ঢাকা, রবিবার, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ মে ২০২৪, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

`এখানে আমার রাজনীতি শেষ নয়`

হলমার্ক কেলেংকারি: ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ নাকচ করলেন কমল

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৩
হলমার্ক কেলেংকারি: ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ নাকচ করলেন কমল

চট্টগ্রাম: বহুল আলোচিত হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদকে ম্যানেজ করতে তিন কোটি টাকা ঘুষ দাবি এবং ৫০ লক্ষ টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন সাবেক পরিচালক সাইমুম সরওয়ার কমল।

একইসঙ্গে সোনালী ব্যাংকের পরিচালকের পদ ব্যবহার করে কোন ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি করেননি বলেও দাবি করেছেন কমল।



শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে কমল বলেন, `আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করার জন্য কক্সবাজারের একটি গ্রুপ হলমার্কের এমডি তানভীর মাহমুদের শ্যালককে ১৩ লক্ষ টাকা দিয়ে এ বিতর্কের অবতারণা করেছে। কিন্তু এখানেই আমার রাজনীতি শেষ নয়। আমি পচে যায়নি। আমাকে যারা বিব্রত করার চেষ্টা করছে তারাই একদিন জনগণের কাছে পচে যাবে। `

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও বর্তমানে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা সাইমুম সরওয়ার কমল বিগত সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজারের রামু-সদর আসন থেকে নির্বাচন করে পরাজিত হন। এরপর তাকে রাজনৈতিক বিবেচনায় সোনালী ব্যাংকের অন্যতম পরিচালক করা হয়।

সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেংকারির ঘটনা উদঘাটনের পর সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাইমুম সরওয়ার কমলকে জড়িয়ে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, তিনি সোনালী ব্যাংক পরিচালনা পরিষদকে ম্যানেজ করতে হলমার্কের এমডি তানভীর মাহমুদের কাছে তিন কোটি টাকা ঘুষ দাবি করেন। তাদের মধ্যে ব্যাংকের বারান্দায় ৫০ লক্ষ টাকা ঘুষও লেনদেন হয়।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত এসব সংবাদের ভিত্তিতে নিজের বক্তব্য জানাতে নগরীর আগ্রাবাদের একটি রেস্টুরেণ্টে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন সাইমুম সরওয়ার কমল।

সংবাদ সম্মেলনে কমল তাকে জড়িয়ে উঠা ঘুষ দাবি ও গ্রহণের অভিযোগকে অবাস্তব বলার পক্ষে চারটি যুক্তি তুলে ধরেন।

কমল বলেন, `তিন হাজার ৮`শ কোটি টাকার মত ব্যাপক দুর্নীতি সামাল দিতে পর্ষদের ১১ জনকে মাত্র তিন কোটি টাকায় ম্যানেজ করার বিষয়টি অবাস্তব। তিন হাজার ৮`শ কোটি টাকার দুর্নীতি ধামাপাচাপ দিতে ১১ জন কি মাত্র তিন কোটি টাকায় রাজি হবে ?

তিনি বলেন, `কোন ব্যাংকের পরিচালক ওই ব্যাংকের কোন শাখার বারান্দায় ৫০ লক্ষ টাকার মত এত অধিক টাকা নেয়া অবাস্তব। কারণ এত টাকা নেয়ার জন্য একটি বড় বাক্সের প্রয়োজন হবে। একজন পরিচালকের পক্ষে ব্যাংকের বারান্দায় দাঁড়িয়ে টাকার বাক্স গ্রহণ করা কি সম্ভব ?`

তিনি বলেন, `দুর্নীতি ধরা পড়েছে ২০১২ সালের ২২ মে। কিন্তু টাকা লেনদেনের কথা বলা হয়েছে এক মাস আগে এপ্রিলে। দুর্নীতি ধরা পড়ার আগে কেন শুধু শুধু পর্ষদের জন্য টাকা দেবে ?`

তিনি আরও বলেন, `পর্ষদে যদি হলমার্কের ফাইল আসে বা আসার পাইপ লাইনে থাকে তবে পর্ষদ ম্যানেজ করার প্রশ্ন আসে। কিন্তু গত দেড় বছরেও হলমার্কের ফাইল আসেনি। এক্ষেত্রে অনর্থক পর্ষদকে ম্যানেজ করার প্রশ্নই আসেনা। `

হলমার্কের বিপুল পরিমাণ ঋণ নেয়ার বিষয়টি পরিচালকরা জানতেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন, `হলমার্কের এসব ঋণ একসঙ্গে ছাড় হয়নি। হলমার্কের ২৬টি বেনামী কোম্পানির নামে সোনালী ব্যাংকের ৬২টি শাখায় ৬২টি অ্যাকউন্টের বিপরীতে ১৩ হাজার কিস্তিতে এসব টাকা দেয়া হয়েছে। এটা পর্ষদের বোঝার উপায় নেই। `

তিনি বলেন, `একটি প্রশ্ন উঠেছে, এত টাকা গেল, বোর্ড দেখল না কেন ? এর উত্তর হচ্ছে, আমাদের দায়িত্ব ছিল শুধু নীতিনির্ধারণ করা। সোনালী ব্যাংকের এক হাজার দু`শ শাখায় লেনদেন, আমানত সংগ্রহসহ রুটিন কাজের দায়িত্ব ম্যানেজমেন্টের। `

তাকে জড়িয়ে এ বিতর্ক শুরুর বিষয়ে কমল বলেন, `রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ৩৮ জন পরিচালকের মধ্যে আমরা দু`জন শুধু গত সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলাম। আমাদের ২-৩ জন সাবেক ছাত্রনেতা ছিলেন। আমি রাজনীতিতে সক্রিয়, নির্বাচন করেছিলাম, সেজন্য আমাকে জড়াতে পারলে পর্ষদ ও সরকারকেও জড়ানো যাবে বলে ভেবেছিলেন হলমার্কের এমডি। `

পরিচালক পদে যোগদানের পর থেকে সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের কথা উল্লেখ করে কমল বলেন, `সোনালী ব্যাংকের মুনাফা ২৩৮ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ১৩২ কোটি টাকায় উত্তীর্ণ করেছি। টাকা আদায় করে ঋণখেলাপীর সংখ্যা ৩২ ভাগ থেকে ১৭ ভাগে নিয়ে এসেছি। `

কমল বলেন, `নির্বাচনের মাত্র এক বছর আগে এ ষড়যন্ত্র আমাকে বিব্রত করেছে। দেশবাসীর কাছে আমাকে হেয় করলেও কক্সবাজারবাসীর কাছে এ বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য নয়। ঢাকায়, চট্টগ্রামে আমার নামে এক ইঞ্চি জায়গা নেই। আমার বাবা রাষ্ট্রদূত ছিলেন। আমরা চার পুরুষের জমিদার। আমাদের জমির উপর কক্সবাজারে অনেক স্কুল, কলেজ আছে। আমি অনেক টাকা আয় করি, কিন্তু সব বৈধ পথে। আমি খরচ করি মানুষের পেছনে। `

তিনি বলেন, `আমাকে এবং সব পরিচালকদের দুদক ডেকেছিল। কিন্তু আমরা হলমার্কের ঘটনার সঙ্গে জড়িত না থাকায় দুদক আমাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। এরপর এ ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। `

বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২,২০১৩
আরডিজি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।