ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার জন্যই শপথ পড়িয়েছি’- প্রধান বিচারপতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০১০

ঢাকা: প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক বলেছেন, ‘সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার জন্যই আমি আজ নতুন ৪ বিচারপতিকে শপথবাক্য পাঠ করিয়েছি। ’

তিনি বলেন, ‘এ জন্য গত একমাস আমি বিভিন্ন জনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছি।

তারা আমাকে বলেছেন, নতুন বিচারপতিদের শপথ পড়ালে আমার জনপ্রিয়তা কমবে। তা সত্ত্বেও আমি সংবিধান অনুযায়ী শপথ পড়াতে বাধ্য ছিলাম। তাই, আমি পড়িয়েছি। ’

সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে বৃহস্পতিবার সকালে নতুন বিচারপতিদের শপথবাক্য পাঠ শেষে প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘আমি যদি আজ শপথ না-পড়াতাম, তাহলে এটি একটি খারাপ উদাহরণ হিসেবে থেকে যেত। পরবর্তীতে এটিকে দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখিয়ে অন্য বিচারপতিদের শপথ হয়ত পড়ানো হতো না। ’

তিনি বিএনপি ও জামায়াতপন্থি আইনজীবীদের তাদের ভাষায় ‘বিতর্কিত’ বিচারপতিদের শপথ না পড়ানোর দাবিতে বিক্ষোভ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে যে প্রতিবাদ করা হয়েছে, তা অনভিপ্রেত। ’ তিনি এ সময় সবাইকে আইন মেনে চলারও আহ্বান জানান।
প্রধান বিচারপতি বিএনপি-জামায়াতপন্থি আইনজীবীদের বিক্ষোভের মুখে তার খাসকামরা থেকে পুলিশ পাহারায় শপথবাক্য পড়াতে জাজেস লাউঞ্জে যান।

এদিকে, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এএম আমিনুদ্দিন শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ার জন্য প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে ধন্যবাদ জানান। তিনি বিএনপি ও জামায়াতপন্থি আইনজীবীদের প্রতিবাদ বিক্ষোভের সমালোচনা করে বলেন, ‘নিছক  রাজনৈতিক কারণে এবং সংবিধান লঙ্ঘনে প্রধান বিচারপতিকে চাপ প্রয়োগ করতেই এ বিক্ষোভ -প্রতিবাদ করা হয়েছে। ` তিনি বলেন, ‘এটি সত্যিই দুঃখজনক!’


তবে এ বিষয়ে বিরোধী পক্ষের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এর আগে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী গত ১১ এপ্রিল ১৭ জনকে বিচারপতি নিয়োগ দিয়েছিলেন। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম ১৮ এপ্রিল ১৫ বিচারপতিকে শপথবাক্য পাঠ করান। এর মধ্য থেকে দুই বিচারপতি মোহাম্মদ খসরুজ্জামান এবং রুহুল কুদ্দুস বাবু ‘বিতর্কিত’ হওয়ায় শপথবাক্য পাঠ করাননি সাবেক প্রধান বিচারপতি।

মো. রুহুল কুদ্দুস রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার সময় শিবিরকর্মী হত্যা মামলার আসামি ছিলেন এবং মো. খসরুজ্জামান আদালত অঙ্গন ভাঙচুর করছেন এমন ছবি পত্রিকায় ছাপা হয়।

১৭ জন বিচারপতি নিয়োগের পর থেকে অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস এবং মো. খসরুজ্জামানকে ‘বিতর্কিত’ দাবি করে তাদের নিয়োগের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির একাংশ। সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন নবনিযুক্ত দু’জনকে শপথ না পড়াতে একাধিকবার সংবাদ সম্মেলন করে প্রধান বিচারপতির প্রতি অনুরোধ জানান।

যদিও সমিতির সরকারপন্থি আইনজীবীরা এটাকে সভাপতির ব্যক্তিগত দাবি বলে অভিহিত করেন। তাদের মতে, সমিতির সভাপতি দলীয় সংবাদপত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে অসত্য, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য দিচ্ছেন।

বর্তমান প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক এ বিষয়ে সবার সঙ্গে পরামর্শ করেন। বিচারপতিদের শপথবাক্য পাঠ করানোর বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে পরামর্শ করেন। একই সঙ্গে অতীতে যে সমস্ত বিচারপতির নিয়োগ ও শপথ হয়েছে, সে বিষয়টিও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করেন।

এরপর তিনি আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. খন্দকার মাহবুব হোসেন এবং সম্পাদক ব্যারিস্টার এম বদরুদ্দোজার সঙ্গে আলোচনা করেন।

কিন্তু সমিতির পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের জানানো হয়, তারো কোনোভাবেই এই দুই বিচারপতির শপথ মেনে নেবেন না। বারের পক্ষ থেকে হুমকি দেওয়া হয়, তাদের শপথ পড়ানো হলে সুপ্রিমকোর্ট চত্বর উত্তপ্ত হবে। আর তার দায় সমিতি নেবে না। দেশের আদালত চত্বরে কালো পতাকা ওড়নো হবে।

বাংলাশে সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।