ঢাকা, শুক্রবার, ২ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৮ জুলাই ২০২৫, ২২ মহররম ১৪৪৭

জাতীয়

তুরস্কে জুলাই শহীদ দিবস পালিত

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১:০৯, জুলাই ১৭, ২০২৫
তুরস্কে জুলাই শহীদ দিবস পালিত আঙ্কারার বাংলাদেশ দূতাবাস।

ঢাকা: বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ঘোষিত ‘জুলাই শহীদ দিবস’ ও রাষ্ট্রীয় শোক উপলক্ষে বুধবার (১৬ জুলাই) আঙ্কারার বাংলাদেশ দূতাবাসে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতে অতিথিদের স্বাগত ও আসন গ্রহণ শেষে দূতাবাসের প্রথম সচিব ও দূতালয় প্রধান মো. শফিক উদ্দিন শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।

এরপর ‘জুলাই শহীদ’ স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় এবং জুলাই শহীদ দিবস উপলক্ষে নির্মিত দুইটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়, যেখানে ২০২৪ সালের গণআন্দোলনের পটভূমি ও শহীদদের আত্মত্যাগ তুলে ধরা হয়।
 
অনুষ্ঠানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও আবেগঘন অংশ ছিল তুরস্কে চিকিৎসাধীন জুলাই বিপ্লবের সময় চোখে আঘাতপ্রাপ্ত সাতজন আহত যোদ্ধার উপস্থিতি। তাদের অনুষ্ঠানে দূতাবাসের পক্ষ থেকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।

প্রসঙ্গত, আহত এই ব্যক্তিদের তুরস্ক সরকার, বাংলাদেশ সরকারে সহযোগিতায় ও অত্র মিশনের ব্যবস্থাপনায় আঙ্কারার একটি স্বনামধন্য হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা দিচ্ছে।
 
আহত যোদ্ধাদের মধ্য থেকে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন কোরবান শেখ। তিনি বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লব বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন ইতিহাস রচনা করেছে। এই বিপ্লবে দুই হাজার শহীদ হন এবং ২২ হাজার জন আহত হন। আমরা এ আন্দোলনে দেশের জন্য নিঃস্বার্থভাবে অংশগ্রহণ করেছি।

তিনি আরও বলেন, দূতাবাস যেভাবে আন্তরিকতা ও সহযোগিতার মাধ্যমে তাদের চিকিৎসা নিশ্চিত করেছে, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তিনি আহত ও শহীদদের এই ত্যাগ যেন বৃথা না যায়, সে লক্ষ্যে সজাগ দৃষ্টি রাখতে সবার প্রতি আহ্বান জানান।
 
এরপর বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ দূতাবাসের ডিফেন্স উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ ইফতেকুর রহমান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন ‘বাংলাদেশ ২.০’—একটি নতুন রূপান্তরের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। যেমন আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ ছিলেন, তেমনি আজকের অনুষ্ঠানে আমরা পেয়েছি সাতজন আহত জুলাই যোদ্ধা, যাদের ত্যাগের কারণেই বাংলাদেশ আজ অন্ধকার থেকে আলোর মুখ দেখতে পারছে।  

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকার বর্তমানে বিভিন্ন খাতে সংস্কারের জন্য একাধিক কমিশন গঠন করেছে যাতে প্রশাসন আরও জনবান্ধব হয়। তিনি আশা প্রকাশ করেন, দেশের ইতিহাসে ২০২৪ সালের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর যেন না হয় এবং শহীদদের পরিবার ও আহতদের পুনর্বাসনে সরকার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। তিনি তাদের সুস্থতা ও মঙ্গল কামনায় দোয়া করেন।
 
পরে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ দূতাবাস, আঙ্কারার কাউন্সেলর ও বর্তমানে চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ড. মোহাম্মদ শাহানুর আলম।

তিনি বলেন, আমরা অত্যন্ত ভাগ্যবান যে, আজকের এদিনে আমরা এই জুলাই যোদ্ধাদের পাশে পেয়েছি—আমি গর্বিত, আনন্দিত এবং কৃতজ্ঞ।  

তিনি আরও বলেন, এ দেশে যেন আর কখনো স্বৈরশাসনের জন্ম না হয়। আমাদের দেশের মানুষ কখনোই ফ্যাসিবাদ মেনে নেয়নি-এটাই আমাদের ইতিহাস। আমাদের দায়িত্ব এই আন্দোলনের চেতনাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।  

তিনি জানান, আহত আরও অনেক জুলাই যোদ্ধার উন্নত চিকিৎসার জন্য তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।  

তিনি বলেন, এদিনের তাৎপর্য শুধু ইতিহাসের পাতায় নয়, আমাদের হৃদয়ে ধারণ করা উচিত। তিনি জুলাই বিপ্লবে তুরস্কের প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির সক্রিয় অংশগ্রহণের কথাও বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।
 
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে ‘জুলাই শহীদদের’ আত্মার মাগফিরাত কামনায় ও আহতদের সুস্থতা কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
 
জাতীয় শোক পালনের অংশ হিসেবে দূতাবাস প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয় এবং আলোচনা ও দোয়া মাহফিলের মধ্য দিয়ে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়।

টিআর/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।