ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২৯ মে ২০২৫, ০১ জিলহজ ১৪৪৬

জাতীয়

অধ্যাদেশ প্রত্যাহার না হলে সচিবালয় অচল করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২:৪৮, মে ২৬, ২০২৫
অধ্যাদেশ প্রত্যাহার না হলে সচিবালয় অচল করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের কর্মসূচি

ঢাকা: ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ আজকের মধ্যে প্রত্যাহার না করা হলে সচিবালয় অচল করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের নেতারা। পাশাপাশি আগামীকাল (মঙ্গলবার) থেকে তিন দিনের ছুটিতে থাকার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।

সোমবার (২৬ মে) সচিবালয়ে এই অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভে তারা এ হুঁশিয়ারি দেন। এ সময় বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়।

সকালে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি মো. বাদিউল কবীর ও মহাসচিব নিজাম উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়। পরে এতে যোগ দেন পরিষদের অন্য অংশের নেতা মো. নূরুল ইসলাম এবং মুজাহিদুল ইসলাম।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্লোগান দিতে থাকেন— ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘অবৈধ কালো আইন, বাতিল কর করতে হবে’, ‘মানি না মানবো না, অবৈধ কালো আইন’, ‘এক হও লড়াই কর, ১৮ লাখ কর্মচারী’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা কাজ ফেলে বিক্ষোভে অংশ নেন। অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়তে থাকে সময়ের সঙ্গে।

এ সময় বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের পক্ষে সভাপতি মো. নূরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, জনপ্রশাসন সচিবের কাছে আর কিছু চাওয়ার নেই। অনেক অনুরোধ করেছি, কিন্তু তিনি প্রতারণা করেছেন, মিথ্যা বলেছেন। এটা সচিবালয়ে কেউ মেনে নেবে না। আমরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবো। কেউ ঘরে বসে থাকবেন না। সচিবদের হুমকিতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমাদের কর্মসূচি চলছে এবং চলবে।

তিনি আরও বলেন, আজকের মধ্যে যদি অধ্যাদেশ প্রত্যাহার না হয়, তাহলে আমরা এমন কঠোর কর্মসূচি দেবো যাতে কেউ সচিবালয়ে ঢুকতে না পারে। আমাদের সমর্থনে সমন্বয় পরিষদ, শিক্ষাভবন, সমবায় ভবনসহ দেশের ৬৪টি জেলায় নিজ নিজ অফিসে কর্মসূচি পালন করছে। যারা এখনও অংশ নেননি, তাদেরও অংশ নিতে অনুরোধ জানাই।

নূরুল ইসলাম বলেন, এই কালো আইন শুধু সচিবালয়ের জন্য নয়, এটি সারা দেশের ১৮ লাখ সরকারি কর্মচারীর জন্য করা হয়েছে। আমরা এই আইন বাতিল চাই। সারা দেশে আন্দোলন গড়ে তুলুন। আমরা বিশ্বাস করি, জয় আমাদের হবেই।

সংযুক্ত পরিষদের মহাসচিব মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা যেসব উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছি তারা আমাদের ব্ল্যাকমেইল করেছেন। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই। যদি আজ বিকাল ৪টার মধ্যে গেজেট প্রত্যাহার না হয়, তাহলে কাল থেকে সবাই তিন দিনের সিএল ছুটি নিয়ে বাসায় থাকবেন। পরবর্তী কর্মসূচির জন্য প্রস্তুত থাকবেন।

তিনি বলেন, যদি কোনো কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়, আমরা এক বিন্দু রক্ত থাকতে পিছু হটবো না। মাঠে যখন নেমেছি, মরতেও শিখেছি, জেল-জুলুম খেটেছি—তবুও থামবো না।

তিনি আরও বলেন, এই কালো আইন বাস্তবায়নের জন্য পাঁচজন সচিবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তাদের অন্যতম জনপ্রশাসন সচিব মোখলেছুর রহমান। তিনি নিজের চেয়ার রক্ষার জন্য এই আইন এনেছেন। জনপ্রশাসন সচিব মোখলেছুর রহমান সাহেব, আপনি থাকুন, আমরা আসছি। আপনার সঙ্গে আমাদের হিসেব-নিকেশ বাকি আছে।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের সরকারি চাকরি আইন সংশোধনে প্রণীত অধ্যাদেশের খসড়া নিয়ে ক্ষুব্ধ সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কারণ এতে বলা হয়েছে-শৃঙ্খলা ভঙ্গ, কর্তব্য পালনে গাফিলতি, অনুপস্থিতি কিংবা উসকানির অভিযোগে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই চাকরিচ্যুতির বিধান রাখা হয়েছে।

গত ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য চারজন উপদেষ্টাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

জিসিজি /এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।