ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘শিবির নেতাদের গা-ঢাকা, পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা’

মুরসালিন হক জুনায়েদ/মোরশেদ সরকার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩০ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০১০

ঢাকা: জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার, বিভিন্ন মামলায় নেতা-কর্মীদের পুলিশের তাড়িয়ে বেড়ানো আর সাংগঠনিক কর্মসূচিতে বাধার মুখে ছাত্রশিবির তার কৌশল পাল্টে ফেলেছে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিবিরের ক্যাডার বলে পরিচিত মুখগুলো হঠাৎই দৃশ্যপট থেকে আড়ালে চলে গেছে।

প্রকাশ্যে তাদের দেখা আর মিলছে না। যেসব কর্মী-সমর্থক এখনও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘিরে অবস্থান করছেন-তারাও ভোল পাল্টে ফেলেছেন। বিভিন্ন ক্যাম্পাস ঘুরে অনেকের মুখেই এমন কথা শোনা গেছে।

সাধারণ পর্যায়ের শিবির সমর্থকরা অনেকেই চেহারা ও বেশভুষা বদলে ফেলেছেন। কেউ কেউ কিনসেভড হয়ে গেছেন রাতারাতি।

শিবিরনেতা-কর্মীদের পরিচালিত ‘মেস-হোস্টেলেও’ নেতাগোছের তেমন কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। পরিচিত ক্যাডারদের বেশিরভাগই নিরাপদ দূরত্বে গা ঢাকা দিয়েছেন।

ডিএমপি’র পুলিশ কর্মকর্তারাও এ কথা স্বীকার করেছেন।

শাহবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ রেজাউল করিম বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে জানান, তার থানায় দায়ের করা একটি মামলায় জামায়াত-শিবিরের ৬০ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। গত ৬ দিনে পুলিশের তিনটি পৃথক টিম রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা অভিযান চালিয়েও কোনো শিবিরনেতাকে পাকড়াও করতে পারেনি।

তিনি বলেন, ‘অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি সংক্রান্ত কয়েকটি মামলা হওয়ার পর পরিচিত মুখের শিবিরকর্মীরা গা ঢাকা দিয়েছেন। ’

এদিকে, শিবিরের এই হঠাৎ গা ঢাকা দেওয়াকে আতঙ্কের কারণ বলে মনে করছেন অন্য ছাত্রসংঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা ।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে বড় ধরনের কোনো হামলা বা নাশকতা চালানোর আগে শিবির ক্যাডাররা বরাবরই ক’দিনের জন্য গা ঢাকা দিয়ে থাকে। ’

এবছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফারুক হত্যা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মামুন হত্যা এবং ২০০৮ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি হল দখল করার আগে ক্যাম্পাসে শিবির ক্যাডারদের দেখা যেতো না। এমনই মন্তব্য করেন এইসব ছাত্রনেতা।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক শিশির কর বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পেরেছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিভিন্ন ছাত্র-সংগঠনের সঙ্গে মিশে গিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে। ’

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তা কখনোই হতে দেবে না। ’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি নাসিরউদ্দিন প্রিন্স এবং সাধারণ সম্পাদক একেএম জোবায়েদ হোসেন বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘বাংলাদেশে জামায়াত-শিবির একটি প্রতিক্রিয়াশীল চক্র। এরা সব সময়েই প্রগতিশীল ছাত্র-জনতার উপর হামলা-নির্যাতন চালাতে উম্মুখ। তবে তাদের যে কোনো ধরনের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে ছাত্রফ্রন্ট সজাগ আছে। ’

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, সম্প্রতি শিবিরের জবি শাখা সাধারণ সম্পাদক শাহীন আহমেদ খান, অর্থ সম্পাদক হাসিবুল ইসলাম, সম্পাদক মন্ডলির সদস্য উজ্জ্বলকে আটক করা হয়। এরপর থেকে শিবিরের জবি শাখার কোনো নেতা-কর্মীকে প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না।

কবি নজরুল কলেজ শাখার শিবিরকর্মীদের নেতৃত্বদানকারী আবুল হাসানাত, আমিনুল, মূসা, আইয়ূব আলী, সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিবির সভাপতি মোঃ আজাদ, সহ-সভাপতি বিল্লাল হোসেনসহ নেতাগোছের কাউকেই ওই কলেজের শিক্ষার্থীরা এখন আর দেখতে পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন।

ঢাকা কলেজে শিবিরের অন্যতম নেতা মাসুদ হাসান, মোশারফ করিম এখন গা ঢাকা দিয়েছেন।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিবিরের এক কর্মী জানান, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ছাত্রলীগ কর্মীদের রোষানল থেকে বাচাঁর জন্য এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রশিবির কর্মীরা অন্য প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সঙ্গে মিলেমিশে কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন।

ওই কর্মী আরও জানান, ক্যাম্পাসের বাইরে মেসকেন্দ্রিক কার্যক্রম চলছিল। কিন্তু দলের মূল নেতাদের গ্রেফতার ও ছাত্রশিবিরের অনেক নেতা আটক থাকায় সাধারণ কর্মীরা বেশ বিপাকেই পড়েছেন।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের ছাত্রলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান হিমু জানান, পুরনো ঢাকার নারিন্দা, কলতাবাজার, রোকনপুর, বাংলাবাজার এলাকায় শিবির পরিচালিত প্রায় ২০টির মেস আছে। সেসব মেসে অবস্থান নিয়েই শিবির নেতা-কর্মীরা তাদের কার্যক্রম চালাত। কিন্তু বর্তমানে সেসব মেস প্রায় ফাঁক্ াপড়ে আছে।

এদিকে শিবিরের এক ঘনিষ্ঠ সুত্র দৃঢ়তার সাথে দাবি করেন, শিবির যত বেশি আত্মগোপনে থাকবে বুঝতে হবে তারা তত বেশি সংগঠিত। শিবির ঠিকই তার উদ্দেশ্য সফল করবে। সংগঠনের দেওয়া মোবাইল ফোনই এখন তাদের মূল হাতিয়ার।

নিজ নিজ এলাকায় শিবিরের আত্মগোপনে থাকা নিয়ে শহীদ সোহরাওর্য়াদী কলেজের ছাত্রলীগের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর হোসেন নিতু ও কবি নজরুল কলেজের ছাত্রলীগের নেতা নুরুল আমিন নুরুও উদ্বেগ প্রকাশ করেন।   বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে তারা বলেন, ‘শিবিরকর্মীরা তাদের নেতাদের গ্রেফতারের পর চোরাগুপ্তা হামলা চালাতে পারে Ñ মনে এমন আশঙ্কা সব সময়ই কাজ করে। ’

বাংলাদেশ সময় : ২১০২ ঘন্টা, জুলাই ৩, ২০১০।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।