ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সবার সঙ্গে আলোচনা করেই ড্যাপ বাস্তবায়ন করা হবে: প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০১০
সবার সঙ্গে আলোচনা করেই ড্যাপ বাস্তবায়ন করা হবে: প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে আলোচনা করেই সরকার ড্যাপ বাস্তবায়ন করবে। বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে রিহ্যাব ভিশন ২০১০ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।



রাজধানীর আশেপাশের এলাকাগুলোতে উন্নয়নের এ দায়িত্ব আবাসন শিল্পে নিয়োজিত উদ্যোক্তাদের দিয়েও সম্পন্ন করা হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

আবাসন ব্যবসায় নিয়োজিতদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিছু জমি আপনাদের দেওয়া হবে। আপনারা উন্নয়ন করবেন। ’

সহজলভ্য আবাসন কীভাবে সাধারণ মানুষকে দেওয়া যায় সেটা নিয়ে কাজ করতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

রিহ্যাব সভাপতি নসরুল হামিদ বিপু’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন পূর্ত ও গৃহায়ন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান, সচিব এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, এফবিসিআইসি সভাপতি এ কে আজাদ ও রিহ্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট সুলতানা শাহেদা ইসলাম।

বাংলাদেশ ল্যান্ড ডেভেলপারস অ্যাসোসিয়েশন (বিএলডিএ)’র সভাপতি ও বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান এবং শীর্ষ স্থানীয় ব্যবসায়ী নেতারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আবাসন মানুষের অন্যতম মৌলিক চাহিদা । ঘর মানুষের নিজের হলে কাজ শেষে বাড়ি ফিরে মানুষ আনন্দ পায়। ’

নদীভাঙন, সামাজিক কিছু অবিচার মানুষকে গৃহছাড়া করে বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জীবনমানের উন্নতি করতে প্রথমেই দরকার আবাসন। ’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ভৌগোলিকভাবে খুবই ছোট। কিন্তু জনসংখ্যায় অনেক বড়। এজন্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমাদের প্রচুর কৃষিজমি দরকার কিন্তু তা-ও সীমিত। অল্প জমিতে বেশি ফলনের জন্য গবেষণা চলছে। কিন্তু আবাসন করতে হলে কৃষিজমি নষ্ট করতেই হবে। তাই খেয়াল রাখতে হবে আবাসনের কারণে অধিক ফলনশীল জমি যেন নষ্ট না হয়। ’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ বন্যাপ্রবণ দেশ। এজন্য জলাশয়গুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। বৃষ্টির পানি যেন সঠিকভাবে নিষ্কাশিত হয় এবং বৃষ্টির সময় সর্বোচ্চ পানি ধারণ ক্ষমতা যেন ঠিক থাকে এজন্য জলাশয় রক্ষা করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘ছোট ছোট বাড়ির পরিবর্তে আমাদের এখন বহুতল ভবনের দিকে যেতে হবে। ’

ঢাকার যানজটের পেছনে অপরিকল্পিত নগরায়নকে দায়ী করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ তো গাড়ি ব্যবহার করবেই। আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে হবে। মূল্যবান গ্যাস, রাস্তা, পানির অবস্থা দেখে ব্যবস্থা নিতে হবে। যেখানে একটা পরিবার থাকতো, সেখানে হঠাৎ ৩০/৩৫টি পরিবার হলে সমস্যা হতেই পারে। তাই ভেবেচিন্তে সেবাখাতে প্রকল্পভিত্তিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকায় যেসব ফ্ল্যাটবাড়ি  দেখি, সেখানে প্রাইভেসি থাকে না। এক ইঞ্চি জায়গা ছাড়া হয় না। এক ফ্ল্যাটের কথা অন্য ফ্ল্যাটে শোনা যায়। এমনভাবে নির্মাণ হয়েছে যে, ঘরে সব সময় এসি ও বাতি জ্বালিয়ে রাখতে হয়। অথচ বিদ্যুৎ বাড়েনি। ’

’৯৬-এর প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রকল্পটির বাস্তবায়ন সম্ভব হলে বিদ্যুৎ সমস্যা থাকতো না। অন্যের সৃষ্ট ব্যর্থতার বোঝা আমাদের কাঁধে পড়েছে। তবু আমরা সমাধানের চেষ্টা করছি। ’

২০০১-এর প্রকল্পগুলো চলমান থাকলে দেশে এতো সমস্যা থাকতো না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে আমরা নতুন করে যাত্রা শুরু করেছি। আশা করি, উত্তরণ ঘটাতে পারবো। ’

ভবিষ্যতে নকশা পরিকল্পনায় প্রাকৃতিক পরিবেশ বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রকল্পে বাচ্চাদের খেলার জায়গা রাখা প্রয়োজন। বাচ্চারা যাতে ঘরে আবদ্ধ থেকে বেড়ে না ওঠে সেদিকে নজর রাখবেন। ’

খেলোয়াড়, সংস্কৃতিসেবী, সাহিত্যিক ও অন্যান্য পেশার মানুষের জন্য উদ্যোগ নিতেও আবাসন ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে বর্ধিত কর কমানোর ব্যাপারে  অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি বিবেচনায় আছে। ’

ফুটপাতবাসী ও নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আশ্রয়ন প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক বছরে সেখানে ৫০ হাজার মানুষকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। আরও ৫০ হাজার পরিবারকে এক হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে পুনর্বাসন করার পরিকল্পনা রয়েছে। ’

মাল্টিপারপাস সাইক্লোন সেন্টার তৈরি করা হচ্ছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের প্রবণতা হয়েছে, সবাইকে বুঝি ঢাকায়ই থাকতে হবে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে উন্নতমানের আবাসনের ব্যবস্থা করতে  হবে। গ্রামে বিক্ষিপ্তভাবে বাড়িঘর গড়ে োঠে। সেখানে সব সুবিধা পাওয়া যায় না। তাই পল্লীনিবাস করে সব সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ’

তিনি বলেন, ‘উপজেলা পর্যায়ে আঞ্চলিক শহর তৈরি করা হবে। মানুষ যাতে ঢাকামুখি না হয়ে নিজ এলাকায় সব সুবিধা পায়, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তরাও যাতে এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হয় সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে। ’

প্রধানমন্ত্রী জানান, মানুষের গৃহায়ন সমস্যা সমাধানের জন্য গৃহায়ন তহবিল গঠন করা হচ্ছে। যেখানে ১ শতাংশ সার্ভিস চার্জ দিয়ে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ সুদে যে কেউ বাড়ি তোলার জন্য ঋণ নিতে পারবেন। গতবছর এ প্রকল্পের মাধ্যমে ২৮ হাজার পরিবার উপকৃত হয়েছে। এবছর আবারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

উন্নয়ন কাজে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের জন্য যত কাজ করা দরকার সরকারের একার পক্ষে তা করা সম্ভব নয়। এ জন্য বেসরকারি খাতকেও এগিয়ে আসতে হবে। আমরাই সবচে বেশি অগ্রাধিকার দিয়েছি বেসরকারি খাতকে। ’

প্রধানমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘দেশে যেহেতু জমির স্বল্পতার  সমস্যা সেহেতু এমন কিছু করবেন না, যাতে মানুষকে চোখের পানি ফেলতে হয়। ’

তিনি বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশে জলাশয় না থাকলে দুর্যোগ আরও বাড়বে। ভূমিকম্প এলাকায় যেভাবে বাড়ি করলে সমস্যা হবে, সেভাবে করবেন না। যেখানেই প্রকল্প নেবেন সেখানেই এ বিষয়টির দিকে লক্ষ রাখবেন। এটি প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবেও কাজ করবে। ’

ঘরে ফেরা কর্মসূচি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা গ্রামে ফিরে যেতে চায় তাদের ঋণ দেবো। ঘর তুলে দেওয়া হবে। ’

ঢাকার চারদিকে চারটি স্যাটেলাইট শহর হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এগুলো ঢাকার চেয়ে কিছু দূরে করবো। তবে সব হবে উন্নতমানের। ’

আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোর দৃষ্টিআকর্ষণী বিজ্ঞাপনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিজ্ঞাপনগুলোতে যেসব স্লোগান দিচ্ছেন সেগুলো আপনারা মেনে চলুন। ’

গত একনেকে গুলশান-বারিধারা লেক উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওইসব এলাকার মানুষেরও উচিত একাজে সহায়তা করা। কারণ লেক দূষণের জন্য তারাও দায়ী। ’

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিটি সুউচ্চ ভবনে অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা থাকতে হবে। সাম্প্রতিক কয়েকটি দুর্ঘটনার এ সুবিধা না থাকায়  উদ্ধারকাজে সমস্যা হয়েছে। আপনারা এ বিষয়টি খেয়াল রাখবেন। সৌরবিদ্যুৎ ও বৃষ্টির পানির ব্যবহার বাড়াতে হবে। এটা আল্লাহর দান। ’

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‌‌‘পদ্মা সেতু চালু হলে রাজধানী মাওয়া ঘাট পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবে। ’

মানুষ সন্তানের পর জমিকে বেশি ভালোবাসে উলল্লখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারি জমি আপনাদের দেবো। আপনারা পরিকল্পনামতো এর উন্নয়ন করবেন। সরকারের সহযোগিতার সঙ্গে আপনারা আপনাদের মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করবেন। ’

রিহ্যাব সভাপতি নসরুল হামিদ বিপু বলেন, ‘বছরে ৭/৮ হাজার ফ্ল্যাট ও ৬০/৭০ হাজার প্লট আমরা নির্মাণ করছি।   প্রধানমন্ত্রী আমাদের উপর আস্থা রাখুন। দেশ গঠনে আমরা আপনার সৈনিক। ’

তিনি বলেন, ‘৫০ বছরের কথা মাথায় রেখে ড্যাপ বাস্তবায়ন, মধ্য ও নিম্নবিত্তদের অল্প সুদে ঋণ দিতে হবে, নিয়ন্ত্রণ সংস্থা দরকার, পিপিপি’র ভিত্তিতে জমি বরাদ্দ, ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশনের ট্যাক্স কমাতে হবে। ’

বিশ্বমানের কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্যোগের কথা জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, ‘এজন্য সরকারি মূল্যে সরকারের কাছে জমি চাই। রিহ্যাব সরকারের সঙ্গে কাজ করতে চায়। ’

এসময় রিহ্যাবের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের জন্য এক কোটি টাকার চেক এবং পুলিশের জন্য দু’টি মাইক্রোবাসের চাবি তুলে দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ সময় ১৩৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।