ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

লালমনিরহাটে তিস্তার ভাঙনে তিন শতাধিক ঘরবাড়ি বিলীন

জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪২৪ ঘণ্টা, জুলাই ৪, ২০১০

লালমনিরহাট: তীব্র নদীভাঙনে জেলার তিন শতাধিক বসতবাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সহশ্রাধিক একর আবাদি জমি তিস্তার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনকবলিত এলাকার আরও কয়েকশ ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষ।



গত শনিবার থেকে রবিবার দুপুর পর্যন্ত জেলার হাতিবান্ধা উপজেলায় ৩৮টি, পাটগ্রাম উপজেলা ৩৬টি, কালিগঞ্জ উপজেলায় ২১টি, আদিতমারী উপজেলায় ৯২টি ও সদর উপজেলায় ৫২টি বসতঘর তিস্তাগর্ভে বিলীন হয়েছে।

ভাঙনে এক হাজার একরেরও বেশি আবাদি জমি ও গাছপালা নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে। ভাঙনের শিকার মানুষগুলো আশ্রয় নিযেছেন সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, উঁচু বাঁধ ও আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে। শত শত নারী-পুরুষ ও শিশু দিন কাটাচ্ছেন অনাহারে-অর্ধাহারে।

ভাঙনকবলিত পরিবারগুলোর মধ্যে সরকারিভাবে এ পর্যন্ত মাত্র ৩০ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে যা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। ফলে ভাঙনকবলিত এসব মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।

কাকিনা ইউপি চেয়ারম্যান মো. শহিদউদ্দিন সরকার জানান, চরবৌরাতি, কলাগুছি, ইসলিরচর, আমিনগঞ্জ, নোহালী গ্রামে তিস্তার ভাঙন প্রকট আকার ধারণ করেছে। গত দুদিনে এ কয়টি গ্রামের প্রায় ৫০টিরও বেশি ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

হাতিবান্ধার গড্ডিমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাহারউদ্দিন সরকার বলেন, চরধুবলী, উত্তর ও দণি গড্ডিমারী এবং ভ্যাসলের চরে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে।

তিনি বলেন, শুধু রবিবার সকালেই এ কয়টি গ্রামের ২৫টি বসতবাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে।

গড্ডিমারী গ্রামের রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমার বসতভিটা পাঁচবার ভাঙার পর আমি চার শতক জমির ওপর বাড়ি করে  ছেলেমেয়ে নিয়ে বেঁচে ছিলাম। রোববার সকালে সেটাও ভেঙে নিয়ে গেছে তিস্তা। এখন আমি রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছি। ’

মহিষখোঁচা গ্রামের ওমর আলী বলেন, তার বসতভিটা তৃতীয় বারের মতো ভাঙনের শিকার হলো। বসতভিটার সঙ্গে একটি লিচু বাগানও নদীগর্ভে চলে গেছে। বর্তমানে তিনি দুই সন্তান, স্ত্রী ও বৃদ্ধা মাকে নিয়ে এক আত্মীয়ের বাড়িতে উঠেছেন।

হাতিবান্ধা উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আশরাফুল আলম বলেন, ‘আমি তিস্তার ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি এবং ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপকে জানিয়েছি’।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মতিন বলেন, লালমনিরহাটের বিস্তীর্ণ এলাকায় তিস্তার ভাঙন ঠেকাতে পাউবো দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে। আরও জোড়ালো পদপে নেওয়ার জন্য বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো: মোখলেছার রহমান বলেন, ভাঙনের শিকার পরিবারগুলোকে এ পর্যন্ত ৩০ টন চাল দেওয়া হয়েছে। আরও ত্রাণ বিতরণের জন্য আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময়: ১৪৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।