীরসাহেব তার মুরিদদের নির্দেশ দিয়েছিলেন সৌদি আরবে যেদিন চাঁদ দেখা যাবে পরদিন থেকেই বিশ্বের সবখানে রোযা পালন শুরু হবে। একইভাবে ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহাও পালন করতে হবে সৌদি আরবের অনুসরণে। এরপর থেকেই এসব গ্রামে সৌদি আরবের রীতি অনুসারে রোযা ও দুটি ঈদ পালন চলে আসছে।

দণি চট্টগ্রামে আজ সবচেয়ে বড় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে সাতকানিয়ার মীর্জারখীল জাহাগীর পীরের দরবার শরীফে।

সাতকানিয়াসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে আগাম ঈদ উদযাপনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাতকানিয়া থানার ওসি’র দায়িত্বে থাকা জ্যেষ্ঠ পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম।

চাঁদপুর: চাঁদপুর জেলার ৪০ গ্রামের ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ মঙ্গলবার পবিত্র ঈদুল আযহা উদ্যাপন করেছেন। বিগত শতাব্দীর প্রথম দিক থেকেই এসব গ্রামের লোকজন সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদসহ সকল প্রকার ধর্মীয় উৎসব পালন করেন।

সকাল ১০টায় হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা দরবার ঈদগাহ্ মাঠে আগাম ঈদের প্রধান জামাত অনুুিষ্ঠত হয়। এতে ইমামতি করেন মাওলানা আবু জোফার মোহাম্মদ আব্দুল হাই।

এ মতবাদে বিশ্বাসী মুফতি যাকারিয়া আল মাদানী যুক্তি দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ কাবাঘর থেকে ৫০ ডিগ্রি ১২ দ্রাঘিমা পশ্চিমে অবস্থিত। বাংলাদেশের সঙ্গে কাবা ঘরের সময়ের ব্যবধান মাত্র ৪ ঘণ্টা ২০ মিনিট ৪৮ সেকেন্ড। অতএব, আমরা আরব দেশের পরে কেন ঈদসহ ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালন করব?

পটুয়াখালী: পটুয়াখালীর ২২ গ্রামের কয়েকশ পরিবারের প্রায় ২০ হাজার মানুষ মঙ্গলবার পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপন করেন।

পটুয়াখালীতে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় বদরপুর দরবার শরীফে সকাল ৯টায়। জামাত পরিচালনা করেন দরবার শরীফের পীরজাদা মুতাওয়াক্কিল বিল্লাহ।

পাথরঘাটা (বরগুনা): পাথরঘাটা উপজেলার কাঁঠালতলী ও কাকচিড়া ইউনিয়নের শিংড়াবুনিয়া, শতকরসহ বেশ কটি গ্রামের  মানুষ মঙ্গলবারেই ঈদ উদযাপন করেন।

আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল আযহার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।

শরীয়তপুর: শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় ১২টি গ্রামের প্রায় ৭ হাজার মানুষ মঙ্গলবার উদযাপন করেছেন পবিত্র ঈদ-উল-আযহা।

সুরেশ্বর দরবার শরীফের বর্তমান গদীনশীন পীর সৈয়দ কামাল নূরী সুরেশ্বরী বাংলানিউজকে জানান, ‘হাজার হাজার মুরীদান ঈদ উদযাপনের জন্য দরবার শরীফে উপস্থিত হন। ’

মাদারীপুর: মাদারীপুর জেলার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ মঙ্গলবার পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপন করেন।

সুরেশ্বর দরবার শরীফের পীরজাদা মাহতাব শাহ্ নূরী জানান, পবিত্র মক্কা শরীফের সঙ্গে মিল রেখে মাদারীপুর জেলার প্রায় ৫০ হাজার ভক্ত মঙ্গলবার ঈদ-উল-আজহা পালন করেছেন।

মাদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার বাংলানিউজকে আগাম ঈদ উদযাপনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, এ জেলার বিভিন্ন উপজেলার অর্ধশতাধিক গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ মঙ্গলবার ঈদ-উল-আজহা উদযাপন করেন।

মঙ্গলবার ৯টায় মাদারীপুর চরকালিকাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ, কালকিনির আন্ডারচর খানকায় শরীফ মাঠ ও সাহেবরামপুর খানকায় শরীফ মাঠে ঈদের বৃহৎ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

ভোলা: ভোলার ১৪ গ্রামের ২ হাজার পরিবার আজ মঙ্গলবার ঈদ উদযাপন করেছেন। সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও তারা একদিন আগে উদযাপন করেছেন ঈদুল আযহা।

সুরেশ্বর দরবার শরীফের পীরের অনুসারী ও ভোলা জেলার দায়িত্বে নিয়োজিত খলিফা মো: মজনু মিয়া বাংলানিউজকে জানান, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় বোরহানউদ্দিন উপজেলার টবগী ইউনিয়নের মজনু মিয়ার বাড়ির আঙিনায় ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

সুরেশ্বর পীরের অপর মুরিদ বোরহানউদ্দিন উপজেলার টবগী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য হারুনর অর রশিদও ওই অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামে ঈদ উদযাপনের কথা জানান।

টবগী ইউপি চেয়ারম্যান কামালাউদ্দিন ওই অঞ্চলে আগাম ঈদ সম্পর্কে একই তথ্য দেন।

জেলার অনেক স্থানে মঙ্গলবার ঈদ উদযাপনের সত্যতা নিশ্চিত করে ভোলা জেলা পুলিশ সুপার বশির আহমেদ জানান, এটা ধর্মীয় অনুভূতির ব্যাপার।

শেরপুর: শেরপুরের তিন উপজেলার চারটি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ ঈদ উদযাপন করেছেন মঙ্গলবার। গ্রামগুলো হচ্ছে শেরপুর সদর উপজেলার ঘুঘুরাকান্দি ইউনিয়নের চরখার চর, ঝিনাইগাতী উপজেলার সদর ইউনিয়নের চতল এবং নালিতাবাড়ি উপজেলার নন্নী ইউনয়নের নন্নী ও মধ্যপাড়া গ্রামে। সদর উপজেলার চরখার চর গ্রামের ঈদের জামাতের নামাজ পড়ান মাওলানা জুলহাস উদ্দিন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।