ঢাকা, রবিবার, ৩ কার্তিক ১৪৩২, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ২৬ রবিউস সানি ১৪৪৭

জাতীয়

জুলাই যোদ্ধাদের ব্যানারে পুলিশের ওপর হামলা

সংঘর্ষে ‘ফ্যাসিস্টদের’ সংশ্লিষ্টতার ইঙ্গিত, নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন

আবাদুজ্জামান শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:২৭, অক্টোবর ১৯, ২০২৫
সংঘর্ষে ‘ফ্যাসিস্টদের’ সংশ্লিষ্টতার ইঙ্গিত, নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন

ঢাকা: জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জুলাই যোদ্ধাদের ব্যানারে পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ফ্যাসিবাদীদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে। পুলিশের করা ৪টি মামলার অভিযোগপত্রে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।

এখন পর্যন্ত রিমন চন্দ্র বর্মন নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, তৃতীয় কোনো পক্ষ বা ফ্যাসিবাদী মতাদর্শের লোকজন এতে জড়িত ছিল কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।  

শুক্রবার জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আয়োজিত জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের কিছু আগে ‘জুলাই যোদ্ধা’ ব্যানারে একদল লোক পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এরপর সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে তারা সরকারি যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ারশেল ও লাঠিচার্জ করে। এ ঘটনায় পুলিশের অন্তত ১০ সদস্য আহত হন।

সংঘর্ষের সূত্রপাত
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, জুলাই যোদ্ধাদের আইনি স্বীকৃতির দাবিতে শতাধিক ব্যক্তি সংসদ ভবন এলাকার ১২ নম্বর গেট টপকে ভেতরে ঢুকে পড়েন। তারা অনুষ্ঠানের মঞ্চের সামনে অতিথিদের জন্য সাজানো চেয়ারে বসে স্লোগান দিতে থাকেন।

বাধা দিতে গেলে তারা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। তারা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে, গাড়ি ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুরো মানিক মিয়া এভিনিউ এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।  

ঢাকা তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান বলেন, জুলাই যোদ্ধা ব্যানারে কিছু লোক নিরাপত্তা চৌকি অতিক্রম করে অনুষ্ঠানের দিকে এগিয়ে যায়। বোঝানোর চেষ্টা করলেও তারা পুলিশের ওপর আক্রমণ চালায়। পরে বাধ্য হয়ে টিয়ারসেল ও লাঠিচার্জ করা হয়।

শেরেবাংলা থানার ওসি ইমাউল হক জানান, হামলা, ভাঙচুর ও কন্ট্রোল রুমে অগ্নিসংযোগসহ চারটি মামলা হয়েছে। প্রতিটি মামলার বাদী পুলিশ। প্রায় ৯০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।  

এজাহারে বলা হয়েছে, ‘অজ্ঞাত সন্ত্রাসী, দুর্বৃত্তকারী, ক্ষতিসাধনকারী ও ফ্যাসিবাদী মতাদর্শের লোকজন এই হামলার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। ’

নিরাপত্তা ঘাটতি নিয়ে প্রশ্ন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, এত বড় ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানে নিরাপত্তার ঘাটতি স্পষ্ট ছিল। তৃতীয় পক্ষের  ইন্ধন বা অংশগ্রহণের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। পরাজিত শক্তিগুলো অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করতে পারে। আগেভাগে ঝুঁকি চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিলে সংঘর্ষ এড়ানো যেত।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) এস. এন. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। তদন্তেই জানা যাবে কারা এর পেছনে ছিল।

জুলাই সনদে স্বাক্ষর
সংঘর্ষের পরও শুক্রবার বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় জুলাই জাতীয় সনদ–২০২৫ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান। দীর্ঘ আলোচনার পর সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা ও বিচারবিভাগ সংস্কারের প্রস্তাবসহ তৈরি এই সনদে স্বাক্ষর করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, বিএনপি এবং আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দল।

তবে জুলাই অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) অনুষ্ঠানটিতে উপস্থিত ছিল না এবং সনদে স্বাক্ষরও করেনি।

এজেডএস/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।