ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

গাজীপুরে মহাসড়ক অবরোধ,ভাংচুর, প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে আপাত শান্তি

ড্যাপের বিরুদ্ধে ব্যাপক জনরোষ, আন্দোলন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৩ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০১০
ড্যাপের বিরুদ্ধে ব্যাপক জনরোষ, আন্দোলন

গাজীপুর : ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) ও রাজউকের নেওয়া প্রকল্পের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে গাজীপুরের মানুষ। শনিবার বিকেলে হাজার হাজার এলাকাবাসী এর বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।

এসময় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন তারা।

রাজউকের প্রকল্পের বিরোধিতা করে উত্তেজিত এলাকাবাসী শতাধিক গাড়ি ভাংচুর করেন। এসময়  একটি গার্মেন্ট ফ্যাক্টরির গুদামে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে মুহুর্তে থমকে যায় ব্যস্ত মহাসড়ক। শুরু হয় দীর্ঘ যানজট ।

শেষ পর্যন্ত খেদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশ্বাস দেওয়ার পর বিক্ষোভকারী জনতা সন্ধ্যা ৭টার দিকে মহাসড়ক থেকে অবরোধ উঠিয়ে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

ড্যাপের আওতায় গাজীপুরে উপ-শহরসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য জমি অধিগ্রহণে রাজউক প্রস্তাবিত ড্যাপ গেজেট আকারে প্রকাশিত হবার পর এর প্রতিবাদে গাজীপুরবাসী ক’দিন ধরেই আন্দোলন করে আসছেন। শনিবার বিকেলে গাজীপুরে রাজউক প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে সদর উপজেলার ভোগড়া এলাকায় ঢাকা বাইপাস সড়কে প্রতিবাদসভার আয়োজন করা হয়।

বাসন ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রতিরোধ কমিটির সদস্যসচিব মো. সাইফুল ইসলাম সরকার বাবুলের সভাপতিত্বে ওই প্রতিবাদসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও গাজীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হক। বক্তব্য রাখেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক এম এ মান্নান, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্রিগেডিয়ার কাজী মাহমুদ হাসান, জাতীয় পার্র্টির গাজীপুর জেলা কমিটির সভাপতি আব্দুস সাত্তার মিয়া, গাছা ইউপি চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম, শ্রীপুর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন সবুজ, গাজীপুর সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম, বাসদ নেতা কমরেড ওসমান আলী, গাছা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ, অ্যাডভোকেট আব্দুল কাইয়ুম প্রমুখ।

বিকেল ৩টার দিকে গাছা ও বাসন ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাতে লাঠি, ব্যানার, রাজউকের চেয়ারম্যান নূরুল হুদার কুশপুতুলসহ মিছিল নিয়ে দলে দলে মানুষ সভাস্থলে আসতে থাকেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই লক্ষাধিক মানুষে পুরো বাইপাস সড়ক ও আশপাশের এলাকা হয়ে ওঠে জনসমুদ্র।

এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বাইপাস সংলগ্ন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেন এবং শতাধিক গাড়ি ভাংচুর করেন। এতে মহাসড়কে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

জয়দেবপুর থানার সেকেন্ড অফিসার দেলোয়ার হোসেন জানান, বিক্ষোভকারীরা বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে গাজীপুর সদরের বাইপাস সংলগ্ন রোজ সোয়েটার কারখানা বন্ধ করে শ্রমিকদের তাদের আন্দোলনে যোগ দিতে বলেন। আন্দোলনে যোগ না দেওয়ায় তারা কারখানা চত্বরে থাকা কয়েকটি গাড়ি ও কারখানার জানালার কাঁচ ভাংচুর এবং গুদামে অংগ্নিসংযোগ করেন। পরে গাজীপুর দমকলবাহিনীর কর্মীরা গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে তাদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। প্রতিবাদসভা চলার এক পর্যায়ে সভাস্থলে গাজীপুরের পুলিশ সুপারের মাধ্যমে প্রধান অতিথির কাছে ওয়াকিটকিতে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসবার্তা এসে পৌঁছায়। এসপি মাহফুজুল হক নুরুজ্জামানের ওয়াকিটকি থেকে অনুষ্ঠানস্থলে সহকারি পুলিশ সুপার মনোয়ার হোসেনের ওয়াকিটকিতে  প্রধানমন্ত্রীর বার্তাটি আসে। প্রধান অতিথি মাইকে ওয়াকিটকি ধরে তা সবাইকে শোনালে বিক্ষোভকারীরা শান্ত হন এবং আন্দোলন আপাতত স্থগিত করেন।
 
প্রধান অতিথি বলেন, ‘কোনো ক্রমেই গাজীপুরে রাজউককে ভূমি অধিগ্রহণ করতে দেওয়া হবে না। রাজউকের এ ধরণের প্রক্রিয়া অধিগ্রহণ আইনের পরিপন্থি। শুধু সরকারি কাজেই জমি অধিগ্রহণ করা যায়। কিন্তু রাজউক একশ্রেণীর ধনীদের জন্য গাজীপুরে জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ জমি অধিগ্রহণের যারা প্রস্তাবক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’

বাংলাদেশ সময় ২১৪১ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।