ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

এ সপ্তাহে রাজধানীতে পুলিশের হাতে ৩ মৃত্যু

মহিবুব জামান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৪১ ঘণ্টা, জুলাই ২, ২০১০

ঢাকা: রাজধানীতে পুলিশী নির্যাতনে এ সপ্তাহে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। ছিনতাইকালে পুলিশ কনস্টেবল আটক ও নিরীহ লোককে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে দুই উপ-পরিদর্শক (এসআই) এর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে।


 
সোমবার (২৮ জুন) রাত ১১টার দিকে নয়াটোলা থেকে আটকের কয়েক মিনিটের মাথায় মারা যান বাবুল নামে এক সিএনজি চালক। বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) গুলশানে পুলিশের গুলিতে মারা যান মিজানুর রহমান মিজান (৩০) নামে এক ব্যাবসায়ী। সর্বশেষ শুক্রবার মজিবুর রহমান (৪৫) নামে গাবতলী বাস স্ট্যান্ডের এক টিকেট বিক্রেতা মারা যান। বৃহস্পতিবার বিকেলে মেলারটেক এলাকা থেকে তাকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। শুক্রবার সকালে অচেতন অবস্থায় মেলারটেক নয়াবাজার এলাকায় এক নৌকা থেকে তার পরিবার তাকে উদ্ধার করে। বাসার নেয়ার পর তিনি মারা যান। প্রতিটি ঘটনাতেই পুলিশের দাবি করা ঘুষ দিতে ব্যর্থ হওয়ায় নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগ তুলেছে নিহতদের পরিবার।

এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে মতিঝিলে এক ব্যাবসায়ীর কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা ছিনতাইকালে পুলিশ কনস্টেবল সোহেল ওরফে নোমান (৩০) আটক হন। একই দিন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে কদমতলী থানার দুই উপ-পরিদর্শক (এসআই) আজম খান ফারুকী ও হেলাল এর  বিরুদ্ধে মামলা হয় নিরীহ লোকের ক্ষতিসাধন ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে।

পুলিশ কমিশনার একেএম শহীদুল হক বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, এ ধরনের ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রকৃত ঘটনা তদন্তে রমনা ও গুলশান অঞ্চলে দুই উপ-কমিশনারকে প্রধান করে পৃথক দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়াও ওই দুই ঘটনা তদন্তে সদর দপ্তরের একজন সহকারী কমিশনারকে প্রধান করে আর একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে। আর নিহত মজিবুরের বাসা থেকে ঘুরে এসেছেন উধ্বর্তন পুলিশ কমকর্তা।

গুলশানে ব্যাবসায়ী মিজান মারা যাওয়ার ঘটনায় পুলিশের দাবি, মজিবুর অনেকদিন ধরেই কয়েকজন সহযোগীসহ সিলভার রঙ এর গাড়িতে (ঢাকা মেট্রো গ ২১-৩৮০৫) ছিনতাই করছিলেন। বৃহস্পতিবার পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে তিনি আহত হন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ শুক্রবার সকালে তিনি মারা যান।

গুলশান থানার ডিউটি অফিসার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. জাহাঙ্গীর বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, বুধবার দিবাগত রাত সোয়া একটায় গুলশান ২ এর ৪২ নম্বর রোডে কয়েকজন যুবক ছিনতাইয়ের চেষ্টা চালায়। এসময় পুলিশ তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করলে তারা গুলি ছোঁড়ে। জবাবে পুলিশ পাল্টা গুলি চালালে দুই ছিনতাইকারী মিজান ও মানিক গুলিবিদ্ধ হন।

এসময় তাঁদের দুই সহযোগী আসলাম ও জালালকে অত অবস্থায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করে চারটি গুলিসহ একটি নাইন এমএম পিস্তল। আটক করা হয় তাদের বহনকারী  প্রাইভেট কার (ঢাকা মেট্রো গ ২১-৩৮০৫)।

অন্যদিকে মিজানের স্ত্রী তাসলিমা বেগম অভিযোগ করেন, তার স্বামীকে বারিধারার নয়ানগর থেকে গাড়ি চুরির অভিযোগে মঙ্গলবার রাতে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। এরপর দারোগা আনিস এক লাখ টাকা দাবি করেন। কিন্তু ঘুষের টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে তাকে গুলি করে পুলিশ। আহত অবস্থায় বৃহস্পতিবার সকালে ঢামেক হাসপাতালে তিনি (মিজান) মারা যান। নয়ানগরে লিজা সাউন্ডটেক সিস্টেম নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে মিজানের।

পুলিশের গুলিতে আহত মানিক জানান, পুলিশের সঙ্গে তাঁদের কোনো বন্দুকযুদ্ধ হয়নি। মঙ্গলবার ভোরে পুলিশ তাদের চারজনকে গ্রেফতার করে গুলশান থানায় নিয়ে যায়। এরপর মারধর করে তাদের কাছ থেকে ছিনতাইকারী স্বীকারোক্তি আদায় করে নেয়। বুধবার মধ্যরাতে তাঁকে ও মিজানকে চোখে কাপড় বেঁধে থানা থেকে বের করে পায়ে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে। গুলির শব্দে লোকজন চলে এলে আমাদেরকে ছিনতাইকারি বলে দাবি করে পুলিশ। কিন্তু আমাদের বিরুদ্ধে কোন থানায় কোন মামলা বা জিডি নেই।

২৮শে জুন রাত এগারোটায় পুলিশ হেফাজতে মারা যান সিএনজি চালক বাবুল কাজী (৪০)। পুলিশের দাবি, সিএনজি ছিনতাই এর অভিযোগে তারা বাবুল কাজীকে রাজধানীর নয়াটোলা মধুবাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করেন। থানায় নেয়ার পথে তিনি গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে পালাতে গিয়ে মাথায় আঘাত পান। ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

কিন্তু নিহত বাবুলের স্ত্রী শোভা বেগমের অভিযোগ, তার স্বামী গাজীপুরের রেজিস্ট্রেশন করা সিএনজি ঢাকায় চালাত বলে রমনা থানার এসআই আলতাফ দুই লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। তার স্বামী ওই এসআইকে ৭০ হাজার টাকাও দেন। ঘটনার দিন বিকেল পাঁচটায় তিনি (বাবুল) ঘুষের আরো ২০ হাজার টাকা নিয়ে নয়াটোলার বাসা থেকে বের হন এসআই আলতাফকে দেওয়ার জন্য। পরে ঢামেক হাসপাতাল থেকে তার মৃত্যুর খবর আসে।

শোভা বেগম তার স্বামী বাবুল, দুই ছেলে সাকিল (১২) ও সাইফ (৮) এবং এক মেয়ে বাবলি (২) কে নিয়ে থাকেন মগবাজার নয়াটোলার চেয়ারম্যান গলির শেষ মাথার ৩২৭/এ নাম্বার বাসায়। ওই বাড়ির মালিক আয়েশা বেগম বলেন, চৌদ্দ বছর ধরে তিনি (বাবুল) এই এলাকার বাসিন্দা। আমার বাসায় আছে বারো বছর। ভালো লোক না হলে এক জায়গায় এত দিন কেউ থাকতে পারে না।

বাংলাদেশ সময় ১০২৬ ঘণ্টা, ৩ জুলাই ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।