ঢাকা, শুক্রবার, ২ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৮ জুলাই ২০২৫, ২২ মহররম ১৪৪৭

জাতীয়

ভেঙে ফেলা বাড়িটি সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক ভিটা নয়: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:৪৪, জুলাই ১৭, ২০২৫
ভেঙে ফেলা বাড়িটি সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক ভিটা নয়: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

ঢাকা: ময়মনসিংহে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ও লেখক সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক ভিটা ভেঙে ফেলার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।  

বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ময়মনসিংহে ভেঙে ফেলা বাড়িটি সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক ভিটা নয়।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ সরকার কিছু গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের দিকে নজর দিয়েছে যেখানে দাবি করা হয়েছে যে ময়মনসিংহে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ও লেখক সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক সম্পত্তি মূলত তার দাদা, বিশিষ্ট সাহিত্যিক উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর মালিকানাধীন ছিল, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ভেঙে সেটা ফেলা হচ্ছে। সংরক্ষিত রেকর্ডগুলো বিস্তারিত তদন্তে পুনরায় নিশ্চিত হওয়া গেছে, প্রশ্নবিদ্ধ বাড়িটির সাথে সত্যজিৎ রায়ের পূর্ব-পুরুষদের কোনো সম্পর্ক ছিল না। এটি স্থানীয় জমিদার শশীকান্ত আচার্য চৌধুরী তার কর্মচারীদের জন্য তার বাংলো বাড়ি ‘শশী লজ’র পাশে তৈরি করেছিলেন। জমিদারি ব্যবস্থা বিলুপ্তির পর এটি সরকারের নিয়ন্ত্রণে আসে। সরকার পরবর্তীতে এটি বাংলাদেশ ‘শিশু একাডেমিকে’ বরাদ্দ করে। তখন থেকে বাড়িটি জেলা শিশু একাডেমির অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। জমিটি একটি অকৃষি সরকারি খাস জমি ছিল এবং দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে শিশু একাডেমিকে লিজ দিয়েছিল।

জেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ বাড়ির সাথে সম্পর্কিত জমির রেকর্ড পর্যালোচনা করে নিশ্চিত করেছে যে, অতীতের রেকর্ড অনুসারে জমিটি সরকারের। এতে রায় পরিবারের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। স্থানীয় প্রবীণ নাগরিক এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সম্মানিত ব্যক্তিরাও সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, রায় পরিবারের সাথে শিশু একাডেমিকে লিজ দেওয়া বাড়ি এবং জমির মধ্যে কোনো ঐতিহাসিক সম্পর্ক নেই। বাড়িটিও প্রত্নতাত্ত্বিক স্মৃতিস্তম্ভ হিসেবে তালিকাভুক্ত নয়। তবে বাড়ির সামনের রাস্তা, ‘হরিকিশোর রায় রোড’, সত্যজিৎ রায়ের পিতামহ হরিকিশোর রায়ের নামে নামকরণ করা হয়েছে, যিনি সত্যজিৎ রায়ের দাদা উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর দত্তক ছিলেন। হরিকিশোর রায় রোডে রায় পরিবারের একটি বাড়ি ছিল, যা তারা অনেক আগে বিক্রি করে দিয়েছিলেন, সেটি এখন আর নেই। সেখানে নতুন মালিকের দ্বারা একটি বহুতল ভবন নির্মিত হয়েছিল। এখন যে ভবনটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে তা জরাজীর্ণ, ঝুঁকিপূর্ণ এবং ব্যবহারের অযোগ্য ছিল।

২০১৪ সাল থেকে শিশু একাডেমি ময়মনসিংহ শহরের অন্যত্র একটি ভাড়া বাড়িতে স্থানান্তরিত হয় এবং পরিত্যক্ত বাড়িটি স্থানীয় সমাজবিরোধীদের অবৈধ কার্যকলাপের আস্তানায় পরিণত হয়। তাই ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে এই স্থানে একটি আধা-স্থায়ী ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরবর্তীতে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি জেলা কর্তৃপক্ষকে নিলামের মাধ্যমে পুরাতন জরাজীর্ণ ভবনটি অপসারণের অনুমতি দেয়। নিলাম কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে গত ৭ মার্চ জাতীয় ও স্থানীয় সংবাদপত্রের মাধ্যমে সাধারণ জনগণকে ব্যাপকভাবে অবহিত করা হয়। বুধবার (১৬ জুলাই) বিকেলে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক প্রবীণ নাগরিক, সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অংশগ্রহণে একটি আলোচনা সভা আহ্বান করেন।  

সভায় বিশিষ্ট লেখক কাঙাল শাহীন বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেন যে, কীভাবে জরাজীর্ণ ভবনটি যা বাংলাদেশ শিশু একাডেমির অধীনে ভেঙে ফেলা হচ্ছে। এই বাড়িটি হরি কিশোর রায় বা সত্যজিৎ রায়ের নয়। অধ্যাপক বিমল কান্তি ময়মনসিংহের নাগরিক সমাজের একজন সম্মানিত সদস্যদের রায় পরিবারের মালিকানাধীন বাড়ি সম্পর্কে ভুল ধারণা সম্পর্কে অতিরিক্ত তথ্য বিনিময় করেন। স্থানীয় কবি ও লেখক ফরিদ আহমেদ দুলালও নিশ্চিত করেন যে, বাড়িটির সাথে সত্যজিৎ রায় বা তার পরিবারের কোনো সম্পর্ক নেই। উপস্থিত সবাই সর্বসম্মতভাবে ময়মনসিংহের শিশুদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে শিশু একাডেমির জন্য একটি নতুন ভবন নির্মাণকে সমর্থন করেন এবং বিলম্ব না করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।  

উপস্থিত সবাই দ্ব্যর্থহীনভাবে একমত ছিলেন যে, বাংলাদেশ শিশু একাডেমির পরিত্যক্ত ভবনটির সাথে সত্যজিৎ রায় বা তার পরিবারের কোনো ঐতিহাসিক বা পারিবারিক সম্পর্ক নেই।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহের একজন প্রত্নতত্ত্ব গবেষক স্বপন ধর আরও বলেন যে, প্রশ্নবিদ্ধ বাড়িটি সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক বাড়ি নয়।

সব রেকর্ডের তথ্যগত এবং সূক্ষ্ম পুনর্বিবেচনার ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ সরকার সব মহলকে বিভ্রান্তিকর বা তথ্যগতভাবে ভুল বর্ণনা, যে কোনো আকারে ছড়িয়ে দেওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানায়, যা মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি এবং সম্প্রীতি বিঘ্নিত করে।

এর আগে ময়মনসিংহে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সাহিত্যিক সত্যজিৎ রায়ের পূর্ব-পুরুষদের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল ভারত।  

টিআর/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।