ঢাকা, সোমবার, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০২ জুন ২০২৫, ০৫ জিলহজ ১৪৪৬

জাতীয়

রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য জরুরি তহবিলের আহ্বান ইউনিসেফের

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২:২৩, জুন ১, ২০২৫
রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য জরুরি তহবিলের আহ্বান ইউনিসেফের

ঢাকা: দিন দিন বাড়তে থাকা তহবিল সংকটের কারণে প্রায় দুই লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিশুর শিক্ষা এখন হুমকির মুখে। অবিলম্বে টেকসই অর্থনৈতিক সহযোগিতা ছাড়া শরণার্থীদের সব ধরনের সহায়তা ঝুঁকিতে পড়ছে, যার মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই শরণার্থী শিবিরে শিশুদের জন্য জরুরি মৌলিক শিক্ষার সুযোগ হারানোর আশঙ্কাও রয়েছে।

ইউনিসেফ এ বিষয়ে সতর্ক করেছে।

শনিবার (৩১ মে) এক বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি জানায়, সাম্প্রতিক মাসগুলোয় রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় ইউনিসেফ পরিচালিত কার্যক্রমের জন্য মানবিক সহায়তার তহবিল উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এর প্রভাব পড়েছে শরণার্থী শিবিরের ইউনিসেফের সহায়তাপুষ্ট শিক্ষা কেন্দ্রগুলোয় ভর্তি হওয়া স্কুলগামী শিশুদের ৮৩ শতাংশের ওপর। নতুন তহবিল গঠন এবং নতুনভাবে কার্যক্রম সাজানোর নিরলস প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তহবিল সংকটের কারণে ইউনিসেফকে কিছু কষ্টসাধ্য সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। এর মধ্যে কিন্ডারগার্টেন থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাজ করা হোস্ট কমিউনিটির স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষকদের সহায়তা স্থগিত করার মতো বিষয় রয়েছে। ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এক হাজার ১৭৯ জন স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষকের ইউনিসেফের অংশীদারদের সঙ্গে চুক্তি শেষ হবে। এই স্বেচ্ছাসেবকেরা মূলত স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সদস্য।

বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স বলেছেন, “যে শিশুদের কথা আমরা বলছি, তারা বিশ্বের সবচেয়ে অসহায় শিশুদের অন্যতম। জরুরি শিক্ষা সেবা অব্যাহত রাখতে আমরা সম্ভাব্য সবকিছু করছি। ইউনিসেফ কিছু নতুন তহবিলও আকর্ষণ করতে পেরেছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এই অর্থ পেতে বিলম্ব হচ্ছে, ফলে ইউনিসেফ শিক্ষা কেন্দ্রগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছে। জরুরি তহবিল ছাড়া এই শিক্ষা কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকতে পারে এবং তাতে রোহিঙ্গা শিশুদের পুরো একটি প্রজন্ম পেছনে পড়ে থাকার ঝুঁকিতে পড়বে। ”

তহবিল ঘাটতির কারণে শিক্ষা কেন্দ্রগুলো অন্তত ২০২৫ সালের জুনের শেষ নাগাদ বন্ধ থাকবে। এই বন্ধ হবে ঈদের অতিরিক্ত ছুটির সঙ্গে একত্রিত হয়ে। এরপর শিক্ষা কেন্দ্রগুলো খোলার বিষয়টি পুরোপুরি নির্ভর করবে নতুন তহবিল পাওয়ার ওপর। পরবর্তী শিক্ষাবর্ষে খুদে শিক্ষার্থীদের (কিন্ডারগার্টেন থেকে গ্রেড ২) আর ইংরেজি, বিজ্ঞান বা সামাজিক শিক্ষা শেখানো হবে না। শুধু মৌলিক বিষয়গুলো— সাক্ষরতা (রোহিঙ্গা ভাষা), বার্মিজ, গণিত, জীবন দক্ষতা ও সামাজিক-মানসিক শিক্ষার ওপর অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য নতুন কোনো পাঠ্যপুস্তক বা শিক্ষক নির্দেশিকা কেনা হবে না। শিশুদের বিগত বছরগুলোর বইপত্র সংগ্রহ করে ব্যবহার করতে বলা হবে, বইগুলোর অবস্থা যেমনই হোক না কেন। বছরশেষের মূল্যায়ন এবং প্লেসমেন্ট পরীক্ষা (কোন শিশু কোন শ্রেণিতে পড়ার উপযুক্ত তা নির্ধারণের পরীক্ষা) বাতিল করা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষকরা ছুটির সময়ে পারিশ্রমিক পাবেন না এবং অর্থায়ন ফিরে না আসা পর্যন্ত শুধুমাত্র স্বেচ্ছাশ্রমে পড়ানো চালিয়ে যেতে পারবেন।

শিশুদের জন্য সেবা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ইউনিসেফ সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলতে পারে এবং অর্থনৈতিকভাবে সাশ্রয়ী এমন কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিগুলো সচল রাখতে ইউনিসেফ নিজের কর্মী সংখ্যা কমিয়েছে। এটি দেশে কর্মী হ্রাসের বড় ঘটনাগুলোর একটি এবং এমন ঘটনা বিশ্বজুড়েই ঘটছে। ইউনিসেফ অগ্রাধিকার দিয়েছে শিক্ষা কেন্দ্রগুলো খোলা রাখার ওপর। সেজন্য লোকবল কমিয়ে একটি ছোট দল রেখে সেগুলো পরিচালনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তগুলো অত্যন্ত কঠিন, কিন্তু হাতে পাওয়া তহবিল যেন সবচেয়ে কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হয়, তা নিশ্চিত করতেই এ সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়েছে।

শিক্ষা কোনো বিলাসিতা নয়, এটি একটি মৌলিক অধিকার। মানবিক সংকটের সময় শিক্ষা শিশুদের নিয়ম-শৃঙ্খলা শেখায়, সুরক্ষা দেয় এবং আশার আলো দেখায়। বাস্তুচ্যুত হয়ে শরণার্থী শিবিরে থাকা রোহিঙ্গা শিশুদের জন্যও শিক্ষা মর্যাদা, অভিঘাত সহিষ্ণুতা ও ভবিষ্যতের সুযোগগুলো লাভের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে। শিক্ষা শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি— যেমন সংঘাতপূর্ণ/সশস্ত্র কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়া, অপহরণ, বিপজ্জনক অভিবাসন ও সহিংসতা থেকে রক্ষা করে। রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় পাশে দাঁড়ানো দাতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে ইউনিসেফ। একইসঙ্গে, এখন আবারও এগিয়ে আসার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। নতুন ও বর্ধিত বিনিয়োগ ছাড়া ইউনিসেফ কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিশুদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মানসম্মত শিক্ষা সেবা অব্যাহত রাখতে পারবে না।

টিআর/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।