দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রশিবিরের কার্যক্রম বন্ধ চায় ছাত্র ইউনিয়নের একাংশ। এছাড়া তারা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের অপসারণ চেয়েছে।
রোববার (১ মে) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরেন সংগঠনটির নেতারা।
যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত এ টি এম আজহারুল ইসলামকে আপিল বিভাগে খালাস দেওয়ার ঘটনায় দেশব্যাপী প্রতিবাদ, ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শিমুল কুম্ভকার, সহ-সভাপতি মনীষা ওয়াহিদসহ নেতাকর্মীদের হুমকির প্রেক্ষাপটে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে জানানো হয়, হামলার ধারাবাহিকতায় ৩০ মে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শিমুল কুম্ভকারের পরিবার, সহসভাপতি মনীষা ওয়াহিদ এবং স্কুল ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক একরামুল হক জিহাদকে হুমকি দেওয়া হয়। এসব হুমকি ও হামলা শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি, যা জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে গড়ে ওঠা বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষাকে বিনষ্ট করছে।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে কয়েকটি দাবি জানানো হয়। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে— যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করা, ২০২৪ সালের আন্দোলনে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নিরপেক্ষতা রক্ষায় চিফ প্রসিকিউটরের অপসারণ, হুমকিদাতাদের গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনা এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রামে হামলাকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা।
এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘নাস্তিক’ বা ‘শাহবাগি’ ট্যাগ দিয়ে চরিত্রহনন এবং বট-মবভিত্তিক আক্রমণের মাধ্যমে ছাত্রদের প্রান্তিকীকরণের চেষ্টার বিরুদ্ধেও কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি এসব বিষয়ে তৎপর হওয়ার আহ্বান জানান বক্তারা।
সংগঠনটির সভাপতি তামজীদ হায়দার চঞ্চল লিখিত বক্তব্যে বলেন, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত জামায়াত নেতা আজহারুল ইসলাম খালাস পাওয়ার পর ঢাকাসহ দেশজুড়ে আন্দোলন গড়ে ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ছাত্রশিবির হামলা চালায়।
তিনি বলেন, ‘শাহবাগবিরোধী ঐক্য’র ব্যানারে জামায়াত–শিবির এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি অংশের নেতা–কর্মীরা এই হামলায় জড়িত। এতে প্রায় ৩০ জন আহত হন।
তামজীদ হায়দার বলেন, ছাত্রশিবির মতভিন্নদের দমনে ট্যাগিং, মব সন্ত্রাস ও পেশিশক্তির আশ্রয় নিচ্ছে। এসব কর্মকাণ্ড গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস তৈরির পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু তাই নয়, এসব আক্রমণ পুরোনো ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থাকেই পুনরুজ্জীবিত করছে। চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে নারী আন্দোলনকর্মীদের ওপরও বর্বরোচিত হামলা চালানো হয়েছে।
সংগঠনের নেতারা বলেন, ছাত্রশিবিরের সহিংসতার ইতিহাস নতুন নয়। ১৯৮৪ সালে চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্র ইউনিয়নের নেতা শাহাদাত হোসেনকে, ১৯৮৮ সালে ছাত্র মৈত্রীর নেতা জামিল আক্তার রতনকে এবং জাসদের নেতা মুক্তিযোদ্ধা জালালকে হত্যা করে তারা। একইভাবে ছাত্র ইউনিয়নের নেতা সঞ্জয় তলাপাত্র ও তপনও নির্মম হত্যার শিকার হন।
সংবাদ সম্মেলনে শিমুল কুম্ভকার, ছাত্র ইউনিয়নের নেতা রথীন্দ্রনাথ বাপ্পিসহ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।
এফএইচ/এমএম