হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আমদানি কার্গো ভিলেজে লাগা ভয়াবহ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় ৭ ঘণ্টা এবং পুরোপুরি নির্বাপণ করতে প্রায় সারে ২৬ ঘণ্টা সময় লেগেছে। এত সময় লাগার পেছনে একাধিক কারণ তুলে ধরেছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তারা।
রোববার (১৯ অক্টোবর) আগুন সম্পূর্ণ নির্বাপনের পর এক ব্রিফিংয়ে এই দীর্ঘসূত্রতার প্রধান কারণগুলো ব্যাখ্যা করেন ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী।
তিনি জানান, শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে খবর পেয়ে একে একে ৩৭টি ইউনিট অক্লান্ত পরিশ্রম করে রাত ৯টা ১৮ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। রোববার (১৯ অক্টোবর) বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে তা সম্পূর্ণ নির্বাপণ করা হয়।
আগুন নেভাতে দীর্ঘ সময় লাগার প্রধান কারণ হিসেবে ফায়ার সার্ভিস ৫টি বিষয় উল্লেখ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে— উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দাহ্য বস্তু (কম্বাসেবল মেটেরিয়াল) বেশি থাকা; স্টিল স্ট্রাকচারের কারণে তাপ শোষণ; অপরিষ্কার ও গাদাগাদি পরিবেশ; অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি; ছোট ছোট স্টিলের স্ট্রাকচার কেটে ভেতরে প্রবেশের জটিলতা।
লে. কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, কার্গো ভিলেজের কাস্টমস হাউজের অংশ এবং এর সামনের অংশগুলোতে প্রচুর পরিমাণে কম্বাসেবল মেটেরিয়াল ছিল। এই অতিরিক্ত দাহ্যতার কারণে আগুন নিভাতে দীর্ঘ সময় লেগেছে। স্টিলের স্ট্রাকচার বিপুল পরিমাণ তাপ শোষণ করেছে এবং এখনো তা রিলিজ করছে।
তিনি আরও বলেন, কার্গো কমপ্লেক্সের ভেতরের পরিবেশ ছিল অত্যন্ত ঘন এবং সরু, যেখানে ছোট ছোট কম্পার্টমেন্ট বা ঘরের মতো ভাগ ছিল। এর ফলে ফায়ার ফাইটারদের জন্য ভেতরে প্রবেশ ও আগুন নেভানোর কাজ কঠিন হয়ে পড়েছিল। কনফাইনড স্পেস এবং প্রচুর কম্বাসেবল মেটেরিয়ালের কারণে আমরা ফায়ার হুক দিয়ে ধীরে ধীরে আগুন নিয়ন্ত্রণ করেছি।
ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, কার্গো ভিলেজে কোনো সক্রিয় (ফায়ার অ্যালার্ম, ডিটেকশন সিস্টেম) বা প্যাসিভ (স্বয়ংক্রিয় প্রটেকশন সিস্টেম বা স্প্রিংকলার) অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। এজন্য আগুন নিয়ন্ত্রণে বাধা সৃষ্টি হয়েছে।
ছোট ছোট ভাগে ভাগ থাকায় স্টিলের স্ট্রাকচার কেটে ফায়ার ফাইটারদের ভেতরে প্রবেশ করতে হয়েছে, যা ছিল ঝুঁকিপূর্ণ এবং কষ্টসাধ্য। এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের দুইজন এবং আনসার বাহিনীর কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন। বড় ধরনের কোনো সিগনিফিকেন্ট দুর্ঘটনার খবর নেই।
তাজুল ইসলাম চৌধুরী জানান, এত বেশি তাপমাত্রায় থাকার কারণে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ। কিছু ফাটল দেখা গেছে, কলামেও ফাটল রয়েছে। ভবন কর্তৃপক্ষকে জরিপ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভেতরে থাকা ওষুধ ও বিভিন্ন বাই-প্রোডাক্ট থেকে কেমিক্যাল এজেন্ট তৈরি হওয়ায় কিছুটা পরিবেশগত ক্ষতির আশঙ্কা থাকলেও, মিরপুরের কেমিক্যাল গোডাউনের মতো তেজস্ক্রিয়তা বা বড় ধরনের প্রভাব নেই।
আগুন লাগার কারণ জানতে ইতোমধ্যেই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে। ফায়ার সার্ভিস নির্বাপণ ঘোষণা করলেও ধোঁয়া সম্পূর্ণ দূর না হওয়া পর্যন্ত চারটি ইউনিট ঘটনাস্থলে অবস্থান করবে।
ইএসএস/এসসি/এমএমআই/এমজে