ঢাকা: তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম বলেছেন, আবরার ফাহাদের শাহাদত জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বড় প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। তার শহীদ হওয়া বৃথা যায়নি।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে আবরার ফাহাদের ষষ্ঠ শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনী পর্বে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এ প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করে।
বিগত সরকারের ১৬ বছরের দুঃশাসনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ওই সময় আবরার ফাহাদের মতো কয়েক হাজার শিক্ষার্থীকে নিপীড়ন করা হয়েছে। মৃতপ্রায় অবস্থায় অনেকে বেঁচে গেছেন। বিগত সরকারের সময় প্রক্টর ও প্রভোস্ট নিজেরাই শিক্ষার্থীদের পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন। কারাগারেও ভিন্নমতের শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো থেকে প্রায়ই শিবিরের নামে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মেরে বের করে দেওয়া হতো।
মাহফুজ আলম বলেন, আবরার ফাহাদের শহীদ হওয়ার গভীর তাৎপর্য রয়েছে।
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা বলেন, শেখ হাসিনা যে ভুল করেছে, আমরা সেই ভুল করতে চাই না। ফ্যাসিজম যে প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়, আমরা সেই প্রক্রিয়ায় ঢুকতে চাই না।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শক্তির মধ্যে বিভাজনকে অপ্রত্যাশিত ও দুঃখজনক আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের বিভাজন এড়িয়ে চলতে হবে। একই সঙ্গে নাগরিকদের জন্য নিরাপদ রাষ্ট্র ও সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে হবে।
নিজেকে রাষ্ট্র গড়ার পক্ষের লোক দাবি করে উপদেষ্টা বলেন, ফ্যাসিবাদী সাংস্কৃতিক ব্যবস্থার বিপরীতে জনগণের সামনে ভালো বিকল্প উপস্থাপন করতে হবে। সেটি করতে না পারলে জনগণ পুরাতন সাংস্কৃতিক ব্যবস্থায় ফিরে যাবে।
মাহফুজ আলম বলেন, আমাদের দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সাংস্কৃতিক লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। তিনি বহু ভাষা, বহু সংস্কৃতি ও বহু ঐতিহ্যের বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
অনুষ্ঠানে সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ২০১৯ সালে বুয়েটে ছাত্রলীগের গুণ্ডারা আবরার ফাহাদকে হত্যা করেছে। তারা মনে করেছিল, আবরার ফাহাদকে হত্যা করে আধিপত্যবিরোধী কণ্ঠ স্তব্ধ করে দেওয়া যাবে। ইতিহাস বলে, আধিপত্যবিরোধী কণ্ঠ কখনো স্তব্ধ করে দেওয়া যায় না।
সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা আরও বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা অংশ নিয়েছেন, তাদের প্রত্যেকেই আবরার ফাহাদের হৃৎস্পন্দন ধারণ করেছেন। তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে আবরার ফাহাদের আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ন্যারেটিভ তৈরি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ের অন্যতম কাজ হলো জুলাইয়ের ন্যারেটিভ তৈরি করা। এর পাশাপাশি বিগত সরকারের ১৬ বছরের দুঃশাসনের ন্যারেটিভও তৈরি করতে হবে।
সাংস্কৃতিক বৈষম্যকে ফ্যাসিবাদের অন্যতম কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাংস্কৃতিক বৈষম্য থেকে জাতিকে বের হতে হবে। ধর্ম ও রাজনৈতিক বিশ্বাসের কারণে কাউকে আলাদা করা যাবে না। সব জাতিগোষ্ঠীকে এক জায়গায় আসতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের এমন এক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে, যে বাংলাদেশ ইতিহাসের সব অধ্যায়কে ধারণ করবে। তিনি ‘বাংলাদেশ’ ও ‘বাংলাদেশপন্থা’য় এক থাকার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান।
উদ্বোধনী পর্বে আরও বক্তব্য দেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা। অনুষ্ঠানে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং এর অধীন দপ্তর-সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী পর্ব শেষে অনুষ্ঠানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী শেষে সন্ধ্যায় একই স্থানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ওপর নির্মিত ও নির্মিতব্য চলচ্চিত্রের নির্মাতা ও কলাকুশলীদের অংশগ্রহণে ‘চলচ্চিত্রে জুলাই’ শিরোনামে প্যানেল ডিসকাশন অনুষ্ঠিত হয়।
এমআইএইচ/এসআই