ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

শিখা চিরন্তনে গাঁজাকলঙ্ক !

আসাদ জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০১০
শিখা চিরন্তনে গাঁজাকলঙ্ক !

ঢাকা: গাঁজা চত্বরে পরিণত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ও পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণের স্মৃতি বিজড়িত শিখা চিরন্তন সংলগ্ন এলাকা। ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) স্থাপিত এ শিখাকে ঘিরে এখন হরদম চলছে গাঁজার আসর।

এসব আসরে দেখা যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল কলেজের শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী, শিল্পী, নির্মাতা কবি, সাহিত্যিক এমনকি পুলিশসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থা সদস্যদেরও। মাঝে মধ্যে চোখে পড়ে বাউল-সাধুদেরও।

প্রতিদিন কাকডাকা ভোর থেকে শুরু করে গভীর রাত অবধি হাজার হাজার মানুষ কেবল গাঁজার আড্ডা জমাতেই আসছেন এখানে। যারা আসছেন তাদের অনেকেই হয়তো সঙ্গে করেই গাঁজা আনছেন। আর না আনলে এ উদ্যানেই আছেন ভ্রাম্যমান গাঁজা বিক্রেতা। আবার শৌখিন গাঁজাখোররা বিশেষ অর্ডারে গাঁজা আনছেন ঢাকার বাইরে থেকেও।

প্রকাশ্য দিবালোকে তাদের গাঁজার আসর জমছে প্রশাসনের নাকের ডগায়। তার সঙ্গে মাদকাসক্ত তরুণ-তরুণীর আপত্তিকর মেলামেশা যোগ হয়ে পরিস্থিতি নিয়েছে ভয়াবহ রূপ। তাই এখানে এসে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। শিখা চিরন্তন দেখতে এসে নিয়ে যাচ্ছেন অবাধে গাঁজা সেবনদেখার অনাকাঙ্ক্ষিত অভিজ্ঞতা।

বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেলো- শিখা চিরন্তনের উত্তর পাশের প্রাচীর ও এর কোটরের মধ্যে তিন-চার জনের দশ-বারটি গ্রুপ গাঁজার আসর বসিয়েছে।

অদূরে শিশুপার্কের দক্ষিণ প্রাচীরের কোল ঘেঁষে আরও কয়েকটি গ্রুপ চোখে পড়ল। গাছের ছায়ায় রীতিমতো খবরের কাগজের বিছানা তৈরি করেছে তারা। এদের অনেকের গায়ে জামা-কাপড় নেই।

দীর্ঘ ১২ বছর ধরে উদ্যানের  ভেতরে নিয়মিত পান-সিগারেট বিক্রি করছেন নড়াইলের সবুর আলী। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘সকাল থেকেই আড্ডা শুরু হয়। দুপুরে একটু কম থাকলেও বিকেল থেকে এর মাত্রা বাড়তে থাকে। চলে গভীর রাত পর্যন্ত। ’
 
উদ্যানে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্য হাবিবুর রহমান বংলানিউজকে বলেন, ‘এখানে যারা গাঁজা খেতে আসে তাদের বেশির ভাগ-ই ছাত্র। এদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাওয়ার মতো ফোর্স এখানে রাখা হয়নি। ’

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম বাংলানিউজকে বলেন, ‘এখানে যারা আসে তারা শিক্ষিত, মেধাবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, তারকা। আমরা প্রায় সময়ই স্পট থেকে গাঁজাসহ একে ওকে ধরি। কিন্তু তাদের পারিবারিক ও সামাজিক মর্যাদা চিন্তা করে ছেড়ে দিতে হয়। ’

বাংলানিউজের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মাদকাক্তদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের ছাত্রের সংখ্যাই বেশি।   দেখা যায় ছাত্রী এমনকি অনেক শিক্ষককেও।

প্রসঙ্গত, এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসক ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর ১৬ ডিসেম্বর এখানেই মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমপর্ণ করে পাকহানাদার বাহিনী।

ঐতিহাসিক এ স্থানের স্মৃতি সংরক্ষণে ১৯৯৭ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিখা চিরন্তন প্রজ্জ্বলন ও দেশব্যাপী র‌্যালি উদ্বোধন করেন।

১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মস্থান গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া ছুঁয়ে ২৬ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে পৌঁছে শিখা চিরন্তন।

ওই দিন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী বিশ্ব নন্দিত নেতা দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি নেলসন ম্যান্ডেলা, ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাত ও তুরস্কের সোলেইমান দেমিরেলের উপস্থিতিতে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিখা চিরন্তন স্থাপন  করেন।

সম্প্রতি ঐতিহাসিক এ স্থানের মর্যাদা রক্ষায় শহীদ জিয়া শিশু পার্ক অন্যত্র সরানোর গুজব ছড়িয়ে পড়ে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে। বিষয়টি নিয়ে হইচই চলে বেশ কয়েকদিন। অথচ ঐতিহাসিক এ স্থানের পবিত্রতা রক্ষায় সরকারের ভূমিকা নিয়ে যারপরনাই হতাশ সচেতন মহল।

বন্ধুর সঙ্গে উদ্যানে ঘুরতে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ছাত্রী সাদিয়া আফরোজ বাংলানিউজকে বলেন, ‘উন্নত বিশ্বে এ ধরনের ঐতিহাসিক স্থান রাষ্ট্রীয়ভাবেই সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকে। সেখানে ধূমপানসহ আপত্তিকর বিষয় থাকে একেবারেই নিষিদ্ধ। কিন্তু আমাদের এখানে সবই চলে। ’

রমনা পার্কের মতো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকেও ধূমপানমুক্ত এলাকা ঘোষণার দাবি জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ছাত্রী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আআমস আরেফিন সিদ্দিক বাংলানিউজকে বলেন, ‘এই জায়গাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণে নয়, স্থানীয় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে। তবে ঐতিহাসিক এ স্থানের পরিবেশ নিয়ে আমরাও ব্যথিত। আশা করছি সংস্কৃতির এই বলয়টির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে এর পরিবেশ সুন্দর হবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।