ঢাকা : অপর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা, জনবল সংকট এবং সঠিকভাবে তদারকির অভাবে খোয়া গেল জাতীয় জাদুঘরের ২৬টি মূল্যবান সামগ্রী। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গত ৩০ জুন সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি-কে নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ।
সাময়িক বরখাস্তরা হলেন তারা হলেন উপ-কিপার নূরে নাসরিন, সহকারী কিপার সাইফুজ্জামান, নিরাপত্তাকর্মী দুলাল মিয়া, আবদুল করিম ও আলমগীর চৌধুরী।
জাদুঘর সূত্রে জানা গেছে, জাদুঘরের দ্বিতীয় তলার ২১ নং গ্যালারি (ইতিহাস ও ধ্রুপদি শিল্পকলা বিভাগ) থেকে এসব মূল্যবান সামগ্রী খোয়া যায়। এরমধ্যে রয়েছে মূল্যবান বিভিন্ন মুদ্রা এবং পদক। তবে মোট কতগুলো মুদ্রা এবং পদক খোয়া গেছে সে ব্যাপরে কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করতে পারেনি।
সূত্র জানায়, জাদুঘরের উপ-কিপার নূরে নাসরিন এর কাছে স্টোর এবং সহকারী কিপার সাইফুজ্জামান এর কাছে ওই গ্যালারির চাবি থাকে।
ইতিহাস ও ধ্রুপদি শিল্পকলার বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত কিপার ড. স্বপন কুমার বিশ্বাস জানান, মুদ্রা এবং পদক চুরির হয়েছে ঠিকই কিন্তু কখন কিভাবে এগুলো চুরি হলো তা তিনি জানেন না।
এদিকে, এ ঘটনায় জাদুঘর কর্তৃপক্ষ কিপার খতিবুল হুদাকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন ডেপুটি কিপার ড. শিখানূর মুন্সী ও রেজিস্ট্রেশন অফিসার সিরাজুল ইসলাম।
এছাড়া সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় যুগ্ম সচিব (প্রশাসন) মোশাররফ হেসেনকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট আরেকটি কমিটি করা হয়েছে বলে জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক প্রকাশ চন্দ্র দাস জানিয়েছেন।
প্রকাশ চন্দ্র দাস বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি’কে বলেন, ‘চার মাস আগে আমি এখানে ডেপুটেশনে মহাপরিচালক হিসেবে যোগদান করেছি। জাদুঘরে প্রায় চারটি বিভাগের ৪৪টি গ্যালারিতে ৯০ হাজার নিদর্শন সংরক্ষিত আছে। এসব নিদর্শন নিয়মিত রেজিস্টার বইয়ের এর সঙ্গে মিলিয়ে দেখার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু ২০০৪ সালের পর তা আর করা হয়নি। আমি এসে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে মাসিক সভা করি এবং প্রত্যেকটা বিভাগের রেজিস্টার এবং নিদর্শন মিলিয়ে দেখার নির্দেশ দিই। এই কাজ করতে গিয়েই ধরা পড়ে চুরির ঘটনা।
মুল্যবান সামগ্রী চুরির ঘটনা কিভাবে জানতে পারলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জাদুঘরের নিরাপত্তা বিভাগ থেকে প্রথম জানতে পারি।
সুত্র জানায়, জাদুঘরের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ গত মহাপরিচালক বরাবর ২৫ এপ্রিল চুরির ঘটনা জানিয়ে একটি চিঠি দিয়েছিলেন।
এব্যাপারে বেশ কয়েকবার সুলতান মাহমুদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
মহাপরিচালক জানিয়েছেন, ২০০৯ সালের জুলাই থেকে ২০১০ সালের এপ্রিল মাসের মধ্যে চুরির ঘটনা ঘটতে পারে।
আর কোনো মুল্যবান সামগ্রী খোয়া গেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মহাপরিচালক জানান, রেজিস্টার বই এবং নিদর্শনসমূহ মিলিয়ে দেখলে তা জানা যাবে, যা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এ ঘটনার জন্য জাদুঘরের লোকবল সংকট এবং অপর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে দায়ী করে মহাপরিচালক বলেন, পর্যাপ্ত লোকবল নিশ্চিত করা গেলে এ ধরনের ঘটনা এড়ানো সম্ভব। তাছাড়া মূল্যবান সামগ্রী সংরক্ষণের কোনো আধুনিক ব্যবস্থাও নেই।
মুল্যবান সামগ্রী ভালভাবে সংরক্ষণ করতে হলে জাদুঘরের সামগ্রীক ব্যবস্থাপনাকে ঢেলে সাজাতে হবে বলেও জানান তিনি।
তিনি জানান, চুরির ঘটনায় জাদুঘরের পলিসি বোর্ডের নির্দেশে ২ জুন শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি এবং ২৬ জুন একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রহিম বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে জানান, জাদুঘরে মূল্যবান জিনিসপত্র চুরির ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরে পুলিশ তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ।
তিনি জানান, সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. রেজাউল করিম সম্প্রতি এলপিআর’এ গেছেন। এলপিআর’এ যাওয়ার আগে তিনি জাদুঘরে রক্ষিত দ্রব্যাদি বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন কিনা তা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ না করে জানা সম্ভব নয়। গোপনীয়তার স্বার্থে এ বিষয়ে আর কোনো তথ্য জানাতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় : ১৯৪৬ ঘন্টা, জুলাই ৪, ২০১০।