ঢাকা, সোমবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

তিনি শুধুই গুলি করার হুমকি দেন!

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৩
তিনি শুধুই গুলি করার হুমকি দেন!

ময়মনসিংহ: তিনি শুধুই গুলি করার হুমকি দেন। শুধু হুমকি দিয়েই ক্ষান্ত হয় না তিনি; গুলিও করেন।

তাও আবার জনতার ওপর। এবার তিনি এক মন্ত্রীর দফতরে ঢুকে দুজনকে গুলি করার হুমকি দিলেন। এ ব্যক্তি আর কেউ নন, তিনি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ক্যাপ্টেন (অব.) গিয়াস উদ্দিন আহমেদ।

বিদায়ী বছরে জনরোষ থেকে বাঁচতে নিজ নির্বাচনী এলাকার জনগণকে লক্ষ করে গুলি ছুড়ে দেশব্যাপী সমালোচিত হয়েছিলেন ময়মনসিংহ-১০ গফরগাঁও আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য ক্যাপ্টেন (অব.) গিয়াস উদ্দিন আহমেদ।

নতুন বছরের প্রথম মাসেই ফের আলোচনায় এসেছেন অবসরপ্রাপ্ত সাবেক এ সেনা কর্মকর্তা। এ যাত্রাতেও আলোচনায় যোগ হয়েছে তার সেই পুরনো গুলি করার হুমকিই। তবে, এবার নিজ এলাকার বাসিন্দা নয়, খোদ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আফছারুল আমিনের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ইউসুফ ও কম্পিউটার অপারেটর মাঈনুদ্দিন ভূঁইয়াকে বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলি করার হুমকি দিয়েছেন নিজের প্রত্যাশা মাফিক তদবির না হওয়ার জন্য।  

ঘটনাটি দেশের অন্যতম অনলাইন নিউজপোর্টাল বাংলানিউজসহ অন্যান্য মিডিয়ার কল্যাণে নিজ নির্বাচনী এলাকা গফরগাঁওয়ে ছড়িয়ে পড়তেই সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। বেশিরভাগ মানুষ হঠাৎ করে রাজনীতিতে যোগ দেওয়া এ নব্য রাজনীতিকের ‘মাথা গরম’ স্বভাবকে দায়ী করেছেন।

কেউ কেউ বলছেন, “সংসদ সদস্য হয়ে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়েছেন এ সংসদ সদস্য। প্রায় সময়ই কারণে-অকারণে নিজ নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দাদের গুলি করার হুমকি দেন তিনি। চরম দুর্ব্যবহার করেন। গুলি করার হুমকি তার জন্য রীতিমতো ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ”

তবে, এ বিষয়ে ময়মনসিংহ-১০ গফরগাঁও আসনের সংসদ সদস্য ক্যাপ্টেন (অব.) গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজের কাছে নিজের ব্যাখ্যা তুলে ধরেন।

এমপি গিয়াস বলেন, “আমি মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিলাম মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে। মন্ত্রীর এক কর্মকর্তা আমার ব্যক্তিগত সহকারীর (পিএস) সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে। আমি সেই বিচার দিতেই সেখানে গিয়েছিলাম। ”

৩ থেকে ৪ দিন ধরে ঢাকার বারডেম হাসপাতালে অসুস্থ থাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন দাবি করে ক্যাপ্টেন (অব.) গিয়াস উদ্দিন আহমেদ এমপি বলেন, “আমি গুলি করার কোনো হুমকি দেইনি। এগুলো বিএনপি-জামায়াত বানায়। ”

তিনি আরও বলেন, “আমি এমপি। আমি কি পিস্তল নিয়ে মন্ত্রণালয়ে যাবো?” উল্টো এমন প্রশ্ন করেন এ সংসদ সদস্য।  

আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা বাংলানিউজকে জানান, রাজনীতিতে আসার আগে সাবেক সেনা কর্মকর্তা ছিলেন ক্যাপ্টেন (অব.) গিয়াস উদ্দিন আহমেদ। ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের উপজেলার নিগুয়ারী ইউনিয়নের পাতলাসি গ্রামের এ বাসিন্দা নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় জনসাধারণ এমনকি দলীয় পরিমণ্ডলেও অপরিচিত ছিলেন।

সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার আগে চট্টগ্রামে তিনি জাহাজের ব্যবসা করতেন। মাঝে-মধ্যে নিভৃতে নিজ এলাকায় আসতেন। কিন্তু আকস্মিকভাবে সবাইকে অবাক করে দিয়ে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন পান। এর পর থেকেই তার বেপরোয়া স্বভাব জনসম্মুখে প্রকাশ পেতে থাকে।

সংসদ সদস্য হওয়ার পর থেকেই সাংবাদিক নির্যাতন থেকে শুরু করে বালুমহাল দখল, বিএনপির অফিস দখল করে আওয়ামী লীগের অফিস নির্মাণ, টেন্ডার ভাগাভাগি, ব্যাংক ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে কমিশন আদায়সহ ব্যাপক অভিযোগ ওঠে এ সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে।

সূত্র জানায়, বিভিন্ন সময়ে এ সংসদ সদস্য নিজেকে জাহির করেন ‘বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যা মামলার আসামি’’ হিসেবে। বৃহস্পতিবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আফছারুল আমিনের কাছেও নিজের এ পরিচয় জাহির করেন তিনি।

অবশ্য এ বিষয়ে ক্যাপ্টেন (অব.) গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমি জিয়াউর রহমান হত্যা মামলার আসামি, এটা নতুন করে মন্ত্রীকে বলার কিছু নেই। তিনি নিজেও এ বিষয়টি জানেন। ”

“কিছু হলেই মিডিয়া আমার বদনাম খোঁজে” মন্তব্য করেন তিনি।

স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, গফরগাঁওয়ের পাগলা থানা ইস্যুকে কেন্দ্র করে জনরোষ থেকে রেহাই পেতে গত বছরের ১৮ মে উপজেলার উস্থি ইউনিয়নের কান্দিপাড়া বাজার এলাকায় নিজের রিভলবার থেকে গুলি ছোড়েন সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দিন আহমেদ।
পরে এ ছবি ফলাও করে পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়ে সরকারি দল। এর পর নিজ নির্বাচনী এলাকায় অনেকটাই একঘরে হয়ে পড়েন তিনি।


গিয়াস উদ্দিন আহমেদ সম্পর্কে লংগাইর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একাংশের আহ্বায়ক নিজাম উদ্দিন সরকার বলেন, “মাথা গরম স্বভাবের এ রাজনীতিক দলকে বিভিন্ন সময় বেকায়দায় ফেলেছেন। তার উগ্র মেজাজের কারণে দলীয় ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। ”

গফরগাঁও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক তারিকুল ইসলাম রিয়েল ও স্থানীয় যুবলীগ নেতা আব্দুল মান্নান পল্টন অভিন্ন সুরে বলেন, “রাজনীতির শীতের পাখি এমপি গিয়াস আগে গফরগাঁও আওয়ামী লীগের বোঝা ছিলেন। এখন তিনি সারা দেশে আওয়ামী লীগের বোঝা। ”

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৩
সম্পাদনা: প্রভাষ চৌধুরী, নিউজরুম এডিটর, আশিস বিশ্বাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।