ঢাকা, সোমবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ মে ২০২৪, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

বান্দরবানের ১৩৭তম রাজপুণ্যাহ শুরু বৃহস্পতিবার

এস বাসু দাশ, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২, ২০১৩
বান্দরবানের ১৩৭তম রাজপুণ্যাহ শুরু বৃহস্পতিবার

বান্দরবান: পাঁচদিনব্যাপী ব্যাপক আয়োজনের মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার শুরু হতে যাচ্ছে বান্দরবানের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ১৩৭তম রাজপুণ্যাহ উৎসব (রাজ মেলা)।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকালে সৈন্য-সামন্ত নিয়ে রাজা তার রাজকীয় কায়দায় রাজভবন থেকে নেমে আসবেন, এসময় পাহাড়ি ঐতিহ্যে সানাই আর বিউগলের সুরে মেতে উঠবে পুরো রাজবাড়ি প্রাঙ্গন।



হাজারো ফুলেল গালিচার পথ বেয়ে রাজা আরোহণ করবেন রাজ সিংহাসনে। পরে এক এক করে প্রজাদের কাছ থেকে রাজ কর ও বিভিন্ন ধরনের উপঢৌকন গ্রহণ করবেন।

২০১২ সালে বান্দরবানের ১৫তম বোমাং সার্কেলের চিফ রাজা অংশৈ প্রু চৌধুরী মারা যাবার পর ১৬তম বোমাং রাজা হিসেবে ক্য সাইন প্রু চৌধুরী (কে এস প্রু) নতুন রাজা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
 
কে এস প্রু রাজা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এটাই প্রথম রাজপুণ্যাহ।

প্রায় দুইশ’ বছর আগের পাহাড়ি ঐতিহ্য অনুযায়ী বছরের শুরুতে একবার মেলার আয়োজনের মাধ্যমে রাজকর (রাজস্ব) আদায় করেন রাজা। তবে স্থানীয় বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ের কাছে রাজপূন্যাহ ‘পইংজারা পোওয়ে’ নামে সমধিক খ্যাত।

বুধবার বান্দরবান বোমাং রাজ পরিবার সূত্রে জানা গেছে, পাঁচদিনব্যাপী এই মেলার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিবছরের ধারাবাহিকতায় এবারও সকাল ১০টায় সিংহাসনে আরোহণ করে রাজকর আদায় করবেন বোমাং রাজা।

পাহাড়ের এই ঐতিহ্যবাহী মেলায় সার্কাস, পুতুল নাচ, মৃত্যুকূপ, যাত্রাপালার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন পণ্য নিয়ে শত শত দোকান বসেছে এখানে।

নতুন রাজার রাজপুণ্যাহ উৎসব পরিচালনায় পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। এ অবস্থায় আয়োজনে কোনো ঘাটতি না রাখার জন্য এরই মধ্যে বিভিন্ন সম্প্রদায় ও সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করে সব প্রস্তুতি শেষ করেছে বোমাং রাজ পরিবার।

সাবেক রাজার সন্তান চ হ্লা প্রু (জিমি) বাংলানিউজকে বলেন, সাবেক ও বর্তমান রাজার সন্তান ও রাজ পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে করা এক বৈঠকে এবারের পূণ্যাহ পাঁচদিনব্যাপী করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

রাজ পরিবারের বিভিন্ন সূত্র জানায়, এবারের রাজপুণ্যাহর মূল আনুষ্ঠানিকতায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি, খাগড়াছড়ি মং সার্কেলের রাজা সাচিং প্রু চৌধুরী, সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকছেন। তবে বিদেশ সফরের কারণে উপস্থিত থাকতে পারছে না রাঙামাটি চাকমা সার্কেলের চাকমা রাজা দেবাশীষ রায়।

১২টি আদিবাসী সম্প্রদায় আর প্রায় ১৭৬৪ বর্গমাইল এলাকায় ১০৯টি মৌজা নিয়ে গঠিত বান্দরবান পার্বত্য জেলার বোমাং সার্কেল। আর এই বোমাং সার্কেলে রাঙামাটি জেলার ১৪টি মৌজাও পড়েছে।

১৭২৭ সাল থেকে বোমাং রাজার ইতিহাস শুরু হলেও ১৮৭৫ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে বোমাং রাজারা রাজপুণ্যাহ করে আসছেন।

মৌজার প্রতি পরিবার বছরে ৬ টাকার রাজকর দেন আর তা থেকে সরকারের কাছে চলে যায় ২ টাকা ২৫ পয়সা, ১ টাকা ২৫ পয়সা পান মৌজার হেডম্যানরা। বাকি ২ টাকা ৫০ পয়সা পান বোমাং রাজা।

১৯০০ সালে রাজকর পরিবার প্রতি ৬ টাকা ছিল। ২০১২ সালে এসে তা ৬ টাকাই বহাল থাকায় রাজ কার্যক্রম চালাতে সমস্যা হচ্ছে, বিগত বছরগুলোতে এমন ক্ষোভ প্রকাশ করতেন প্রয়াত রাজা অং শৈ প্রু চৌধুরী।

বর্তমান রাজা কে এস প্রুর মেয়ে ডনাই প্রু নেলী বাংলানিউজকে বলেন, ‘সবার সহযোগিতায় রাজপূণ্যাহর সব প্রস্তুতি শেষ, এবার আনন্দে মেতে ওঠার পালা। ’

প্রসঙ্গত, প্রতিবছর বান্দরবানে রাজপুণ্যাহকে ঘিরে রাজবাড়ীর অঙ্গন পরিণত হয় পাহাড়ি-বাঙালির অনন্য মিলন মেলায়। নামে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ঢল। ফলে হোটেল-মোটেলগুলোতে দেখা দেয় তীব্র সিট সংকট।     

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০১৩
সম্পাদনা: শিমুল সুলতানা, নিউজরুম এডিটর[email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।